১৪ দিনের ঘোষিত লক ডাউন বাস্তবায়নে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও আইন শৃংখলাবাহিনী কঠোর ভুমিকা পালন করলেও সড়কে ইজি বাইক বন্ধে তেমন কোনো ভুমিকা রাখতে পারছেনা। শহর ও শহরতলীতে ইজিবাইকে চলাচলের ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না।
একজন অন্যজনের গা ঘেঁষে বসা, মাস্ক ব্যবহার না করার পুরনো চিত্র দেখা গেছে এই গণপরিবহটিতে। সোমবার শহরের চাষাড়া, খানপুর হাসপাতাল মোড়, ফতুল্লার পঞ্চবটি, পাগলা, সিদ্ধিরগঞ্জ, আমদজী ইপিজেড গেইট, শিমরাইল মোড়, জালকুড়ি, চৌধুরীবাড়ি, পাঠানটুলী, আইটস্কুল মোড, শিবুর্মাকেটসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এছাড়া এতদিন লকডাউন চললেও তার মধ্যেই চলাচল করেছে ইজিবাইক। সামাজিক দূরত্ব না মেনে চালকের আসনের দুই পাশে দুইজন। পেছনে চার আসনে মুখোমুখি চারজন যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে এই পরিবহনটি। একইভাবে যাত্রী পরিবহন করছে ইজিবাইকগুলো।
সরকারের ঝুঁকিপূর্ণ গণপরিবহনের তালিকায় রয়েছে এ ইজিবাইক। তুলনামূলক ছোট আকারের এই গণপরিবহনটির মাত্রাতিরিক্ত গতিতে ছুটে চলা ও অপক্ক চালক দিয়ে গাড়ি চালানোর অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ১ আগষ্ট গার্মেন্ট, শিল্পকারখানা খোলার পর লকডাউন একেবারেই শিথিল হয়ে পড়েছে। পথে পথে পুলিশের চেকপোস্টও নেই। সড়কে বেড়ে গেছে ইজি বাইকের দৌরাত্ন।
সামাজিক দূরত্ব মানছেনাা ইজিবাইক চালকরা। প্রতিটি ইজিবাইক চালকের পাশের আসনে বসছে দুইজন। পেছনে দিকে দুই পাশে ৩ জন করে মোট ৮ জন যাত্রী পরিবহন করা হয়। সামাজিক দূরত্ব মেনে যাত্রী পরিবহন করতে বলা হলে ২ জন যাত্রী নেওয়ার কথা।
এতে প্রতি জনের মধ্যে এক ফুটেরও কম দূরত্ব থাকছে। আবার দুই পাশের যাত্রীরা বসছেন মুখোমুখি। ফলে স্বাস্থ্যবিধি বা সামাজিক দূরত্বের কিছুই মানা হচ্ছে না।
আবার যাত্রীর মধ্যেও অসচেতনায় ঘাটতি নেই। আদমজী ইপিজেড থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ রুটে চলাচলকারী ইজিবাইকের চালকসহ অনেক যাত্রীদের মাস্ক ছাড়া চলাচল করতে দেখা গেছে।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ইজিবাইকের একজন চালক বলেন, আমরাও জানি সামাজিক দূরত্ব মানা হয় নাই। কিন্তু কি করার আছে। ইজিবাইক বডিই ও ৪ ফুটের। এর মধ্যে তিন ফুট দূরে দূরে লোক বসায় কেমনে? ওই হিসাবে যাত্রী নিতে গেলে রোজ উঠবেনা। জমা দিতে পারবনা মালিকের। তাই করোনাকে ভয় করেও সামনে আসনে যাত্রী উঠাতে হয়।
যাত্রীদের অসাবধানতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা কি যাত্রীরে মাস্ক কিনা দিমু? এরা ভয় পায় না, মানে না। সকাল থেকেই দেখতাছি, বহুত লোক মাস্ক পড়ে নাই। এইখানে আমাগো কি করার আছে?
সাইনবোর্ড এলাকায় এক অটো চালকের কাছে “মহাসড়কে অটো চালানো অবৈধ তাও লকডাউনের মধ্যে” এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংসারের চাপে অভাবের তাড়নায় গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি। বাবা-মা সহ পরিবারের ৬ সদস্য নিয়ে তো আর অনাহারে থাকা যায়না।
পুলিশ ইজিবাইক আটক করেনা এবিষয়ে জানতে চাইলে এক অটোচালক বলেন, সাইনবোর্ড ও চিটাগাংরোড এলাকায় পুলিশ গাড়ি ধরলে ২/৩শ’ টাকা দিয়ে ছুটে আসি। কিন্তু কাঁচপুর এলাকায় ২/৩শ’ টাকা নেয়না। মোটা অংকের টাকা দিয়ে ছুটে আসতে হয়।
এদিকে ইজিবাইক বন্ধ করার দাবি জানিয়ে একাধিক ব্যাক্তি জানান, এই মহামারি করোনার মধ্যে ইজিবাইকের চালকরা গণপরিবহন বন্ধের সুযোগে টাকা কামানোর জন্য মানুষগুলোকে মৃত্যু দিকে নিয়ে যাচ্ছে। গার্মেন্ট ছুটি হলে সামজিক দূরত্ব মানার বালাই থাকেনা তাদের। সামনে পিছনে গাদাগাদি করে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করে। এদের মধ্যে অনেকেরই মাস্ক থাকেনা। তাই দ্রুত করোনা ভাইরাস সংক্রসনের ঝুঁকি বাড়ছে।
তাই প্রশাসনের উচিত হবে, ইজিবাইক চালক ও মালিকদের সাথে বসে এর সমাধান করা। যাতে চালকরা সামনে কোন যাত্রী না উঠায়। আর ৪ জন যাত্রী নিয়ে চলে। আর না হলে এই পরিবহনটি বন্ধ করে দেওয়া হক।
উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়েছে। সোমবার (২ আগস্ট) ২১৭ জন আক্রান্তের মধ্য দিয়ে আক্রান্তের এই মাইলফলক ছুঁয়েছে করোনার সূতিকাগার এই জেলাটি। এর আগে ২৫ জুলাই মৃত্যুর সংখ্যা ২৫০ অতিক্রম করে।
গত বছরের ৮ মার্চ নারায়ণগঞ্জে প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হয়। একই বছরের ৩০ মার্চ বন্দরে পুতুল নামের এক নারীর মৃত্যুর মধ্যদিয়ে জেলায় করোনায় মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়। ৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জকে করোনার হটস্পট ঘোষণা করা হয়। পরের দিন পুরো জেলাকে লকডাউন করে আইএসপিআর।