চারদিকে করোনার ভয়াবহতা চলছে। নারায়ণগঞ্জে বেড়েই চলছে করোনার সংক্রামন। উদ্বেগ-উৎকন্ঠা সর্বত্র। মরণঘাতি এই ভাইরাসের সংক্রামন প্রতিরোধে নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশে চলছে কঠোর লকডাউন। জরুরী প্রয়োজন ছাড়ার বাড়ির বাইরে বের হওয়া নিষেধ। কিন্তু পেট তো আর করোনার নিষেধাজ্ঞা বোঝে না। পেট চায় খাবার।
তাই জীবিকার প্রয়োজনে করোনার ভয়াবহতা উপেক্ষা করে ঘর থেকে বের হচ্ছে মানুষ। দিন আনে দিন খায় এমন মানুষকে আর আটকে রাখা যাচ্ছে না ঘরের ভের্ত ফলে জীবিকার কাছে করোনা উপেক্ষিত হয়ে পড়েছে নারায়ণগঞ্জের খেটে খাওয়া মানুষের কাছে।
রবিবার (১ আগস্ট) বিকালে সরেজমিনে শহরের এমন মানুষের সাথে কথা বলে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে। শহরের বিভিন্ন সড়কে দেখা গেছে বিভিন্ন্ পেশার মানুষের কোলাহল। সড়কে যানবাহনের সংখ্যাও বেড়েছে। শহরের আনাচে কানাচে নানান পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছে ক্ষুদ্র বিক্রেতারা। তবে তুলনা মুলকভাবে ক্রেতা কম। তবুও আশা যদি কিছু বিক্রি করে কয়টা টাকা পাওয়া যায়।
গত বছরের লকডাউন জনজীবনকে যেমন স্থবির করে তুলেছিল তেমনি নিম্ন আয়ের মানুষের অর্থনীতিতেও ফেলে বিরূপ প্রভাব। লকডাউনের সেই পরিস্থিতি সামাল দিতেই দৈনিক আয়ের উপর নির্ভরশীল মানুষের হিমশিম খেতে হয়েছে।
এরমধ্যেই নতুনভাবে দেওয়া লকডাউনে বিপাকে পড়েছেন এসব মানুষ। তাদের মধ্যে অধিকাংশই এখন প্রায় উপার্জনহীন। তবে নিজের ও পরিবারের জীবিকার টানে স্বল্প আয়ের এসব পেশাজীবীরা নিষেধাজ্ঞা ভেঙে বেরিয়ে পড়েছেন অর্থউপার্জনে।
চাষাড়া শহীদ মিনারের সামনে দাড়িয়ে তার বানানো স্যান্ডউইচ বিক্রি করেন আব্দুর রউফ। নিজের পরিবার নিয়ে পাইকপাড়ার একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। কঠোর লকডাউনে বের হতে পারেনি বেশ কিছুদিন। জীবিকার প্রয়োজনে স্যান্ডউইচ নিয়ে বসলেও বিক্রি নেই বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, “লকডাউনে বের হতে পারি নাই অনেকদিন। না বের হলে ঘরে কেউ খাবারও তো দিয়ে যায় না। পেটের জন্য বের হতে হয়।”
শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে শুকনো খাবার বিক্রি করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ফেরিওয়ালা। লকডাউনে নিজের দূরাবস্থার কথা বলতে গিয়ে বলেন, লকডাউনে আমার এমনও অবস্থা হইছিল আমার ঘরে খাবার ছিল না, ভ্যানের শুকনো খাবার খাইছে আমার বাচ্চারা। লকডাউনে বের হইছি , পুলিশ ধরলে ধমক দেয়, লাঠির বাড়ি দেয়। কিন্তু লাঠির ভয়ে বাচ্চাগো না খাওয়াইয়া রাখতে পারি না।
নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের নিচে দুই ভাই বসে পেঁপে বিক্রি করেন। তাদের মধ্যে একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। বড় ভাই বশিল বলেন, “আল্লাহ যেদিন মৃত্যু লিখে রাখছে, সেদিন হবে। কিন্তু মরার ভয়ে আসলে না খাইয়া মরা লাগব।”
লকডাউনে জরিমানা গুনেছেন ইসদাইরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রিকশাচালক। জামতলায় দাড়িয়ে আছেন যাত্রীর অপেক্ষায়। চাষাড়া যাবে কিনা প্রতিবেদকের প্রশ্নে তিনি বলেন, “ না। মেন রোডে গেলে জরিমানা করে। আমারেও করছে। কিন্তু না বের হইলেও সংসার চলে না। না খাইয়া থাকা লাগে, সকালে পানতা ভাত আর লবণ খাইয়া বের হইছি। এসব বইলা লাভ নাই। কেউ দেখে না আমাগো।”
শহরের ফুটপাতে জুতা সাজিয়ে বসেছেন মধ্যবয়সী একজন বিক্রেতা। তিনি বলেন, “দুপুরে আসছি বেঁচতে ,একটু পরেই বৃষ্টি আসছে। বিকালেও একই অবস্থা। কোন কেনা-বেচা নাই।”
নিতাইগঞ্জে পণ্য আনা নেওয়ায় ব্যস্ত লোড-আনলোড শ্রমিক শফিক। তিনি বলেন, “কাম না করলে ঘরে চুলা জলব না। করোনার ভয় পাইলে আমাদের চলে , বাঁচতে হইলে কাম করতে হইবো।”