নারায়ণগঞ্জে পরিবেশ দূষণের অন্যতম ক্ষেত্র ইটভাটা। এসব ইটভাটা থেকে নির্গত বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ও বর্জ্যে পরিবেশ দূষণসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে লক্ষাধিক মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে জানায় স্থানীয় বাসিন্দারা। এগুলোর বিরুদ্ধে ও অতি শিগ্রই অভিযান চালানো হবে বলে জানান নারায়নগঞ্জ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরে উপ-পরিচালক এইচ. এম রাশেদ।
এদিকে, জেলার অধিকাংশ ইটভাটা পরিচালিত হচ্ছে ফতুল্লা থানার বক্তাবলী ও এনায়েতনগর ইউনিয়ন এলাকায়। এছাড়া সোনারগাঁ, রূপগঞ্জ ও বন্দর উপজেলায়ও বেশ কিছু ইটভাটা রয়েছে। এরফলে ফতুল্লার ধর্মগঞ্জ, বক্তাবলী, চতলার মাঠ, সোনারগাঁ, রূপগঞ্জ ও বন্দর এলাকায় ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ও বর্জ্যে বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ। এতে এলাকাবাসী জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, ইটভাটা সৃষ্ট দূষণে বয়স্ক ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইটভাটার কালো ধোঁয়ার কারণে মানুষের ফুসফুসের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট ও ঠান্ডাজনিত নানা রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ইটভাটাগুলোতে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে জ্বালানি কাঠ ও নিন্ম মানের কয়লা। অধিকাংশ ইটভাটায় পরিবেশগত ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স ছাড়াই চলছে ইট পোড়ানো কার্যক্রম। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইনে (২০১৩) নিষেধ থাকা সত্বেও বেশির ভাগ ইট ভাটাই স্থাপন করা হয়েছে লোকালয় তথা মানুষের বসতবাড়ি, কৃষি জমিতে, নদীর তীরে।
ইটভাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে আবাদি জমির উপরিভাগ, নদীর তীর যা আইনে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কাঠ ও অত্যন্ত নিম্নমানের কয়লা পোড়ানো এবং স্বল্প উচ্চতার ড্রাম চিমনি ব্যবহার করায় ইটভাটাগুলোতে নির্গত হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে কালো ধোঁয়া। সে ধোঁয়া বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে চার পাশে। ফলে পরিবেশ বিপর্যয়সহ জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে।
এ বিষয়ে করণীয় কী জানতে চাইলে বিশিষ্ট পরিবেশ বিশেসজ্ঞরা বলেন, উন্নয়ন কর্মকান্ডের জন্য ইট প্রস্তুত করতেই হবে। তবে বর্তমানে যে পদ্ধতিতে ইট তৈরি হয় তাতে প্রচুর পরিবেশ দূষণ হয়। এ পদ্ধতি বাদ দিয়ে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ইট প্রস্তুত করতে হবে।
এ ছাড়া যেসব অবৈধ ইটভাটা রয়েছে সেগুলোর বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশে সরকার আছে, আইন আছে। তাই আইনের প্রয়োগ যারা করবেন তারা তা সঠিকভাবে করছেন না। তারা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন- এটাই আমরা আশা করি।
পরিবেশ অধিদপ্তর এ বিষয়ে তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে না এমন অভিযোগ পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী আবাসিক এলাকায় ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ। অথচ ওই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ফতুল্লার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে শত শত ইটভাটা। এর মধ্যে ফতুল্লার ধর্মগঞ্জ গুদারা ঘাট থেকে বক্তাবলী গুদারা ঘাট নদীর তীর ও রাস্তার আশপাশে অনেক ইটভাটা গড়ে উঠেছে।
এসব ভাটার কালো ধোঁয়ায় ওই এলাকার বাতাস দূষিত হচ্ছে। যার অর্ধেকেরই পরিবেশের কোনো ছাড়পত্র নেই। অথচ স্থানীয় প্রশাসন অজ্ঞাত কারণে এদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। অভিযোগ আছে স্থানীয় ইটভাটার মালিকদের কেউ কেউ কৃষকদের ম্যানেজ করে জমি লিজ নিয়ে অবৈধভাবে ইটভাটা স্থাপন করছেন।
ফতুল্লার ধর্মগঞ্জ গুদারাঘাট হইতে বক্তাবলী গুদারাঘাট পর্যন্ত নিউ ন্যাশনাল বিক্স,নিউ ন্যাশনাল বিক্স,তাজ বিক্স,খাদিজা বিক্স, নজরুল বিক্স, এএসবি বিক্স, চিস্তিয়া বিক্স, রমজান বিক্স, ফাইভ স্টার বিক্স, আওলাদ বিক্স, সেভেন স্টার, বিবিএস বিক্স, নাসির বিক্স, জে স্টার বিক্স, সান বিক্স ছোয়া বিক্স, নবীন বিক্স, জেবিসি, মা বিক্স, ডিবিএম, জেবিসিআই, নুরানী বিক্স, হাজী লতিফ বিক্স, পাপ্পু বিক্স,বাবুল বিক্সসহ ২৫টি অবৈধ ইটভাটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে চলমান রয়েছে। অবৈধ ইটাভাটা গুলার ৫০-১০০ গজের ভিতর একাধিক মসজিদ, মাদ্রাসা, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে এবং ঘনবসতিপূর্ন এলাকা ও কৃষিকাজে ক্ষতি হচ্ছে। তাছাড়া প্রতিটি ইটাভাটায় নদীর সরকারী জমি দখল করে নেয়া হয়েছে।
বেশির ভাগ ইটভাটায় কাঠ, গাড়ির পুরাতন টায়ার, রাবার ও প্লাস্টিকের দানা (গুঁড়া) পোড়ানো হয়, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। অধিকাংশ ইটভাটাগুলো ঘনবসতিপূর্ণ মহল্লায় অবস্থিত।
এ বিষয়ে নারায়নগঞ্জ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরে উপ-পরিচালক এইচ. এম রাশেদ জানান, এ সকল ইট ভাটা গুলোর অধিকাংশই অবৈধ উপায়ে চলছে। তাদের অধিকাংশেরই ছাড়পত্রের নবায়ন নেই। ইতিমধ্যেই তারা এ জাতীয় বেশ কিছু ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতয় এগুলোর বিরুদ্ধে ও অতি শিগ্রই অভিযান চালানো হবে বলে তিনি জানান।