নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

মঙ্গলবার,

১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ঘর ভাড়া, সংসারের খরচ কিভাবে মিটবে জানেনা শাহনাজ

একজন মানুষও পাশে ছিল না, তারা কইছে গুল্লি খাওয়া লাশ দাফন করা যাইবো না

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:২২:৪৩, ১৬ আগস্ট ২০২৪

একজন মানুষও পাশে ছিল না, তারা কইছে গুল্লি খাওয়া লাশ দাফন করা যাইবো না

গত ২১ জুলাই সকালে মাছের আড়তে মাছ ক্রয়ের উদ্দেশ্যে গেছিলো আমার স্বামী। এরপর দুপুরের পরে একজন আমারে আইয়া (আইসা) কইতাছে আমার জামাইরে নাকি পুলিশে গুল্লি করছে। আমি তহনই (তখন) বেহুশ হইয়া যাওয়ার অবস্থা। পরে আমি যাইতে পারি নাই।

আমার এক ভাই আর কে জানি রক্তে মাখা গায়ে দুইডা হাসপাতালে নিয়া গেছিলো। কিন্তু ডাক্তারেরা কইছে হেয় বাইচা নাই। এরপর যখন আমার জামাইর লাশ নিয়া বাড়ির সামনে আইছে। এই জায়গার একজন মানুষও আমাগো কারো পাশে ছিল না। সবাই তারাহুরো কইরা লাশরে পাঠানোর জন্য চিল্লাচিল্লি করতাছিল।

আমরা এই ছোট্ট পোলাটাও লাশ নিয়া সিদ্ধিরগঞ্জ পুলের কবরস্থানে দৌড়াদৌড়ি করতাছিল। কিন্তু কবরস্থানের লোকজন লাশ দাফন করতে রাজি হয় নাই। তারা কইছে গুল্লি খাওয়া লাশ দাফন করা যাইবো না। মানুষ কতেটা পাষাণ হইতে পারে! পরে গেরামে নিয়া দাফন করি।

বুকের ভেতরে লুকিয়ে থাকা চাপা কষ্ট আর দুচোখ থেকে ঝড়ে পড়া টলটলে পানি নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন   বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে মৃত্যুবরণ করা মাছ ব্যবসায়ী মিলন (৩০) এর স্ত্রী মোসা: শাহনাজ আক্তার। এসময় তার পাশে থাকা ছোট্ট সন্তানেরা সেই চোখের সেই পানি মুছে দিচ্ছেন।

জানাগেছে, দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবত মাছের ব্যবসা করছিলেন গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হওয়া মো. মিলন। বরিশাল জেলার ধুকমি গ্রামের হোসেন হাওলাদারের ৬ সন্তানের একজন ছিলেন এই ব্যক্তি। ভাই-বোনদের মধ্যে চতুর্থ তিনি। জীবিকার তাগিদে নিজ বাসস্থান ছেড়ে প্রায় ১৪ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে বসবাস করে আসছিল।

সিদ্ধিরগঞ্জ পুল বাজার সংলগ্ন আবু তাহেরের ভাড়াটিয়া বাড়িতে পাঁচ বছর যাবত ভাড়ায় থাকছেন। পারিবারিকভাবে স্ত্রী শাহনাজ আক্তার (২৮) এর সঙ্গে বিয়ে হয় তার। স্বামী-স্ত্রী উভয়েই গার্মেন্টসে চাকরি করতো। পরবর্তীতে তার শ্বশুরের উদ্যোগে মাছ ব্যবসায় জড়ান মিলন। দুই সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে সুখের সংসার চলছিল মিলনের।

বড় ছেলের নাম দ্বীন ইসলাম। সাড়ে ৯ বছর বয়সী এই শিশু সিদ্ধিরগঞ্জ রেবতী মোহন স্কুলের চতুর্থ শ্রেনীর শিক্ষার্থী। আর ১৮ মাসের একটি ফুটফুটে মেয়ে সন্তান, তার নাম সুমাইয়া।

শাহনাজ আক্তার বলেন, শুরুতে জামাই-বউ দুজন মিলেমিশে টাকা উপার্জন করলেও গেলো পাঁচ বছর যাবত তিনিই ছিলেন একমাত্র উপার্জনদাতা। তবে গেলো জুলাই মাসে মিলনের মৃত্যুর পর থেকে মানুষের দুয়ারে ছোটাছুটি করতে হয় । 

তিনি আরও বলেন, আমাগো শান্তির চিন্তা কইরা আমার বাপে ৫ বছর আগে সিদ্ধিরগঞ্জ পুলে একটা মাছের দোকান নিয়া দিছিলো। তখন থেকে আমি গার্মেন্টসের চাকরি ছাইড়া দেই। কতো সুখের সংসার চলতাছিল আমাগো। কিন্তু আল্লাহ তারে নিয়া গেলো। এখন আমরা কি করমু, কার কাছে যামু?

তিনি আরও জানান, মিলনের ইচ্ছা আছিলো আমার পোলা দ্বীন ইসলামরে পড়ালেখা করাইয়া ডাক্তার বানাইবো। পরে কষ্টমষ্ট কইড়া একটা ফার্মেসির দোকান দিয়া দিবো। তার স্বপ্ন মনে হয় আর পূরণ হইলো না। আমি এখন ঘর ভাড়া, খাওয়াদাওয়া আর পোলার লেখাপড়ার খরচ চালামু কেমনে? এইটা শুধু আমার আল্লাহই জানে।