ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে চলাচলরত ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা, ইজিবাইক ও মিশুক গাড়ীতে ষ্টিকার লাগিয়ে প্রকাশ্যে চলছে চাঁদাবাজি অভিযোগ উঠেছে। লিংক রোডের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড বাসস্ট্যান্ড থেকে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া স্ট্যান্ড পর্যন্ত চলাচলকারী সহস্রাধিক অটোরিক্সা ও ইজিবাইকে ব্যবহৃত হচ্ছে এসব ষ্টিকার।
কিছু কতিপয় স্বার্থান্বেসী মহল নাম সর্বস্ব ভুঁইফোর সংগঠন তৈরী করে জেলা ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজের মাধ্যমে এই সড়কে চলাচলকারী ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা, ইজিবাইক ও মিশুক গাড়ীতে প্রতিমাসে দুই থেকে তিন হাজার টাকা ভাড়ায় ষ্টিকার দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে পঁচিশ লক্ষাধিক টাকা।
এই সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের ষ্টিকার ব্যবহার করলে সড়কে কোন পুলিশি ঝামেলা পোহাতে হয় না। ষ্টিকার ছাড়া সড়কে উঠলেই তাদেরকে ধরে পুলিশে দেয় ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা। পোহাতে হয় নানান ঝামেলা। এমনই অভিযোগ এই সড়কটিতে চলাচলরত ইজিবাইক চালকদের।
সোমবার (৮ জুলাই) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় লিংক রোডের সাইনবোর্ড স্ট্যান্ডে যাত্রীর অপেক্ষায় সাড়িবদ্ধভাবে দাড়িয়ে আছে অসংখ্য ইজিবাইক। প্রত্যেকটি গাড়িতেই কোন না কোন সংগঠনের ষ্টিকার লাগানো রয়েছে। ষ্টিকারগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘বাংলাদেশ অটো বাইক শ্রমিক লীগ’ নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটি, ‘নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা রিক্সা চালক ইউনিয়ন’ ইজিবাইক মালিক শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ, ফতুল্লা থানা, ‘বিনদিয়া হিজড়া পরিবহন’সহ বিভিন্ন ষ্টিকার।
ষ্টিকার ব্যবহারকারী কয়েকজন ইজিবাইক চালকের সাথে কথা বলে জানা যায়, গাড়ীতে ষ্টিকার থাকলে শান্তিতে গাড়ী চালানো যায়। কোথাও পুলিশ ধরে না। ধরলেও ফোন দিলে পুলিশ ছেড়ে দেয়। তাই বাধ্য হয়েই আমরা ষ্টিকার ব্যবহার করছি। ষ্টিকার ছাড়া রাস্তায় বের হলেই পুলিশ ঝামেলা করে। যারা ষ্টিকার দেয় তারাই ষ্টিকার ছাড়া গাড়ী ধরিয়ে দেয়। কারা ষ্টিকার দেয় জানতে চাইলে তিনি জানান, জালকুড়ির রাজু ভাই এই ষ্টিকার দেয়।
আব্দুল কুদ্দুস নামে ‘বাংলাদেশ অটো বাইক শ্রমিক লীগ’ নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির ষ্টিকার ব্যবহারকারী জানান, ভাই প্রতিমাসে দুই হাজার টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে পুলিশ দিয়ে হয়রানী করায়। ষ্টিকার থাকলে পুলিশ গাড়ী ধরে না, শান্তিতে গাড়ী চালানো যায়।
মো: শফিক নামে ‘নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা রিক্সা চালক ইউনিয়ন’ ইজিবাইক মালিক শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ, ফতুল্লা থানা কমিটির ষ্টিকার ব্যবহারকারী জানান, ষ্টিকার ছাড়া রাস্তায় বের হলে গাড়ী চালানো যায় না। ষ্টিকার থাকলে পুলিশ ধরলেও কমিটি থেকে ফোন দিলে গাড়ী ছেড়ে দেয়। তাই বাধ্য হয়েই ষ্টিকার নিতে হয়।
সামছু নামে ‘বিনদিয়া হিজড়া পরিবহন’ এর ষ্টিকার ব্যবহারকারী জানায়, এখন ষ্টিকার হলেই রাস্তায় গাড়ী চলে, ষ্টিকার ছাড়া রাস্তায় বের হওয়া যায় না। যারা ষ্টিকার দেয়, তারাই এসব গাড়ী নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। পুলিশের সাথেই তাদের সুসম্পর্ক। তারা পুলিশকে যা বলে তাই করে। সংসার চালাতে বাধ্য হয়ে রাস্তায় নামতে হয়। আমরা এই ষ্টিকার সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি।
এ ব্যাপারে জেলা ট্রাফিক পুলিশের টিআই (এডমিন) আব্দুল করিম জানান, ষ্টিকার থাকলে পুলিশ গাড়ী ধরে না এ কথাটি সত্য নয়। বরং ষ্টিকারযুক্ত গাড়ীগুলোকেই আমরা বেশী ধরি। আমরা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে মামলা এবং রেকারিং করে থাকি।
ডাম্পিং এর জন্য পর্যাপ্ত স্থান সংকুলান ও মাত্রাতিরিক্ত অটো ইজিবাইক বৃদ্ধিও কারণে এটা নিয়ন্ত্রনে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমরা কারো সাথে এ ব্যাপারে আপোষ করি না। রথ যাত্রার কারণে আমরা একটু ব্যস্ত ছিলাম। তাই অভিযান একটু কম হয়েছে। অচিরেই অভিযান শুরু হবে।
বিনদিয়া হিজড়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা যদি গাড়ী আটক করি, তখন সে অনেক হিজড়া নিয়ে এসে আমাদেরকে হেনস্তা করে। এছাড়াও এখানে বিশেষ বিশেষ লোকজনও ষ্টিকার বাণিজ্যের সাথে জড়িত রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত এর নিয়ন্ত্রন আনতে।