নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

শুক্রবার,

২২ নভেম্বর ২০২৪

বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে হোগলাপাটি-খাটিয়া

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:০২:৫৮, ৮ জুলাই ২০২২

বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে হোগলাপাটি-খাটিয়া

মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব কোরবানি ঈদের বাকি আর মাত্র দুইদিন। ঈদ ঘনিয়ে আসায় বেড়েছে হোগল পাতায় বোনা হোগলা পাটি আর খাটিয়ার কদর। চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শহরে আসতে শুরু করে হোগলা পাতা দিয়ে বানানো পাটি। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, বিগত বছরের তুলনায় মূল্য অনেকাংশে বেড়েছে।  


হোগলা পাতার পাটিগুলো দেশের খুব কম জেলায় পাওয়া যায়। কারণ এর চাহিদা বছরের শুধুমাত্র কোরবানির ঈদ এলেই বেড়ে যায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মুন্সিগঞ্জ জেলার ইছাপুরা ইউনিয়নে, সিরাজদিখান উপজেলার আশ-পাশে এই হোগলা পাতার পাটি তৈরী করে সেখানের অনেক পরিবার তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। 


নারায়ণগঞ্জের নিকটবর্তী জেলা হওয়ায় এসব অঞ্চল থেকেই জেলাজুড়ে পাটি আসে। ঈদকে কেন্দ্র করে শহরের প্রধান প্রধান সড়কে পাটি ও খাটিয়া নিয়ে বসেছে মৌসুমী বিক্রেতারা। 


বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) সকাল থেকে নগরের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড় ও বাজারের সামনে হোগলা পাটি আর খাটিয়া নিয়ে ব্যবসায়ীদের বসে থাকতে দেখা যায়। এমন চিত্র দু’দিন আগেও ছিলো না। ঈদ ঘনিয়ে আসায় তাদের কাছ থেকে ক্রেতারা দাম-দর করে এসব কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। 


শহরের মন্ডলপাড়া এলাকায় পাটির ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম প্রতিটি পাটি ২০০-৩০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। একই মূল্যে ২ নম্বর গেটে পাটি বিক্রি করছেন মৌসুমী ব্যবসায়ী আবেদ আলী। 


পাটির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই পাটিগুলোর সারাবছর কোনো কদর থাকে না। কোরবানির ঈদের জন্য  চার থেকে পাঁচ মাস আগে পাটি বানানোর জন্য অর্ডার দিয়ে আসতে হয়। 


তখন প্রতিটি পাটি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে। তাই বিক্রি করতে হয় বেশি দামে। চার হাত প্রস্থ ও পাঁচ হাত লম্বা একেকটি হোগলার দাম আড়াইশ থেকে তিনশ টাকা। গত বছর আমরাও কম দামে কিনে আনছি, কমে বিক্রি করছি।


অন্যদিকে কাঠের খাটিয়ার মূল্যও আকাশচুম্বী। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বড় বড় গাছ কিনে এনে কোরবানির পশু কাটার জন্য করাতকলে খাটিয়া তৈরি করা হয়। এ সময় আকারবেদে এক একটি খাটিয়ার দাম পড়ে ২০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত।


নগরের কালিবাজার মোড়ে ভ্যানে করে গাছের গুঁড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যবসায়ী শফিক বলেন, আমি সারাবছর ভ্যানে করে ফল বিক্রি করি। কিন্তু কোরবানির পশুর মাংস কাটতে গাছের খাটুরের (খাটিয়া) বিক্রি ভালো হয়। 


তাই এই কদিন কাঠের স-মিল থেকে খাটুরে এনে বেঁচুম। বেচা-বিক্রি বেশ ভালো জানিয়ে তিনি জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে ত্রিশটা কাঠের গুঁড়ি এনে দুপুর ১২টার দিকেই ১৪ টি বিক্রি করে ফেলেছেন। 


মন্ডলপাড়ার খাটিয়া ব্যবসায়ী সবুজ জানান, বাজারে বিভিন্ন গাছের খাটিয়া রয়েছে। তবে মূলত তেঁতুল গাছের গুঁড়ি কোরবানির পশু কাটতে সবচেয়ে বেশি উপযোগী।

 

কারণ এই গাছের গুঁড়ি থেকে পাউডার ওঠে না, মাংস লেগে থাকে না এবং এগুলো বেশ শক্ত ও দামে সস্তা হয়। একেকটি কাঠের গুঁড়ি আকারবেদে ২০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করছেন।


এদিকে ক্রেতাদের অভিযোগ, বিগত বছরের তুলনায় পাটি ও খাটিয়ার মূল্য দিগুণ বেড়েছে। মন্ডলপাড়ার বাসিন্ধা আলমগীর বলেন, গত বছর একটা পাটি ৮০-১০০ টাকা দিয়ে কিনছি, ওই সাইজের পাটির দাম ২০০ টাকার নিচে দেয় না। 


খাটিয়ার সাইজ ছোট দাম বড়। মাঝারি সাইজের একটা খাটিয়া ৫০০ টাকা চাইছে। গতকাল কালিবাজার এক দোকানে দাম বেশি শুনে ভাবছি পড়ে কিনব, আজকে দেখি দাম আরো বাড়ছে।


পাটি ও খাটিয়ার পাশাপাশি কালিবাজার, দিগুবাবুর বাজার, ফতুল্লা বাজারে গিয়ে দেখা যায় পাটের রশি, ছুরি-চাপাতি, ভূষি, খড়, ঘাস ও কাঁঠালের কাঁচা পাতা বিক্রি শুরু হয়েছে।

 

ক্রেতাদের বাড়তি দামের অভিযোগ থাকলেও এসব বস্তু সংগ্রহ করতে কোরবানির ঠিক আগ মুহূর্তে ক্রেতার সংখ্যাও থাকে চোখে পরার মতো।  
 

সম্পর্কিত বিষয়: