২০২০ সাল গোটা পৃথিবীর জন্যই একটি অপ্রস্তুত, অযাচিত সময় হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে বছরটি বেশ আশা দেখিয়েছে। এরকম এক জায়গা প্রযুক্তি। প্রযুক্তি শব্দটি শুনলেই সবার মাথায় যেরকম নতুন প্রজন্মের গ্যাজেটের ছবি ভেসে উঠে, তেমন প্রযুক্তির কথা এখানে বলা হচ্ছে না। এমন কিছু প্রযুক্তি নিয়ে এই লেখায় আলোচনা হবে, নিকট ভবিষ্যতে যেগুলো আমাদের জীবনযাপনের ধরনে সত্যিকারের পরিবর্তন বয়ে আনবে। আনহ্যাকেবল ইন্টারনেট
আমরা এখন যে ইন্টারনেট ব্যবহার করি, তা সুরক্ষিত নয়। এই দুর্বলতা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। অর্থাৎ ইন্টারনেটে ডেটার নিরাপত্তা ধীরে ধীরে কমছে। এজন্যে গবেষকরা ভিন্ন ধরনের একটি ইন্টারনেট ব্যবস্থার কথা ভাবছেন। কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা ব্যবহার করে এমন এক ইন্টারনেট সার্ভিস তৈরি করা সম্ভব, যেখানে হ্যাক করা অসাধ্য হয়ে উঠবে।
স্টেফানি ওয়েনারের নেতৃত্বে নেদারল্যান্ডসের ডেলফট ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি চারটি শহরকে সংযুক্ত করবে, এমন একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করছেন, যেটি সম্পূর্ণভাবেই কোয়ান্টাম প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল। গত কয়েক বছর ধরেই গবেষকরা ফাইবার অপটিকের মধ্য দিয়ে ফোটনকে জোড়ায় জোড়ায় কীভাবে পাঠানো যায়, যাতে তাদের মধ্যে এনকোড করা তথ্যটি সম্পূর্ণভাবে নিরাপদ থাকে, তা নিয়ে কাজ করেছেন।
চীনের একদল গবেষক এই ধরনের একটি প্রযুক্তি নিয়ে আগেই কাজ করেছেন। বেইজিং ও সাংহাই শহরের মধ্যে দুই হাজার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এরকম একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেন তারা। কিন্তু এই নেটওয়ার্কে বর্তমান ইন্টারনেট প্রযুক্তির অনেক উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে নেটওয়ার্কটিতে নতুন কোয়ান্টাম লিংক তৈরি হওয়ার আগেই তা পর্যায়ক্রমে ভেঙে যায়। অন্যদিকে নেদারল্যান্ডসের নেটওয়ার্কটি পৃথিবীর প্রথম নেটওয়ার্ক হতে যাচ্ছে, যেটি সম্পূর্ণভাবে কোয়ান্টাম কৌশল অনুসরণ করে কয়েকটি শহরকে সংযুক্ত করবে।
এই প্রযুক্তিটি ‘এনটেঙ্গলমেন্ট’ নামে পারমাণবিক কণাদের একটি বিশেষ আচরণের উপরে নির্ভর করে গড়ে উঠছে। দুটি ফোটন কণাকে যদি এনটেঙ্গলড অবস্থায় রাখা হয়, তাদের মধ্যে এনকোড করা তথ্য নষ্ট না করে তা গোপনে পড়া সম্ভব না। সমস্যা হচ্ছে, এনটেঙ্গলড আচরণ করে, এই ধরনের কণা তৈরি করা একটি জটিল কাজ। এই কণাগুলো লম্বা দূরত্বে পাঠানো আরো বেশি কঠিন।
স্টেফানি ওয়েনারের দলটি দেড় কিলোমিটার দূরে এনটেঙ্গলড ফোটনকে পাঠিয়ে দেখিয়েছে। বড় দূরত্বে একটি অবিচ্ছিন্ন সংযোগ তৈরি করতে হলে কোয়ান্টাম রিপিটারের দরকার হবে, যেটি নেটওয়ার্কটিকে প্রসারিত করবে। এই ধরনের রিপিটার নিয়ে ডেলফটসহ অন্যান্য অনেক জায়গাতেই কাজ করা হচ্ছে। ওয়েনার বেশ আশাবাদী যে ৫-৬ বছরের মধ্যে এই কাজ শেষ হবে এবং এর ফলে এই দশকের শেষেই সম্পূর্ণ পৃথিবীব্যাপী একটি কোয়ান্টাম নেটওয়ার্ক দেখা যাবে। হাইপার-পারসোনালাইজড মেডিসিন
একটি বিরল ধরনের রোগের গল্প শোনা যাক। একটি বাচ্চা প্রাণঘাতী এক রোগে আক্রান্ত, যেটি এমনই বিরল যে তার কোনো চিকিৎসা নেই। এমনকি এই রোগ নিয়ে কোনো গবেষণা পর্যন্ত হচ্ছে না। কারণ এত বিরল রোগের পেছনে গবেষণা লাভজনক নয়। এই ধরনের কিছু অসুখ নিয়ে বেশ আশা দেখা যাচ্ছে। বেশিরভাগ সময়েই এই রোগগুলো কোনো ধরনের জেনেটিক মিউটেশনের ফলে হয়ে থাকে। একটি নতুন ধরনের জেনেটিক মেডিসিন নিয়ে কাজ হচ্ছে, যা রোগীর জিনে স্থাপন করা যাবে।
মিলা ম্যাকোভেচ নামের একটি বাচ্চা মেয়ের এমন একটি রোগে এই ধরনের চিকিৎসা দেখা গেছে, যেখানে শুধুমাত্র তার জন্য একটি ওষুধ তৈরি করা হয়েছে। নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে এই খবরটি প্রকাশিত হয়েছে। চিকিৎসকরা তার জিনে মিউটেশন শনাক্ত করতে পেরে এই ভিন্ন ধরনের চিকিৎসার দিকে এগিয়েছেন। অবশ্য মিলার রোগ নিরাময় করা সম্ভব হয়নি। তবে তার অবস্থাটি স্থিতিশীল করেছে। তার খিঁচুনি কমেছে এবং অন্যের উপরে ভর দিয়ে সে দাঁড়াতে এবং হাঁটতে শুরু করেছে।
মিলার এই চিকিৎসাটি সম্ভব হয়েছে কারণ জেনেটিক মেডিসিন নিয়ে অনেক ধরনের গবেষণা চলছে। এই চিকিৎসাটি জিন প্রতিস্থাপন এবং পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। মিলার ক্ষেত্রে অবশ্য জিনের ত্রুটিযুক্ত অংশ মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। এই চিকিৎসায় ডিএনএকে কম্পিউটারে প্রোগ্রাম করা হয়।
প্রযুক্তিটির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, এটি প্রচলিত ফার্মেসি ব্যবস্থার বিপরীতে কাজ করে। শুধুমাত্র একজন লোকের জন্যে একটি ঔষধ প্রস্তুত করতে হলেও এখানে কাজ করবে একটি বড় দল। তাদের ডিজাইন ও প্রস্তুতির জন্য যে আকাশচুম্বী খরচ, সেটির দায়িত্ব কে নেবে? অ্যান্টি-এইজিং ড্রাগস
বার্ধক্য প্রতিরোধী একটি নতুন ধরনের ঔষধ প্রথমবারের মতো মানুষের উপরে পরীক্ষা করা হচ্ছে। এই ঔষধ অবশ্য কারো আয়ু বাড়িয়ে দেবে না, কিন্তু বার্ধক্যজনিত রোগগুলো নিরাময়ে সাহায্য করবে। এগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে সেনোলাইটিকস। মানবদেহ বার্ধক্যের দিয়ে এগোতে থাকলে ‘সেনেসেন্ট’ নামের একধরনের কোষ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই কোষগুলো তার আশেপাশের কোষের সাধারণ মেরামত ব্যবস্থা নষ্ট করতে থাকে। একইসাথে একটি বিষাক্ত পরিবেশ তৈরি করে। সেনোলাইটিকস এই ধরনের কোষগুলো মেরে ফেলে।
গত বছরের জুন মাসে, স্যান ফ্রান্সিসকো নির্ভর ইউনিটি বায়োটেকনোলজি কিছু রোগীর হাঁটুর বাতের উপরে পরীক্ষা করে ফলাফল জানিয়েছে। বড় ধরনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফলের ব্যাপারে তারা কাজ করছে। কোম্পানিটি চোখ এবং ফুসফুসের বার্ধক্যজনিত রোগের ঔষধ নিয়েও কাজ করছে।
অ্যালকাহেস্ট নামের একটি কোম্পানি কমবয়সীদের রক্তে পাওয়া বিশেষ উপাদান আলঝেইমারের রোগীদের শরীরে স্থাপন করছে। তারা আশা করছে, এর ফলে রোগীদের শরীরে অসুখটির বৃদ্ধি থামানো সম্ভব হবে। কোম্পানিটি পারকিনসন্স এবং ডিমেনশিয়া রোগের ঔষধ মানুষের শরীরে পরীক্ষা করছে। আবার, গত ডিসেম্বরে, ড্রেক্সেল ইউনিভার্সিটি কলেজ অব মেডিসিনে একদল গবেষক র্যাপামাইসিন নামের একটি ওষধযুক্ত ক্রিম ব্যবহার করে ত্বকের বার্ধক্য ধীর করার চেষ্টা করেছেন। স্যাটেলাইট মেগা-কনস্টেলেশনস
বিভিন্ন কোম্পানি স্যাটেলাইট দিয়ে ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ব্রডব্যান্ড কানেকশনগুলো তখন ইন্টারনেট টার্মিনাল হিসেবে কাজ করবে। এই টার্মিনালগুলো এরপর যেকোনো ডিভাইসে ইন্টারনেট পাঠাতে পারবে। স্পেসএক্স একাই এই দশকে স্পুটনিকের পরে যে পরিমাণ স্যাটেলাইট পাঠানো হয়েছে তার থেকে ৪.৫ গুণ বেশি স্যাটেলাইট পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে।
এই কাজটি খুবই সম্ভব, কারণ গবেষকরা ইতিমধ্যেই ছোট স্যাটেলাইট তৈরি ও তা কম খরচে পৃথিবীর কক্ষপথে পাঠানো শিখেছেন। স্পেস শাটল যুগে একটি স্যাটেলাইট পাঠাতে হলে প্রতি পাউন্ডের জন্যে ২৪,৮০০ ডলার খরচ হতো। ফলে ছোট একটি কম্যুনিকেশন স্যাটেলাইট পাঠাতেও ২০০ মিলিয়ন ডলারের মতো খরচ হয়ে যেত। সে সময়ে এরকম স্যাটেলাইটের ভরও ছিল অনেক বেশি। কম্যুনিকেশন স্যাটেলাইটগুলো তখন চার টনের কাছাকাছি হতো।
আজকের যুগে, স্পেসএক্সের স্টারলিংক স্যাটেলাইটের ভর ৫০০ পাউন্ডের কাছাকাছি হয়। পুনরায় ব্যবহারযোগ্য ডিজাইন ও কম উৎপাদন মূল্যের কারণে এখন অনেকগুলো স্যাটেলাইট একত্রে একটি রকেটে করে মহাশূন্যে পাঠানো সম্ভব হয়েছে। এভাবে খরচ আরো অনেক কমে যায়। স্পেসএক্সের ফ্যালকন ৯ রকেটের একটি উৎক্ষেপণে পাউন্ডপ্রতি ১,২৪০ ডলার খরচ হয়।
প্রথম ১২০টি স্টারলিংক স্যাটেলাইট গত বছরেই মহাকাশে পাঠানো হয়েছে। গত জানুয়ারি মাস থেকে, দুই সপ্তাহ পরপর প্রতি ব্যাচে ৬০টি করে স্যাটেলাইট পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে। এই বছরে কোম্পানিটি সর্বমোট ৯৫৫টি স্যাটেলাইট প্রেরণ করেছে। অন্যদিকে, ওয়ানওয়েব এই বছরে এখন পর্যন্ত ১১০টি স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে। আমরা আক্ষরিক অর্থেই সমগ্র পৃথিবীব্যাপী ইন্টারনেট সেবা দেখতে পাব, সবচেয়ে দরিদ্র লোকটি থেকে শুরু করে সবচেয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও।
অনেক গবেষকই অবশ্য আশঙ্কা প্রকাশ করছেন যে, জালের মতো ছড়িয়ে থাকা এই স্যাটেলাইটগুলোর ফলে মহাকাশ গবেষণা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আবার কোনো ধরনের সংঘর্ষের ফলে, পৃথিবীর কক্ষপথে এসব স্যাটেলাইটের বিশাল পরিমাণ ধ্বংসাবশেষ ঘুরপাক খেতে পারে। এর ফলে, ভবিষ্যতের মহাকাশ অভিযানগুলো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গত সেপ্টেম্বরে স্টারলিংকের সাথে একটি আবহাওয়া স্যাটেলাইটের সংঘর্ষ অল্পের জন্যে রক্ষা পায়। এই ঘটনাটি গবেষকদেরকে ভবিষ্যৎ ঝুঁকির ব্যাপারে ভাবিয়ে তুলছেন। পৃথিবীর কক্ষপথের ভবিষ্যৎ অনেকটাই এই মেগা-কনস্টেলেশন্সের উপরে নির্ভর করছে। কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি
আমরা এখন যে কম্পিউটারগুলো ব্যবহার করি তার তুলনায় কোয়ান্টাম কম্পিউটারে ডেটা প্রক্রিয়া করার ব্যবস্থাটি অনেক বেশি ভিন্ন। তাত্ত্বিকভাবে, বর্তমান সুপারকম্পিউটারগুলো যে সমস্যা সমাধান করতে কয়েক হাজার বছর সময় ব্যয় করবে, কোয়ান্টাম কম্পিউটার তা নিমেষেই সমাধান করতে পারবে। এরকম কিছু সমস্যা হচ্ছে, বর্তমান ক্রিপ্টোগ্রাফি কোড ভেঙে ফেলা অথবা অণুর আচরণের নিখুঁত সিমুলেশন তৈরি।
বেশ অনেক বছর ধরেই কোয়ান্টাম কম্পিউটার নিয়ে কাজ হচ্ছে। কিন্তু শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতির মধ্যেই এই কম্পিউটারগুলো ক্ল্যাসিক্যাল কম্পিউটারের চেয়ে দ্রুত পারফর্ম করে। গত বছরের অক্টোবরে, প্রথমবারের মতো গুগল এরকম একটি কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি প্রদর্শন করেছে। ৫৩ কিউবিটের একটি কম্পিউটার তিন মিনিটের কিছু বেশি সময় ধরে একটি হিসাব করেছে, যেটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সুপারকম্পিউটারের দশ হাজার বছর সময় লাগত। অর্থাৎ, কম্পিউটারটি দেড় বিলিয়ন কম সময় ব্যয় করেছে। আইবিএম অবশ্য এই দাবিটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তাদের মতে, সুপারকম্পিউটারটি সর্বোচ্চ এক হাজার গুণ কম বেশি সময় ব্যয় করতো। যা-ই হোক, এটা একটি মাইলফলক। নতুন একটি কিউবিট সংযোজন কম্পিউটারটিকে দ্বিগুণ গতি দেবে।
গুগলের এই অর্জন অবশ্য শুধুমাত্র একটি ধারণার বাস্তবসম্মত প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে। এখনও মানবজাতির কাজে ব্যবহার করা যাবে, এরকম একটি কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির পথ অনেক দূরে। কারণ, কম্পিউটারকে শক্তিশালী করতে হলে আরো কিউবিট যোগ করতে হবে। কিন্তু যত বেশি কিউবিট যোগ হবে, তাদের নাজুক কোয়ান্টাম অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা ততই কঠিন হয়ে উঠবে।
গুগলের ইঞ্জিনিয়াররা বিশ্বাস করেন, তারা যেভাবে এগোচ্ছেন, তাতে ১০০-১,০০০ এর মাঝামাঝি সংখ্যক কিউবিট তারা একত্র করতে পারবেন। তবে তাতে কতটুকু কাজ করা যাবে সে ব্যাপারে এখনও নির্ভরযোগ্য কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে আজকের যুগের ক্রিপ্টোগ্রাফি ভাঙতে পারবে এরকম মেশিন তৈরি করতে কয়েক মিলিয়ন কিউবিট প্রয়োজন হবে। সেখানে পৌঁছতে এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যাট্রিবিউশন
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ঘূর্ণিঝড় ইমেলডা আঘাত করার পরে টেক্সাসের হিউস্টনে বন্যা শুরু হয়। এক গবেষক দল ঘোষণা করেছিল, জলবায়ু পরিবর্তন এখানে একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে। ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন সংস্থাটি জলবায়ু পরিবর্তন হলে এবং তা নাহলে আবহাওয়ার প্রকৃতি কেমন থাকে তা হাই-রেজুলেশন কম্পিউটার সিমুলেশন চালিয়ে দেখেছিল। সেখানে দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এরকম বড় ঘূর্ণিঝড় হওয়ার সম্ভাবনা ২.৬ গুণ বেশি এবং এর তীব্রতাও শতকরা ২৮% বেড়ে গেছে।
এই দশকের শুরুতেও, বিজ্ঞানীরা কোনো নির্দিষ্ট ঘটনার সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপারটি সংযুক্ত করতে অনিচ্ছুক ছিলেন। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এই সংক্রান্ত অনেকগুলো গবেষণা হয়েছে। যার ফলে আবহাওয়ার এরকম সিমুলেশনের টুল ও কৌশলগুলো অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠেছে। এর পেছনে অনেকগুলো প্রযুক্তির অগ্রগতি একসাথে কাজ করেছে। একটি হচ্ছে, স্যাটেলাইটের দীর্ঘ সময়ের বিস্তারিত ডেটা আমাদেরকে পৃথিবীর প্রাকৃতিক আবহাওয়া বুঝতে সাহায্য করেছে। তাছাড়া, কম্পিউটারের ক্ষমতা যেভাবে বেড়ে গেছে, বিজ্ঞানীরা এখন সহজেই হাই-রেজুলেশন সিমুলেশনসহ আরো অনেক ধরনের ভার্চুয়াল এক্সপেরিমেন্ট চালাতে পারেন। এই সবগুলো প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা এখন নিশ্চিতভাবেই বলতে পারেন যে, সাম্প্রতিক ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের বিশাল ভূমিকা রয়েছে।
এরকম ভার্চুয়াল এক্সপেরিমেন্টের ফলে গবেষকরা এখন আমাদের জানাতে পারেন ঠিক কী ধরনের ঝুঁকির জন্য আমরা কতটুকু প্রস্তুতি নিব, কতটুকু বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে হিট ওয়েভ কতটুকু মারাত্মক হতে পারে। পৃথিবীর রাজনীতিবিদ, রাষ্ট্রপ্রধানরা যদি তাদের কথা শোনেন, তাহলে গবেষকরা আমাদেরকে জলবায়ু পরিবর্তন হওয়া একটি পৃথিবীতে টিকে থাকতে হলে কীভাবে শহর এবং স্থাপনাগুলো পুনর্গঠন করতে হবে সে ব্যাপারে নির্দেশনা দিতে পারবেন।