গত কয়েকদিনের হালকা ও ভারী বর্ষণে ডিএনডির ভেতর ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। ডুবে গেছে রাস্তা-ঘাট। বাড়ি-ঘরেও পানি ঢুকে পড়েছে। এতে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে জলাবদ্ধ কবলিত এলাকার মানুষের। এমন অসহনীয় দুর্ভোগ ও ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে একদিকে হাহাকার অন্যদিকে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে তাদের মধ্যে।
কারণ ডিএনডির পানি নিষ্কাশন প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হলেও নানা প্রতিবন্ধকতায় মন্থর গতিতে চলছে প্রকল্পের কার্যক্রম। বৃষ্টিতে ফতুল্লার মুসলিমনগর, ধর্মগঞ্জ, হরিহরপাড়া, কাশিপুর, পৌষা পুকুরপাড়, হাজীপাড়া, দক্ষিণ সস্তাপুর, কোতালেরবাগ, শেহাচর, ইসদাইর, ভুইগড়, দেলপাড়া, আদর্শনগর, নয়ামাটি, পিলকুনি, বুড়ির দোকান সস্তাপুর, হাজিগঞ্জ, কুতুবপুর সিদ্ধিরগঞ্জের পাঠানটুলি, গোদনাইল, জালকুড়ি, এনায়েতনগর, কদমতলীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তবে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে ফতুল্লার পৌষাপুকুর ও লালপুর এলাকায়। প্রায় প্রতিটি বাড়ি পানিতে ডুবে আছে। কোথাও হাটু পানিতে তলিয়ে আছে পুরো এলাকা। বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অফিস বন্ধ রাখা তহয়েছে পানির কারণে।
শনিবার (১৯ জুন) সরেজমিনে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন সহ ডিএনডি অভ্যন্তরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সিটি করপোরেশনের সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চল সহ বেশ কিছু এলাকায় পানিতে ডুবে আছে। নিচু এলাকার একতলা কাঁচা, পাকা, ও বেড়ার বাড়িগুলোর মেঝে পানিতে তলিয়ে গেছে। ডিএনডি বাঁধের ভিতর অধিকাংশ এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা তৈরী হয়েছে। সবচেয়ে করুণ অবস্থা দেখা যায় ফতুল্লার লালপুরের পৌষা পুকুরপাড়া এলাকায়। যে সড়কে যানবাহন চলাচল করত সে সড়কে চলছে নৌকা। নৌকা ও ভ্যান গাড়ি ছাড়া যাতায়াতের কোন ব্যবস্থা নেই। সড়কের পানি হাঁটু ছাড়িয়ে কোমড় পর্যন্ত।
পৌষ পুকুর ফার্মেসী ডাক্তার মোল্লা মিয়া বলেন, আমাদের এলাকায় প্রতিবারের নির্বাচনের পূর্বে বড় বড় আশ্বাস দেওয়া হয়, কিন্তু কোন ব্যবস্থা হচ্ছে না। আমাদের এলাকার পানি বের হওয়ার কোন সমাধান নেই। পাম্প দিয়ে পানি নামানো হয়। সেই পাম্পের বিল ও আমরা নিজেরা এলাকাবাসী মিলে দেই। সরকারি তহবিল থেকে দেওয়ার কথা ছিল প্রথমে কিন্তু পরে না করে দেওয়া হয়েছে। মাঝখানে পাম্পের বিদ্যুৎ লাইন কেটে দিয়েছিল বিদ্যুৎ অফিস থেকে। এখন আবার সংযোগ করছে। সাধারন সময়েই ২-৩ ঘন্টা বৃষ্টি হলে পানি সড়তে ৬-৭দিন সময় লাগে। আর এখন কবে যে পানি সড়ব সেটা মাথায় আসতেছে না। আমাদের এলাকার মানুষের অবস্থা অনেক খারাপ। আগে জনপ্রতিনিধি থেকে কেবল আশ্বাসই পাইতাম , এখন আর সেটাও নেই।
একই দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন নাসিকের ৯ নং ওয়ার্ডবাসী। ভুক্তভোগী আনোয়ার রহমান বলেন, আমরা সিটি করপোরেশনে থাকি ঠিকই, কিন্তু লাভ নাই। ভোগান্তির শেষ নাই। ওয়াসার খাবার পানি ঠিকমতো পাই না, আর এখন বাসায় ড্রেনের পানির কমতি নাই। পানি মানেই আমাদের জন্য দূভোর্গ।
ডিএনডির স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ডিএনডির পানি নিষ্কাশনে যে খাল রয়েছে তা বেদখল হয়ে আছে। বিভিন্ন স্থানে দখল করে রাখা হয়েছে। অনেকে বেআইনিভাবে খালের ওপর কৃত্রিম কালভার্ট তৈরি করে খালের প্রশস্ততায় বাধা সৃষ্টি করেছে। একাধিক সামাজিক প্রতিষ্ঠান ডিএনডির জায়গা দখল করে রেখেছে। এ কারণে খাল এখন সরু নালীতে পরিণত হয়েছে। বন্যার পানি সরু খাল দিয়ে দ্রুত গতিতে নিষ্কাশিত হতে পারছে না।
ইসদাইর এলাকার বাসিন্ধা ভুক্তভোগী তাপস সাহা বলেন, আমাদের এলাকার পানি নিষ্কাশনের পথ গুলো সব সময় সচল রাখা প্রয়োজন । শুধুমাত্র বর্ষা মৌসুমের জন্য নয়। বর্ষা মৌসুমে ড্রেন পরিষ্কার থাকে না। পলিথিন, প্লাস্টিক সহ অপচনশীল বস্তু ড্রেনে ফেলে ড্রেনের পানি নিষ্কাশন বন্ধ করে রাখে। পরবর্তীতে ড্রেন পরিষ্কারের যথাযথ ব্যবস্থাও গ্রহণ করে না। এ কারণে বৃষ্টি হলেই রাস্তায় পানি জমে যায়।
ঘড়ির কাটায় বিকাল ৫ টা। পূর্ব শিয়াচরে লালখা মোড়ে সিরিয়ালে ৫ শতাধিক গার্মেন্টস কর্মীরা পানি পেরিয়ে বাড়ি ফিরছেন। এ এলাকারবাসিন্ধা গার্মেন্টসকর্মী নাইমা বলেন, “এমনেই এই এলাকার রাস্তা ভালা না, হের উপরে পানি থাকলে এই রাস্তা দিয়া কি চলন যায়। মনে অয়, পানিগুলি কাটা গায়ে নুনের ছিটা। কি যে বলমু কাইলকা রাইতে রাস্তায় গর্তে পইরা গেছি । কি ব্যাথাটা পাইছি! ব্যাথা লইয়াই আবার এখন কামে গেছিলাম। কোন উপায় নাই কাম আছে কপালে”।
জানা যায়, ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) প্রকল্পের কাজ শুরু করে সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্রিগেডের অধীনস্থ ১৯ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্যাটালিয়ন। এর আগে, প্রথম ধাপে ২০১৬ সালে একনেকের সভায় ডিএনডি প্রকল্পের জন্য ৫৫৮ কোটি টাকার এই মেগা প্রকল্প পাস হয়। পরবর্তীতে ডিএনডি এলাকায় নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন (দ্বিতীয় পর্যায়) (প্রথম সংশোধনী)’তে বরাদ্দ বাড়িয়ে প্রায় ১৩০০ কোটি টাকার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কার্যক্রম চলাকালীন প্রায় সারে ৩ বছরে প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৫০.৬৫ শতাংশ।
ওদিকে প্রকল্পের অগ্রগতি আশানুরূপ না হওয়ায় এবার বর্ষা মৌসুমের পুরোটা সময়ই দুর্ভোগ পোহাতে হবে ডিএনডিবাসীকে। এমনটা মনে করছেন সচেতন মহল।