নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

শনিবার,

২৩ নভেম্বর ২০২৪

ডিএনডির পানিবন্দি মানুষের কাছে ক্ষমা চাইলেন শামীম ওসমান

নারায়ণগঞ্জ টাইমস:

প্রকাশিত:০৫:৪৯, ৫ জুলাই ২০২১

ডিএনডির পানিবন্দি মানুষের কাছে ক্ষমা চাইলেন শামীম ওসমান

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান বলেছেন, আজকে ডিএনডির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। যখন ডিএনডি তৈরি করা হয়েছিল তখন ছিল বেহেশতের টুকরো, এখন তা অভিশাপ। ফতুল্লার লালপুর যা অভিশপ্ত এলাকা হয়ে গেছে। জায়গাটা হল নিচু এবং পানি বের হওয়ার যে রাস্তাগুলো আছে সেগুলো উচু। নিচু জায়গা থেকে তো পানি আর উচু জায়গায় যেতে পারবে না। লিংক রোডের কাজের জন্য প্রায় ৮ কিলোমিটার রাস্তায় আমরা বালু ভরাট করছি। ওই ৮ কিলোমিটার রাস্তায় ডিএনডির যে খালগুলো তাদের কোন সংযোগ আছে কী না আমরা তা জানি না। কুতুবপুরে ওয়াসার পাশে আমাদের একটা রাস্তা আছে। আগে সেই এলাকায় প্রতি বর্ষায় ওয়াসা ১০টি করে অস্থায়ী পাম্প বসাতো। এখন ঢাকা সিটি করপোরেশন ওয়াসার দায়িত্ব নিয়েছে। ফলে সেই পাম্পটা এখন চলছে না। তাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আশাকরি তারা সেই পাম্পগুলো চালু করে দেবেন।
জলাবদ্ধতার বিষয়ে শামীম ওসমান বলেন, আমি মনে করি এই জলাবব্ধতার সমস্যা আমার ব্যর্থতা। এ জন্যে আমার এলাকার ভুক্তভোগী যারা আছেন তাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। ক্ষমা চাওয়াতে আমার কোনো লজ্জা নাই কারণ আমি সমস্যাটা সমাধান করতে পারি নাই। কিন্তু এটা সত্য যে এ সমস্যা সমাধানে আমাদের কোনো অতিরিক্ত মেশিনারিজ এবং অতিরিক্ত বাজেট নাই। যেটুকু আনা সম্ভব ছিলো তার থেকে বেশি আমি নিয়ে এসেছি। এখন যতটুকু করা দরকার তাও আমরা করবো।

তবে শামীম ওসমান বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে নারায়ণগঞ্জের সবগুলো সরকারি দপ্তরের সমন্বয়ের দরকার। বিচ্ছিন্নভাবে সমস্যার আংশিক সমাধান হবে, পুরোপুরি সমাধান হবে না। সে পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আজকে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আগামী রবিবার সরেজমিনে দেখতে আসবেন। তিনি আসার আগে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বুধবার ডিএনডি ও এর বাইরে যেসব এলাকায় জলবদ্ধতা হচ্ছে সে বিষয়ে সমাধান কীভাবে করা যায় তা নিয়ে আমরা বসবো। আমাদের পরবর্তী সভায় এই জলাবদ্ধতা নিরসনে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে তাতে করে আগামী শীত মৌসুম পরে এরকম পরিস্থিতি নিয়ে আর কোনো সভা করতে হবে না। আমি আশা করি এই রবিবারে একটি সিদ্ধান্ত দিতে পারবো। তিনি সভায় সাংবাদিকদেরও থাকতে বললেন। তাদের সহযোগিতাও চেয়েছেন।

শামীম ওসমান আক্ষেপ করে বলেন, দুই বছর আগে জালকুড়িতে সিটি করপোরেশনকে ডাম্পিং করার জন্য জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যেন সেখানে ময়লা ফেলে তা দিয়ে ইলেক্ট্রিসিটি উৎপাদন করা যায়। জালকুড়ির মানুষের চরম আপত্তির পরেও জেলা প্রশাসন ওই জায়গা বরাদ্দ দেন। আজ পর্যন্ত সেই কাজের কোন অগ্রগতি নেই। ময়লাটা ফালানো হচ্ছে লিংক রোডের পাশে।
 সভা চলাকালে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ডা বললেন
সভায় এক পর্যায়ে পানির সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন শামীম ওসমান। শামীম ওসমান মুঠোফোনে পানি সম্পদ মন্ত্রীকে  বলেন, দ্রুত ডিএনডির জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানের জন্য ডিএনডি এলাকায় এসে পরিদর্শন করে যান। তাৎক্ষণিক মন্ত্রী বিষয়টি আমলে নিয়ে আগামী রবিবার সরেজমিন ডিএনডি এলাকাটি পরিদর্শনে আসবেন বলে  উপস্থিত সংশ্লিষ্টদের আশ্বস্ত করেন। 


এসময় পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন, শামীম ওসমান আন্তরিক ডিএনডির জন্য। আমি আগামী রবিবার আপনাদের সমস্যা সরেজমিন পরিদর্শন করব। ইতিমধ্যে আপনাদের সমস্যার সমাধানে প্রধানমন্ত্রী প্রায় ১৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। যে বরাদ্দ আনতে আপনাদের এমপি রাতদিন কাজ করেছেন। কাজ চলছে। আপনারা জানেন ডিএনডি মূলত ইরি চাষের জন্য নির্ধারিত ছিল। কিন্তু মানুষ এখানে বসতি গড়ে তোলে।  কত খাল ছিল এগুলো দখল হয়ে আছে। এছাড়া আরো সমস্যা আছে। সকলের সাথে সমন্বয় করে সরেজমিন দেখে ডিএনডি সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করব। বক্তব্য শেষ করার আগে শামীম ওসমান ডিএনডির ভেতরে কিন্তু প্রজেক্টের বাইরে জলাবদ্ধতা এলাকার জন্য আরো বরাদ্দ দাবি করেন। মন্ত্রী সেই সময় পুনরায় আশ্বাস দেন এমপিকে।

ডিএনডি প্রজেক্টের পরিচালকের বক্তব্য


সভায় ডিএনডি প্রজেক্টের পরিচালক লে. কর্ণেল মো. আহসানূত তাকবিম চৌধুরী বলেন, জলাবদ্ধতার মূল কারণ হলো ৩৬টি ক্যানেলে যেসব এলাকায় জলাবদ্ধতা সেই পানি আসতে পারছে না। কারণ খাল ওপরে এলাকা নীচে। এছাড়া খাল দখল বারবার হচ্ছে। ময়লা ফেলে বারবার খাল ভরাট করা হচ্ছে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের নীচ দিয়ে তিনটি পানি নিষ্কাশনের পয়েন্ট রয়েছে। সেগুলো বিশ্বরোডের উন্নয়ন কাজ শুরু হওয়ায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমরা প্রকল্পের বাইরে গিয়ে জলাবদ্ধতা নিষ্কাশনে ৪টি হাই পাওয়ার পাম্ম দিয়েছি যেগুলো দিয়ে প্রতি ৫ সেকেন্ডে ৪৫০০ লিটার পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় ৮০টির ওপরে ছোট বড় পাম্প চলছে। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে যে এলাকাগুলো এবার ডুবেছে সেগুলো নানা উন্নয়ন কাজ শুরু হওয়ায় সেই পথ দিয়ে পানি নিষ্কাশিত হতে পারছে না। আমরা এগুলো নিয়ে সবার সাথে সমন্বয় করছি। 


গণমাধ্যম কর্মীরা ওই সময় প্রজেক্ট সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ তোলেন।  এতদিন এসব সমন্বয় করা হলো না কেন বারবার প্রশ্ন তোলেন। শামীম ওসমান সকলকে নিবৃত করে কিভাবে সামনে সমাধান করা যায় সেই তাগিদ দেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ’র সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান, ডিএনডি প্রজেক্টের পরিচালক লে. কর্ণেল মো. আহসানূত তাকবিম চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সেলিম রেজা, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রহিমা আক্তার, সদর উপজেলা নির্বহী কর্মকর্তা আরিফা জহুরা শিউলী, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. খোকন সাহা, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবুর রহমান, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাড. আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস, বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এম শওকত আলী, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন ভূঁইয়া সাজনু, ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান স্বপন, এনায়েতনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান, কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টুসহ গণমাধ্যমকর্মীরা।

সম্পর্কিত বিষয়: