নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্তির পর দ্বিতীয়বারের মতো উৎসবে মেতে উঠেছে সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লার বিএনপির দলীয় লোকজন ছাড়াও ভুক্তভোগী ও সাধারণ মানুষ। বিএনপির নেতাকর্মীরা খুশিতে মিষ্টি বিতরণ ও আনন্দ মিছিল করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে।
পাশাপাশি সাধারণ মানুষও স্বস্থির নি:শ্বাস ফেলছে। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর যারা ব্যবসা বাণিজ্য হারিয়েছে, হামলা ও মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছে তারা বেশি খুশি জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্তির খবরে।
তাদের মতে, ৫ আগস্ট বিকাল থেকে সিদ্ধিরগঞ্জে বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতা, তার ছেলে, তার বাহিনী ব্যাপক তান্ডব চালায়। এর থেকে নিস্তার পায়নি নিরিহ নিরপরাদ মানুষ ও সাধারণ ব্যবসায়িরাও। দখল-বাণিজ্যের মহোৎসব চলে রীতিমত।
সাধারণ মানুষকে মিথ্যা মামলায় ঢুকিয়ে দেয়ার পাশাপাশি বিএনপির নেতাকর্মীরাও রক্ষা পায়নি। এক পর্যায়ে জুলাই-আগস্টে নিহতের ঘটনায় বিএনপি নেতা আইলপাড়ার শাহআলম মানিককে আসামি করে মামলার আবেদন করা হয় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায়।
এর প্রতিবাদে বিএনপির নেতাকর্মীরা সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ঘেরাও করে। কিন্তু ওই প্রভাবশালী নেতার লোকজন মামলার বাদির পক্ষ নিয়ে থানার ওসিকে চাপ সৃস্টি করে মামলা গ্রহণ করার জন্য। এভাবে অনেক বিএনপির নেতাকর্মী হত্যা ও হত্যা চেষ্টার মামলার আসামি হয়েছে ওই প্রভাবশালী বিএনপি নেতার নির্দেশে।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লার শত শত বিএনপির নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ লোকজন তাদের টাইম লাইনে আলহামদুলিল্লাহ লিখে পোস্ট দিয়েছে। কেউ লিখেছে অবশেষে ভুমিদস্যু, চিহ্নিত চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসীদের গডফাদারের রাহুমুক্ত হলো নারায়ণগঞ্জ বিএনপি। কেউ লিখেছে রাহুমুক্ত হলো নারায়ণগঞ্জ বিএনপি।
খুশিতে মিস্টি বিতরণ করা হয় ফতুল্লার রেল লাইন বটতলা, রেল স্টেশন, দাপা, তক্কার মাঠ, পাগলা নয়ামাটি, নন্দলালপুর, শাহি বাজার, দেলপাড়া ক্যানেল পাড়, ইসদাইর, টাগারপার, লালপুর, পৌষাপুকুরপাড়, সস্তাপুরনহ বিভিন্ন এলাকায়।
ওদিকে দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জে নাসিক ৩নং ওয়ার্ডের মুক্তিনগরে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি প্রার্থী রিপন সরকার মিষ্টি বিতরণ করেছেন। এ সময় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠে। একে অপরকে মিষ্টি খাইয়ে দেয়া ছাড়াও সাধারণ মানুষের মধ্যেও মিষ্টি বিতরণ করতে দেখতে দেখা যায়।
বিকেলে সিদ্ধিরগঞ্জে নাসিক ১নং ওয়ার্ড এলাকায় এ মিষ্টি বিতরণ করা হয়। মিষ্টি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ন আহবায়ক আক্তার হোসেন, নারায়ণগঞ্জ স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মোঃ আনোয়ার হোসেন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা জনি ইসলাম, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, ৭নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেব সেবকদল নেতা নুরুল ইসলাম খান, ৭নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা কাউসার আহমেদ রিপন, ১নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মোহাম্মদ আনিস দেওয়ানসহ বিভিন্ন নেতাকর্মীরা। এছাড়া ৬নং ওয়ার্ড ও ৭নং ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন এলাকায় মিস্টি বিতরণ করার খবর পাওয়া গেছে।
বিকালে ৮নং ওয়ার্ডে বিএনপি নেতা দেলোয়ার খোকনের নেতৃত্বে জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ মিছিল বের করা হয়। গোদনাইল ভাঙ্গারপুল ডিএনডির লেকপাড় থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে নারায়ণগঞ্জ-আদমজী-চিটাগাং রোড সড়কের প্রায় দুই কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে পাঠানটুলি গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
এসময় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির নেতা দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, দলের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। ফ্যাস্টিস আওয়ামী সরকারের আমলে মিথ্যা মামলায় জেল খেটেছি। হামলা-মামলার শিকার হয়েছি। ৫ আগস্টের পর গিয়াস উদ্দিনের ইন্দনে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যেতে হয়েছে।
আমি মনে করি গিয়াস উদ্দিন গংদের কাছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি নিরাপদ নয়। কারণ তিনি জাতীয় পাটি ও আওয়ামীলীগের রাজনীতি করে বিএনপিতে ঢুকেছেন। সরকার বিরোধী আন্দোলনের ১০ বছর তিনি নিস্ক্রীয় ছিলেন। পরে হঠাৎ সক্রীয় হয়ে জেলা বিএনপির সভাপতির পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। এই ধরনের সুবিধাবাদী নেতা দলের পরিক্ষিত নেতা হতে পারে না।
প্রসঙ্গত: মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। অতিসত্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র কমিটি ঘোষণা করা হবে।