নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন বলেছেন, যারা সন্ত্রাস, চাঁদাবাজির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবে, যারা মানুষের শান্তি নষ্ট করবে তাদের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই।
আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, আগামীর দেশনায়ক তারেক রহমান ইতোমধ্যে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে দিয়ে বলেছেন, বিএনপি হল ভালো মানুষের দল। এই দলে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজদের কোনো স্থান নেই। বিএনপি করতে হলে মানুষের সঙ্গে সংযোগ রাখতে হবে। মানুষ যাকে ভালো না বাসবে, তার ন্থান বিএনপিতে হবে না।
সুতরাং সাবধান হয়ে যান, অপকর্ম যারা করেন বা করার চেষ্টা করছেন সেদিক থেকে ফিরে এসে মানুষের জন্য কাজ করুন। মানুষকে ভালোবাসুন। মানুষের ভালেবাসা অর্জন করতে পারলে তবেই আপনি বিএনপি নেতা হবেন। অন্যথায় আপনি এই দলের কেউ নন।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকালে সিদ্ধিরগঞ্জের নাসিক ৩নং ওয়ার্ড বিএনপি আয়োজিত সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এ কথা বলেন।
শামীম ওসমানকে গডফাদার হিসেবে আখ্যায়িত করে গিয়াসউদ্দিন বলেন, ২০০১ সালে কর্মীদের রেখে রাতের আঁধারে বোরখা পরে পালিয়েছিলেন তিনি। ফিরে এসে সিংহের গর্জন দিয়ে মানুষকে ভয় দেখিয়ে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি রামরাজত্ব কায়েম করেছেন। ছাত্র যুবকের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন। বক্তব্যে বড় বড় কথা বলতেন। বিএনিপিকে পিষে মারার হুমকি দিতেন। তখন আমি বলে ছিলাম সে আবারও বোরকা পরে পালাবে। গডফাদার পালিয়েছে। তার কর্মী সমর্থকদের ফেলে রেখে ৫ আগস্ট সে পালিয়েছে।
তিনি বলেন, স্বৈরশাসকের অন্যতম দোসর শামীম ওসমান হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে বিদেশ পাচার করেছে। ষোল বছর ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারে ছত্রছায়ায় সে এই নারায়ণগঞ্জকে জিম্মি করে রেখেছিল।
গিয়াসউদ্দিন আরও বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ক্ষমতায় টিকে থাকতে পুলিশ দিয়ে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ছাত্র জনতার বুকের রক্ত ঝরিয়েছে। তারপরও স্বৈরশাসকের শেষ রক্ষা হয়নি। ঐতিহাসিক ৫ আগস্ট সে পালিয়ে গেলো। তার সঙ্গে সঙ্গে তার দোসররাও পালিয়ে গেল, আত্মগোপনে চলে গেল।
তিনি বলেন, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে এই আন্দোলন সংগ্রামের ফসল উঠেছে। স্বৈরশাসকের দোসরার এই আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য নানা রকম অপকৌশল চালাচ্ছে। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। কোনো অবস্থাতে ৫ আগস্টের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না।
গিয়াসউদ্দিন বলেন, দিনের ভোট রাতে সম্পন্ন করে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। বিচার ব্যবস্থা ধংস করে দিয়েছে। দুর্নীতি হয়েছে লাগামহীন। ব্যাংকগুলোকে তারা সমপূর্ণভাবে শেষ করে দিয়েছে। লুটপাট করে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। কথা বলার স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল। তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলেই পুলিশ দিয়ে গুলি ছুড়েছিল। দেশের সমগ্র প্রশাসনিক কাঠামো তারা ধংস করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, পুলিশ বাহিনীসহ সকল বাহিনীকে স্বৈরাচার হাসিনা সাধারণ মানুষের বিরদ্ধে নামিয়ে দিয়েছিল। রাষ্ট্রের মালিক জনগণের উপর রাষ্ট্রের কর্মচারি দিয়ে গুলি চালিয়েছে। এমন পরিন্থিাতিতে পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর শৃঙ্খলা নষ্ট করে দিয়েছে স্বৈরাচার হাসিনা। এ কারণে দেশের আইন শৃঙ্খলার অবনতি হলেও পুলিশ কোনো সাহায্য করতে পারছে না।
সাবেক এই এমপি আরও বলেন, আমাদের আন্দোলন শেষ হয়ে গেছে ভাবলে চলবে না। স্বৈরাচারের দোসররা দেশের শৃঙ্খলা নষ্ট করার জন্য ষড়যন্ত্র করছে। তাদের এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। বিচার ব্যবস্থাকে সুসংগঠিত করার দাবি জানিয়ে অন্তরবর্তীকালিন সরকারের প্রতি আহ্বান রাখেন তিনি।
গিয়াসউদ্দিন বলেন, স্থানীয়ভাবে এখানে স্বৈরশাসকের দোসররা ছিল। তারা ব্যাপক লুটপাট সন্ত্রাসী চালিয়েছে। এখানে আর কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হতে দেয়া হবে না। ন্যায় বিচারের স্বার্থে এলাকার ভালে মানুষদের একত্রিত করে বিচার কমিটি করে দিতে হবে।
নিজের নেতাকর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে তিনি আরও বলেন, ভালো মানুষক জায়গা করে না দিলে দেশ কখনই ভালো হবে না। আপনারা যা আমার কর্মী সমর্থক আছেন তারা যদি কেউ সমাজের ভালো মানুষকে হেয় করেন, অসম্মান করেন তাহলে সে যত বড় নেতাই হোন না কেন আমার সঙ্গে থাকতে পারবেন না। সন্ত্রাসী চাঁদাবাজি কেউ করলে আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিবেন, যত বড় নেতাই হোক আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সিদ্ধিরগঞ্জের ৩নং বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ তৈয়ব হোসেনের সভাপতিত্বে ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক এবং ৩নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারন সম্পাদক ডাঃ মাসুদ করিম এর সঞ্চালনায় উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক এম এ হালিম জুয়েল, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি মাজেদুল ইসলাম, সহ-সভাপতি আব্দুল আল মামুন, মোস্তফা কামাল, এস,এম, আসলাম, ডি এইচ বাবুল, সেলিম মাহমুদ, এ্যাড মাসুদুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, যুগ্ন-সম্পাদক আবুল হোসেন, জাহাঙ্গীর হোসেন স্বাধীন, কামরুল হাসান শরীফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আকবর হোসেন, অর্থ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ছাদু, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও ৩নং ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী জহিরুল ইসলাম, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি মন্টু মেম্বার, ৩নং ওর্য়াড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম ভূইয়া, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্র দলের সাবেক সভাপতি একে হিরা, সাধারন সম্পাদক সাহাদাৎ হেসেন রনি প্রুমখ।