নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগ নেত্রী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভি।
শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের দেওভোগে ১৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের কার্যালয়ে পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের এক বৈঠকে এ ঘোষণা দেন আইভি।
বৈঠকে আইভি বলেন,, বুঝলাম আপনি কমিটি করলেন মাত্র দুইটা নাম আমি মনে মনে চিন্তা করে রেখেছিলাম একটা বাদল মামার নাম একটা জব্বর মামার নাম। সে আমাকে দুইটা নামও দিতে দিলনা, একটাও না। বললো, এইদিকে তো সবই তোমার লোক, আবার কেন দিবা। আমি বললাম, কাকা আজকে আমার একটা লোক দিতে দিলেন না আপনে। তারপর আমি আর কথা বাড়াইনি।
আইভী বলেন, পৌরসভার সময় আমি সারাদিন পৌরসভা চালিয়েছি, পাশাপাশি সবার খোঁজ খবর রাখেছি, যে যখন গেছে। হয়তো পার্টি অফিসে কম আসছি কিন্তু সবার খোঁজ খবর রাখেছি। ২০০৯ সালে যখন শামীম ভাই দেশে আসলো তখন খোকন সাহা আমাদের ছেড়ে ওদিকে (শামীম ওসমানের দিকে) চলে গেল। জানতাম আমি এটা হবে। ওইসময় আওয়ামীলীগ যুবলীগ ছাত্রলীগ মহিলা আওয়ামীলীগ থেকে শুরু করে অনেকগুলো সংগঠনের অভিষেক অনুষ্ঠান ও কমিটি হয়েছে আমার উপস্থিতিতে। শহর আওয়ামীলীগের কমিটি যেদিন হয় চুনকা পাঠাগারে সাবের হোসেন চৌধুরী প্রধান অতিথি ছিল। সেখানে উনি বসে বলেছে, আপনি (আইভী) কার কথা বলেন? ওর উপরে ছাদ নাই, আমি বললাম, না আমি পৌরসভার চেয়ারম্যান হয়েছি, আনোয়ার কাকা এই পদ চেয়েছে আমি বৃহত্তর স্বার্থে কোন একটা ছেড়ে দেব।
১১ সালে যখন আমি নির্বাচন করলাম, আপনারা জানেন আমি কিভাবে নির্বাচন করলাম। নির্বাচনে পাশ করলাম। আমার সাথে নেত্রীর কি কথা হয়েছে গণভবনে আমি জানি। ২০১১ সালে পুরা বৃহত্তর দেওভোগ আমরা একসাথে। আমরা একসাথে নির্বাচন করসি।
করার পর উনি আগেই আমাকে শর্ত দিসিলো মহানগরে পদ চাইতে পারবা না। মহানগরের সভাপতি উনি আমার থেকে চাইয়া ইতোমধ্যে নিয়া নিলো। আল্লাহ যদি আমাকে কামিয়াব করে আমি না গেলাম। আপনি পার্টি করেন। যা কথা তাই কাজ। আমি যেই কথা যারে দেই আমার জীবন গেলেও আমি তা রাখার চেষ্টা করি। আমি অন্যায়ভাবে কারো সাথে কিছু করিনা।
২০০৩ থেকে গেল ২০১১। ২০১১ থেকে আজকে ২০২৪ পর্যন্ত উনারাই নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ২০১১ তে কমিটির হবার পর আমার নামটা পর্যন্ত তারা রাখে নাই কোথাও। রহমত উল্ল্যাহ ভাই এত কাছের লোক ছিল উনি যে মারা গেছে, আনোয়ার ভাইয়ের প্রচন্ড কাছের লোক ছিল। উনার নামটাও কেটে দিয়েছে, ওইদিন থেকে সে একটা প্রতিবাদ করতে পারে নাই।
রহমত উল্ল্যাহ ভাই দিনরাত ২৪ ঘন্টা উনার সাথে শ্রম দিয়েছে। আমি রহমত উল্ল্যাহ ভাইয়ের নাম দিয়েছি জেলা আওয়ামীলীগে। উনার সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা কোনদিন ছিলনা। কিন্তু আমার বিবেকে যখন লাগলো যে মানুষটা এত শ্রম সময় দেয়ার পরও তার নাম কেউ রাখে নাই তখন আমি রেখেছি।
আইভি বলেন, আমি যখন গণভবনে গিয়েছি নেত্রী একদিন আমাকে বলছে, তোমার নাম তো মহানগরে নাই। আমি বললাম, আমি একসাথে শামীম ভাইয়ের সাথে মারামারি হবে দরকার নাই নেত্রী আমাকে এখানে রাইখেন না। আপনি আমাকে যেখানে মন চায় সেখানে দিয়া দেন। পরবর্তীতে নেত্রী আমাকে জেলা আওয়ামীলীগে দিলেন।
কোনদিন দেখতে প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারীর সাথে ভাইস প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দেয়? আমি ভাইস প্রেসিডেন্ট হলাম হয়ে আমাদের কিছু লোককে আমি এখানে ডুকায় দিলাম। জাহাঙ্গীর, আদিনাথ বসু। আদিনাথ বসু এত ঘনিষ্ঠ আনোয়ার কাকার, নাম কেটে দিসে। উপজেলা পরিষদে আমি জানতাম উনি ফেল করবো তাও আমি কাদিরের পক্ষে গেলাম না। আমি চুপচাপ ছিলাম।
আমার নানী বাড়ি আমার মামারা এটা নিয়া অভিযোগ করসে। দেওভোগের কে কোনদিকে যাবে এটা তাদের ব্যাপার আমি তো চুপ ছিলাম। ৩ নাম্বার হইলো উনি। বাদল ভাইকে যদি দাঁড় না করাইতো তাহলে কাদির ভাই উপজেলা চেয়ারম্যান হইতো। আচ্ছা কাদির ভাইয়েরও ছিল ভুল ছিল সেগুলো পরের ব্যাপার।
এখন যেই লোকটাকে আমি বার বার ছাড় দিতাসি যেমন একটি আগে আমাকে আসাদ কাকায় বকা দিল, আমার উপর রাগ হয়ে গেল। আজও চিল্লাচিল্লি করলো আমি নাকি আমার কাকা ছাড়া কিছু বুঝিনা। একটা পদে আছেন উনি, অবশ্যই উনাকে আমি সহযোগিতা করার চেষ্টা করি। ভুলে যান কেন ২০১৬ সালে উনি তো আমার বিপরীতেই প্রার্থী হয়েছিল। সবকিছু করসে। আমি তো মনে রাখিনা।
আমি তো দেওভোগের সবকিছু আওয়ামীলীগের বৃহত্তর স্বার্থে ছাড় দেই। আমি কোনদিনও এখানে এসে মাতবরি করিনা। আমার সাথে আপনাদের দেখা সাক্ষাৎ হয়, আপনারা আমার জন্য কাজ করেন কিন্তু আমি কখনো দল নিয়া মাতামাতি করি নাই। এই গ্রুপিংয়ের ভয়ে আমি কখনো উনার বিপক্ষে এত লোকজন বলার পরও যাই নাই।
ভেবেছি যা করতাসে করুক, উনি তো আমাদেরই কাকা আমাদেরই লোক। ২০১৬ সালে উনি আমার বিরুদ্ধে গিয়ে আরেক যায়গায় গিয়া আমাদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিল, আবার ঐখান থেকে যখন আসলো উনার পক্ষেই থাকলাম। এখন পর্যন্ত উনার পক্ষেই থাকলাম যখন যা বলে। ২০২২ সালেও আমার সাথে নির্বাচন করলো যেভাবে বলে সেভাবেই।
এই যে ২৭ টা ওয়ার্ডে এই কমিটি করতে গেল একবারের জন্য বা একদিনের জন্য আমাকে একটা যায়গায় দাওয়াত করে নাই কিংবা বলে নাই। আমি তাকে একাধিকবার বলেছি, কোথায় কি করছেন অন্তত আমার সাথে কথা বলে নিয়েন। একটা ওয়ার্ডেও আমাকে দাওয়াত দেয় নাই। আমি এই পর্যন্ত তার পাশে আছি দেখে সে আওয়ামীলীগ পার্টি অফিসে বসতে পারে।
আমি যদি না থাকতাম আরাফাতরা বহু আগেই তাকে সাইজ করে দিত। সাগর তো তার কাছের লোক, সারাদিন তার চামচামি করে। আসাদ কাকা তার বন্ধু, এখানে বহু মানুষ আছে তার কাছের লোক। প্রত্যেকটা লোকরে আমার বিরুদ্ধে ভুল বুঝাইসে সব সময়। যাই করসে কখনো বলিনাই, বলতাম না। আজ ২১ বছর পর আমাকে কথাগুলো বলতে হলো।
এই দেওভোগ নারায়ণগঞ্জকে নেতৃত্ব দিয়েছে। দেওভোগের কত মানুষ আওয়ামীলীগের ৬২, ৬৬, ৫২, ৭১ এর আন্দোলনে কাজ করেছে। কিন্তু দেওভোগের কতিপয় মানুষ আমাদের এই নেতাদের নাম বিলুপ্ত করে এখন নারায়ণগঞ্জের ধারক বাহক হয়ে যাচ্ছে।
আইভি বলেন, মনের দুঃখ মনের মধ্যে রেখেছেন কেন এত? আপনাদের তো আমাকে আগে ডাকা উচিৎ ছিল। আমি রাজনীতি করি আমাকে অনেক কাজ করতে হয়। এই ওয়ার্ডে এপন ও চঞ্চলের বিরুদ্ধে কিছু বলবোনা, ওরা ছোটভাই অবশ্যই ওরা নেতা হবার যোগ্যতা রাখে। কিন্তু এই আওয়ামীলীগের এটা কি লজ্জাজনক ঘটনা।
এই আনোয়ার কাকা তার প্রতিহিংসাপরায়ন মনোভাব নিয়া মনোয়ার সজলকে ঘায়েল করার জন্য, দেওভোগ আওয়ামীলীগকে বুঝানোর জন্য যে আমি যারে চাই সেই হইতে পারে, এই কারণে তিনি এই দুইটা নাম ঘোষণা কইরা আমাদের সকলে অসম্মানিত করসে।
যারা এই দেওভোগকে এইভাবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে আমাদের সেই পূর্বপুরুষকে অসম্মানিত করসে। উনাকে (আনোয়ার) আমি আজকে এখানে দাঁড়িয়ে দেওভোগের মানুষ হিসেবে অবাঞ্চিত ঘোষণা করলাম।
এই মর্গ্যান স্কুলেও উনাকে আমি সভাপতি করসি। এটাও বাদ দেন। যদি খোকন সাহা এবং আনোয়ার সাহেব তারা আমার হাতে গড়া। যদি উনি মুসলমানের সন্তান হয়ে থাকে আনোয়ার কাকা উনি বলুক উনাকে প্রেসিডেন্ট কিভাবে বানানো হয়েছে। যদি খোকন সাহা উনি ধর্মে বিশ্বাস করে থাকে যেই ধর্মেরই হয়ে থাকে যদি উনার ভিতরে মানবতা থেকে থাকে উনি দাঁড়াইয়া বলুক।
তিনি আরো বলেন, এই কমিটি মানবোনা, যদি আনোয়ার মিয়ার আর খোকন সাহার কমিটির ২০০৩ থেকে আজকে পর্যন্ত চলতে পারে তাহলে এখানেও বর্তমান যে কমিটি আছে সেটাই চলবে। যে কয়জন মারা গেছে আপনারা বৈঠক করে ঠিক করে নেবেন, দায় দায়িত্ব আমি বুঝবো।
যারা হইসে ওই দুজনের প্রতি সম্মান রেখে বলতে চাই এই আওয়ামীলীগ অফিসে আইসা কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা করলে...। অফিসে আসবে বসবে কিন্তু কোন ধরনের বেয়াদবি না... চলবেনা। যদি কমিটি নিয়ে কোন বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করা হয় সেটাও হতে দিবনা।
যদি আমাদের রফিক ভাই কোন কারণে দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করে তাহলে বর্তমান যে যুগ্ম সম্পাদক উনি দায়িত্ব পালন করবে। আমি অবশ্যই সাংগঠনিক সম্পাদক আমাদের কেন্দ্রের মির্জা আজম ভাইয়ের সাথে কথা বলবো। আপনারা যেভাবে বললাম যেভাবে করবেন। এটা পাল্টা কমিটি ঘোষণা করা হলো। মানে যা ছিল তাই থাকবে।
২৭ টা ওয়ার্ডের মধ্যে ১৭ টা ওয়ার্ড ঘোষণা করা হয়েছে। অনেক স্থানেই অসন্তোষ আছে। সিদ্ধিরগঞ্জের ৯ টা ওয়ার্ড কেন করে নাই? যেতে পারে নাই কারণ আমাদের আমাদের মাননীয় সংসদ সদস্য শামীম ভাই বলেছেন এটা আমার আসন আমার নির্বাচনী এলাকা সেখানে তোমরা যাবানা আমি যেভাবে কমিটি করি সেভাবে হবে।
এখন আমার আনোয়ার কাকার আর শ্রদ্ধেয় খোকন সাহার কাছে প্রশ্ন উনারটা যদি নির্বাচনী এলাকা হয়ে থাকে তাহলে ২৭ টা ওয়ার্ডেই আমার নির্বাচনী এলাকা। কোন সাহসে কোন অধিকারে আমাকে না জিজ্ঞাসা করে আপনারা এই ১৭ টা ওয়ার্ডের কমিটি দিলেন। আমি এই ১৭ টা ওয়ার্ডের পাল্টা কমিটি দিব। যদি ওই ১৭ টা ওয়ার্ডের লোকজন যোগাযোগ করে আমি অবশ্যই তাদের পাশে দাঁড়াব।
নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের দাফন রচনা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সুপরিকল্পিত ভাবে আনোয়ার সাহেব খোকন সাহা তাদের নিজেদের পকেটের লোক দিয়ে আওয়ামীলীগকে সুপরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করছে। উনি (আনোয়ার) নিজে কারো সাথে মিশেনা, কারো সাথে কথা বলেনা। দল কিভাবে গোছাতে হয় উনি জানেনা। না গুছিয়ে উনিও যাকে যাকে দিয়েছে এরাও পকেট লোক।
১৫ নং ওয়ার্ডে দীর্ঘদিন ধরে কাজী সাহেব নেতৃত্ব দিয়েছে। তার নামও রাখে নাই অথচ ১২ নং ওয়ার্ডের লোক এনে ১৫ নং ওয়ার্ডের সভাপতি দিয়েছে। এটা কি ছেলে খেলা! দল কি আনোয়ার সাহেব আর খোকন সাহার বাবার সম্পত্তি? আওয়ামীলীগ বঙ্গবন্ধুর দল, শেখ হাসিনার দল। আমাদের কর্মী বান্ধব দলের আমি শেখ হাসিনার একজন ক্ষুদ্র কর্মী। আমি বাংলাদেশে আসছি ২০০৩ সালে।’
২০০৩ থেকে ২০২৪ পযন্ত দলের কোন বিষয় নিয়ে কথা বলি নাই আজ বাধ্য হইসি। এখন থেক শুরু করলাম দলের ভেতর কোন অনিয়ম চলবেনা। ২৭ টা ওয়ার্ডেই আমার নির্বাচনী এলাকা। শামীম ভাই যদি তার ৯ টা নির্বাচনী এলাকায় নির্ধারন করে দিতে পারে তাহলে বাকি ১৮ টা ওয়ার্ডেও আমার মতামত নিয়ে করতে হবে।
আমি আর শামীম ভাইয়ের মত বলতে পারবোনা, যে আমার একক এলাকা এটা আমি বলতে পারবোনা এটা শামীম ভাই বলতে পারে, আমি বলবো আমার মতামত নিয়ে যদি না করে তাহলে আমি পাল্টা কমিটি দেব।
মেয়র আইভি বলেন, জেলা কিংবা মহানগর আওয়ামীলীগ, সবাই মনে এটা এটা তার সম্পত্তি। এতটুকু কেউ ছাড় দিতে চায়না, মনটাকে বড় করতে চায়না। মাঝে মাঝে নেতাকর্মীদের নিয়ে বসতে হয়, কথা বলতে হয়।
এদিকে বৈঠকের পরেই ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী সাব্বির আহমেদ সাগরের নেতৃত্বে পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা সন্ধ্যা ৭টার দিকে মহানগর আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে এসে তালা লাগিয়ে দেন।
এ সময় তারা ঘোষিত ওয়ার্ড কমিটি ভুয়া ও সেখানে যোগ্যদের বঞ্চিত করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়। পরে নেতা-কর্মীরা মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে মহানগর আওয়ামী লীগের ১৭টি ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণা করা হয়। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা মহানগর আওয়ামী লীগের ১১ থেকে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণা করেছেন।