নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

মঙ্গলবার,

০১ এপ্রিল ২০২৫

সোনারগায়ের জামপুর, সনমান্দি ও মোগরাপাড়ায় প্রশাসক নিয়োগের দাবি

সোনারগাঁয়ে বিএনপি নেতাদের সহযোগীতায় প্যানেল চেয়ারম্যান আ.লীগ নেতারা

নারায়ণগঞ্জ টাইমস:

প্রকাশিত:১৫:৩২, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সোনারগাঁয়ে বিএনপি নেতাদের সহযোগীতায় প্যানেল চেয়ারম্যান আ.লীগ নেতারা

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সারাদেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জেও ভোল পাল্টে বিএনপি নেতা বনে গেছে আওয়ামীলীগের অনেকে। অনৈতিক ও আর্থিক সুবিধা নিয়ে এদেরকে দলে ভিড়াতে সহযোগীতা করার অভিযোগ উঠছে খোদ বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এমন ঘটনাই ঘটছে সোনারগাঁ উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়নে। চেয়ারম্যানরা পলাতক থাকায় অনৈতিক সুবিধা নিয়ে এসব ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের মেম্বারদেরকে প্যানেল চেয়ারম্যান বানানোর অভিযোগ উঠেছে সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান ও তার অনুসারী বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এসব ইউনিয়নে প্রশাসক নিয়োগের দাবি জানিয়েছে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মী ও স্থানীয় সাধারণ জনগন।

স্থানীয়রা জানায়, বিভিন্ন ইউনিয়নে যারা প্যানেল চেয়ারম্যান হয়েছে এবং হতে চাইছে তারা প্রায় সবাই আওয়ামীলীগের বিভিন্ন পদধারী ও বিনা ভোটের নির্বাচনে নির্বাচিত মেম্বার। ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নানের বলয়ে রাজনীতি শুরু করে আওয়ামীলীগের ঐ নেতারা। শুধু তাই নয়, বিপুল পরিমান অর্থ নিয়ে সনমান্দি, জামপুর ও মোগরাপাড়া ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের তিন নেতাকে প্যানেল চেয়ারম্যান পদে আসীন করেছে আজহারুল ইসলাম মান্নান, এমন অভিযোগও করেন স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে দলটির তৃণমূল কর্মীরা বলছে, বিগত ১৭ বছর আওয়ামীলীগের অত্যাচার-নির্যাতনের কারণে ও পুলিশি হামলা-মামলায় বাড়ি-ঘরে থাকতে পারিনি। দীর্ঘদিন বঞ্চিত ছিলাম আমরা। এখন আওয়ামীলীগের পতনের পর শক্তিশালী দল গঠনের মাধ্যমে সরকার গঠনের সুযোগ হাতছানি দিচ্ছে আমাদের হাতে। কিন্তু দলকে শক্তিশালী না করে, উল্টো আওয়ামীলীগের দোসর ও দালালদের শেল্টার দিয়ে সমগ্র সোনারগায়ে বিএনপি বানাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে আজহারুল ইসলাম মান্নান।

এরই অংশ হিসেবে সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মাহফুজুর রহমান কালামের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত জামপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার কামরুজ্জামান কামরুলকে জামপুর ইউনিয়নে, সনমান্দি ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ওয়ার্ডের মেম্বার নুরুল হক টিক্কাকে সনমান্দি ইউনিয়নে এবং হাজী নুরুল আলম মেম্বারকে মোগরাপাড়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান বানিয়েছেন আহজারুল ইসলাম মান্নান।

সর্বশেষ, বুধবার সনমান্দি ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যানের জন্য ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মেম্বার নুরুল হক টিক্কা খান এরফে টিকা কসাইয়ের নাম প্রস্তাব করা হয়। তিনি এর আগে ভোট ছাড়াই মেম্বার হিসেবে নির্বাচিত হন। পলাতক চেয়ারম্যান জাহিদ হাসান জিন্নাহ ও তার বড় ভাই আওয়ামী লীগের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক এসএম জাহাঙ্গীরের আশীবাদ পুষ্ট ছিলেন টিক্কা খান। সনমান্দি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই নুরুল হক টিকা মেম্বার ওরফে টিক্কা কসাই গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির ছত্রছায়ায় নিজের দাপট ও আধিপতা এতোটাই প্রভাব বিস্তার করেছে যে, তার ওয়ার্ডে তার সাথে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার দুঃসাহস দেখাতে পারে নাই। সনমান্দী ইউনিয়নে তার সন্ত্রাসী সাম্রাজ্যের ভয়ে তটস্থ থাকতো সবাই। গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নিজের খোলস বদলান নুরুল হক টিকা। মোটা অংকের অর্থ লেনদেনে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের হাত করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। সনমান্দী ইউনিয়ন এর প্রতিটি ওয়ার্ডের মেম্বারদের কাউকে টাকা দিয়ে, আবার কাউকে হামলা মামলার ভয় দেখিয়ে তাদের থেকে জোরপূর্বক সমর্থন নিয়ে প্যানেল চেয়ারম্যান হতে যাচ্ছেন তিনি। একই অভিযোগ রয়েছে উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের বিরুদ্ধে। বিএনপির নেতারা ক্ষোত প্রকাশ করে বলেছেন, ছাত্র-জনতার আত্মদানের মধ্য দিয়ে একটি নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি আমরা। কিন্তু এখনো যদি সেই পতিত স্বৈরাচারের দোসররাই চেয়ারম্যান হন তাহলে আগের চেয়ারম্যানরা কী দোষ করেছিল জনগণের মুক্তি মিলবে কী করে।

একইসাথে, মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের হাজী নুরুল আলম মেম্বারকে মোগরাপাড়ার প্যানেল চেয়ারম্যান বানানো হয়েছে। তার সম্পর্কে স্থানীয়রা জানায়, তিনি  একজন বালু খেকো। সাবেক সাংসদ কায়সারের ছত্রছায়ায় দীর্ঘদীন ধরে অসহায় কৃষক এর জমিতে জোর পূর্বক বালু ভরাট করে নাম মাত্র মূল্য লিখে নেওয়ার বহু অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনি ইজারা ছাড়াই লাঙল বন্দ ব্রীজ সংলগ্ন ব্রক্ষপুত্র নদ থেকে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু তুলে বিক্রি করছেন দির্ঘদীন ধরে। এছাড়া ইট তৈরি করার জন্য কৃষকের ফসলী জমি থেকে জোরপূর্বক মাটি কেটে নিজের মালিকানাধীন তিনটি ইট ভাটায় আনেন। কৃষক বাধা প্রদান করলে তার সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে ভয় ভীতি প্রদর্শন ও মারধর করেন।

এছাড়া, মোঃ কামরুজ্জামান কামরুল মেম্বারকেও জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের একইভাবে প্যানেল চেয়ারম্যান বানানোর অভিযোগ উঠেছে। তার সম্পর্কে স্থানীয়রা বলেন, ভেন্ডার কামরুল বললে এক নামেই সোনারগাঁবাসী চিনে তাঁকে। সে জামপুর ইউনিয়ন এর ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বার। জাল দলীল করে একজনের সম্পদ অন্যজনকে লিখে দেওয়া শুধু তার পেশা নয়, নেশাতে পরিনত হয়েছে। তিনি নিজেও ভূয়া দাল জলিল ও জালীয়াতের মাধ্যমে অনেকের সম্পদ নিজের নামে করে নিয়েছেন। সে ৬ টি বহুতল বাড়ীর মালিক। সাদিপুর এর নয়াপুড়ে ২ টি, মিরেরটেক এ ১ টি ও ঢাকায় ৩ টি বাড়ির মালিক হয়েছেন তিনি। তাছাড়া শত শত বিঘা সম্পদের মালিক হয়েছেন জাল জালিয়াতির মাধ্যমে। তাছাড়া এলাকায় বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেছেন। বিচার শালীসের মাধ্যমে মানুষের জমি প্যাচ লাগিয়ে নাম মাত্র মূল্য কিনে নেন তিনি। সাবেক এমপি আবদুল্লাহ আল কায়সার এর ছত্রছায়ায় মাদক ব্যবসা, ভূমিদস্যুতা, বিচার শালিসি, ভূয়া দলিল সহ নানাবিধ অপকর্মে ব্যপকভাবে জড়িয়ে পড়েছেন কামরুজ্জামান কামরুল মেম্বার। গত ৫ ই আগস্ট স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের পর কামরুল মেম্বার এর অপরাধের রাজত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান ও উপজেলা পরিষদ এর সাবেক চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান কালাম এর বন্ধু উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন ও তার পিএস এবং মান্নানের পিএসকে  টাকা দিয়ে প্যানেল চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য আদা জল খেয়ে মাঠে নামেন। প্রতিটি মেম্বাকে ৩ লাখ টাকা করে দিয়ে প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

এব্যাপারে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, যা ঘটতেছে তা খুবই লজ্জাজনক। দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে একটি স্বার্থান্বেষী চক্র। মোটা অংকের টাকা লেনদেনের যেমন অভিযোগ পাচ্ছি তেমনি জোরপূর্বক মেম্বারদের থেকে সই আদায় করা। হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাচ্ছি। সরকারকে বলবো তারা যেন যাচাই-বাছাই করে এ সকল পদে নিয়োগ দেয়।

জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি অধ্যাপক ইমতিয়াজ বকুল বলেন, এটাও একটা ফ্যাসিস্ট আচরণ। যারা আগেই ভোট ছাড়া নির্বাচিত হয়েছিল। এখনো টাকার বিনিময়ে তারাই যদি নির্বাচিত হয় তাহলে জনগণের চাওয়ার কী মূল্য থাকে? এটা খুবই নিন্দনীয় ব্যাপার। দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ যদি অপকর্ম করে তাদের বিষয়ে আমরা হাইকমান্ডকে জানাবো।

প্যানেল চেয়ারম্যান হতে অর্থ লেনদেনের বিষয়ে অস্বীকার করে অভিযুক্ত নুরুল হক টিক্কা খান বলেন, আমি নিজে হাতে কাউকে কোন টাকা দিইনি। আমার হয়ে অন্য কেউ দিতে পারে। আমি আগেও প্যানেল চেয়ারম্যান ছিলাম এখনো সবার সম্মতি নিয়ে প্যানেল চেয়ারম্যান হতে যাচ্ছি।

এ ব‍্যাপারে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান হলেন, স্থানীয় বিএনপি নেতা কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেই ইউএনও'র কাছে প্যানেল চেয়ারম্যানের জন্য নাম প্রস্তাব করেছি। তাছাড়া এই সকন ইউনিয়নে চেয়ারম্যান করার মতো বিএনপিতে আগ্রহী কাউকে পাওয়া দিয়েছে তার নামই প্রস্তাব করা হয়েছে। যায়নি। যাদেরকে যোগ্য পাওয়া গেছে এবং সবাই যার ব্যাপারে সম্মতি

এ ব্যাপারে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা বলেন, সাধারণত প্রত্যেকটি ইউনিয়নেই আগেই প্যানেল নির্বাচন হয়ে থাকে। চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে দেই প্যানেল থেকেই একজন দায়িত্ব পালন করবে। তবে তাদের ব্যাপারে যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের আপত্তি থাকে তাহলে সকলের মতামতের ভিত্তিতে নতুন একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেই ভিত্তিতে আমরা স্থানীয় সরক সরকার মন্ত্রণালয়ে নাম প্রস্তাব করেছি।

সম্পর্কিত বিষয়: