নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী চরসুমিলপাড়ায় ওরিয়ন ফার্মা সিটিক্যালস লিমিটেডে বেবতন-ভাতা বৃষ্ধির দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ মহানগর শ্রমিক দলের আহবায়ক ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সহ-সভাপতি আসলাম মন্ডলের কর্মী সমর্থকদের সাথে ব্যাপক ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। তাৎক্ষণিকভাবে আহতদের নাম-পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।
বুধবার (২০ নভেম্বর) নাসিক ৬ নং ওয়ার্ডে ওরিয়ন কারখানার প্রবেশ গেটের সামনে সন্ধ্যার পর এই ঘটনা ঘটে। এরআগে সকাল ১১টা থেকে আন্দোলন করছিল শ্রমিকরা।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানায়, ওরিয়ন কারখানায় শ্রমিকদের বর্তমানে বেতন দিন প্রতি ৩২৫ টাকা করে দেয়া হচ্ছে। যা তাদের জন্যে কম হয়ে যায়। এজন্য তারা বেতন বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করার দাবি জানিয়ে আসছেন দীর্ঘ ৩ মাস ধরে। তবে কোম্পানির কর্মকর্তারা বেতন বাড়ানোর আশ্বাস দিলেও সমাধান না করায় আজ বুধবার আন্দোলনে নামে তারা। শ্রমিকদের দাবি অনুযায়ী কোম্পানি বেতন ৫০০ টাকা না করলেও ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৩৭৫ করবে বলে জানান। তবে শ্রমিকরা তাতে সন্তুষ্ট নয়।
যদিও আগে শ্রমিকদের বেতন ৩৭৫ টাকা ছিল। কিন্তু কোম্পানির খারাপ সময় শুরু হলে ৫০ টাকা কমিয়ে ৩২৫ টাকা করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, শ্রমিকদের আন্দোলন চলাকালীন সময়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সহসভাপতি এসএম আসলাম সেখানে গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করে। একপর্যায়ে আসলামকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানার ভেতর গাড়ীসহ আটকে দেন। শ্রমিকদের অভিযোগ, বিএনপি নেতা আসলাম তাদের মালিকের সাথে কথা বলে বেতন বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু ৩ মাসেরও তা করেননি। তাই তারা আসলামকে অবরুদ্ধ করেছেন।
এদিকে আসলামকে আটকে রাখার খবরে তার লোকজন লাঠি শোঠা নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে দু'পক্ষের মধ্যে আধা ঘন্টা ব্যাপী ব্যাপক ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। কারখানার গেট ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে ভেতরে ঢুকে ধাওয়া দিয়ে মারধর করা হয় শ্রমিকদের। খবর পেয়ে পুলিশ ও র্যাব ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
কারখানাটির এক নারী শ্রমিক জানান, তাঁদের বেতন বৃদ্ধির লক্ষ্যে দীর্ঘ তিনমাসের বেশি সময় যাবত তারা কোম্পানিকে জানিয়ে আসছে। মাসিক হিসেবে বেতন দেওয়া হলেও। দিন হিসেবে বর্তমানে তারা বেতন পান প্রতিদিন ৩২৫ টাকা করে। তাদের দাবি তা বাড়িয়ে ৫০০ করা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ তিনমাস যাবত তাদের অপেক্ষা করাচ্ছেন। আজ দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করাকালীন সময়ে বিএনপি নেতা আসলাম নামের একজন বাঁধা দেন। একপর্যায়ে শ্রমিকদের উপর হামলাও করা হয়।
আব্দুল্লাহ নামের এক শ্রমিক বলেন, আমাদের বেতন বৃদ্ধি করা হোক না হয় আমাদেরকে তিন মাসের অগ্রিম বেতন দিয়ে এবং আমাদের বর্তমান বেতন ও বোনাস সব দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হোক। আমরা যে পরিশ্রম করি তা এই বেতন কম হয়ে যায়।
এ বিষয়ে ওরিয়ন ফার্মা সিটিক্যালস লিমিটেড কোম্পানির সহকারী ম্যানেজার মুকিত খন্দকার জানান, শ্রমিকদের দাবি অনুযায়ী মালিকপক্ষের যা করনীয় তা করেছেন। শ্রমিকদের দিক ভেবে মালিকপক্ষ এগিয়ে এসেছে। শ্রমিকদের জন্য সর্বোচ্চটা করেছেন মালিক। দু'পক্ষই বিষয়টি বুঝা লাগবে। মালিক হয়তো চাইলেই অনেক টাকা খরচ করতে পারে কিন্তু সেটাও নিজের লিমিটের মধ্য দিয়ে। তারা যে দাবি করছে সেটা অসম্ভবের মতোই।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সহ-সভাপতি এসএম আসলাম জানান, আমি মূলত শ্রমিকদের পক্ষ নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলাম। কিন্তু বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ভুল বুঝে আমাকে দুপুর থেকে আটক রেখে সমাধানের কথা বলে। তাদের দাবি ছিল বেতন প্রতিদিন ৪০০ করে করা কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ ৩২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৫০ টাকা করায়ও তারা মানেনি। কর্তৃপক্ষের নিয়ম অনুযায়ী এই বেতন দিয়ে থাকে। কিন্তু শ্রমিকরা তা না মেনে বিক্ষোভ করে।
শ্রমিকদের দাবি বেতন ৪০০ নয় ৫০০ টাকা করতে হবে। তাদের অভিযোগ আপনি আপনার লোকজন দিয়ে হামলা করিয়েছেন এবিষয়ে তিনি বলেন, এরা প্রথমে ৪০০ বলেছিল একেক সময়ে একেকটা বলে তারা। আর ওদের পক্ষেই সেখানে গিয়েছিলাম, হামলা কেন করাবো? এটা মিথ্যা। আমি পক্ষে গিয়ে উল্টো আমার নামে বদনাম হচ্ছে।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন বলেন, আমরা ঘটনাস্থলেই আছি। শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলছি। পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে। বাকিটা পরবর্তীতে বলা যাবে।