![সিদ্ধিরগঞ্জে যুবলীগ অফিসে টেনশন বাহিনীর হামলা, ৮ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি অভিযোগ সিদ্ধিরগঞ্জে যুবলীগ অফিসে টেনশন বাহিনীর হামলা, ৮ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি অভিযোগ](https://www.narayanganjtimes.com/media/imgAll/2021May/শফিকুল-সারিব-সীমান্ত-টেনশন-গ্রুপ-2406242214.jpg)
সিদ্ধিরগঞ্জে ২নং ওয়ার্ডে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী বাহিনী ‘টেনশন গ্রুপ’ কর্তৃক যুবলীগের অফিসে হামলা, ভাংচুর মারধরের ঘটনায় আহতরা বাদী হয়ে পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন থানায়। অভিযোগে ৮ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ১০/১২ জনকে বিবাদী করা হয়েছে। বিবাদীরা হলো- সীমান্ত (২৭), মইন (২৬), জামাল (২১), অন্তর (১৯), মিলন (২০), শরিফ ওরফে সারিব (১৮), সুজন ফকির (২২) ও শফিকুল ইসলাম (৫০)। শফিকুল ইসলাম হচ্ছে কিশোরগ্যাংয়ের পৃষ্ঠপোষক। তার নেতৃত্বে মিজমিজি এলাকায় তিনটি কিশোরগ্যাং বাহিনী গড়ে ওঠেছে।
এদিকে ঘটনার পর রোববার রাতে অভিযোগ দেয়া হলেও রহস্যজনক কারণে মামলা হিসেবে তা নথিভুক্ত করছে না সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে ভুক্তভোগীসহ দলীয় লোকজনের মধ্যে। পাশাপাশি পুলিশের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন, যেখানে ক্ষমতাসীন দলের কার্যালয়ে হামলা করে দুইজনকে মারধর করার পরও পুলিশ মামলা নিচ্ছে না সেখানে সাধারণ মানুষের উপর হামলা হলে তারা যাবে কোথায়? এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন।
রোববার (২৩ জুন) সন্ধ্যার পর টেনশন গ্রুপের লিডার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারী রাইসুল ইসলাম সীমান্তের নেতৃত্বে এই হামলা ও ভাংচুর করা হয়। এসময় যুবলীগ নেতা ইয়াসিন আরাফাত রাসেল ও যুব মহিলা লীগ নেত্রী ফাতেমাকে মারধর করে। এক পর্যায়ে শ্লীলতাহানী করা হয় যুব মহিলা লীগ নেত্রী ফাতেমার ।
আহত রাসেল জানান, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা পরিচয়দানকারী শফিকুল ইসলাম শফির ছেলে টেনশন গ্রুপের লিডার রাইসুল ইসলাম সীমান্ত, মিজমিজি এলাকার টুলুর ছেলে মইন, কাশেমের ছেলে মুন্না, মজিবুরের ছেলে আলামিন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আকষ্মিক হামলা চালিয়ে অফিস ভাংচুর করে। এ সময় আমাদের মারধর করে টেবিলের ড্রয়ার থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল নিয়ে যায়। এ ঘটনায় আমি একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
নারী নেত্রী ফাতেমা জানান তাকে মারধর করে পরনের কাপড় ছিড়ে ফেলে ও শ্লীলতাহানী করে কিশোরগ্যাং টেনশন গ্রুপের লিডার সীমান্ত। এ ঘটনায় তিনি আইনগত ব্যবস্থা নিতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এদিকে রোববার রাতে পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হলেও সোমবার (২৪ জুন) রাত ৮টা পর্যন্ত পুলিশ তা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করেনি।
যুবলীগ নেতা রাসেল তার লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, আসামীরা সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক। তারা সংঘবদ্ধভাবে এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সহ চাঁদাবাজী, ছিনতাই ও বিভিন্ন ধরণের আইন বিরোধী কর্মকান্ড করে জনমনে ত্রাস সৃষ্টি করে। সীমান্ত ‘টেনশন গ্রুপ’ ও শরিফ ওরফে সারিব ‘ডেভিল এক্স’ নামক দুটি সন্ত্রাসী দলের মূলহোতা হিসাবে এলাকায় ব্যাপক পরিচিত। রোববার (২৩ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন মিজমিজি পশ্চিমপাড়া খালপাড় যুবলীগের দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে উল্লিখিত ১ থেকে ৭নং আসামী ও অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জন প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস এবং বেশ কয়েকটি মটর সাইকেল যোগে দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, হকিস্টিক, লাঠি, লোহার রড, এসএস পাইপ নিয়ে উক্ত ২নং ওয়ার্ড যুবলীগের কার্যালয়ের ভেতর ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায়। কার্যালয়ে থাকা বিভিন্ন আসবাব পত্র, অফিস ডেকোরেশনের বিভিন্ন সরঞ্জাম, টিভি ও অন্যান্য জিনিসপত্র ভাংচুর করে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। এক পর্যায়ে সারিব অফিসে থাকা টেবিলের ড্রয়ার ভাংচুর করে ড্রয়ারে থাকা অফিসের খরচ বাবদ ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। এসময় বাধা দিতে গেলে আসামীরা রাসেলকে মারধর করে রক্তাক্ত জখম করে।
একপর্যায়ে সীমান্ত মহিলা যুবলীগ নেত্রী ফাতেমা আক্তারের মাথায় পিস্তল ধরে বলে শফিকুল ইসলাম শফিকের হুকুমে তাদের সাথে যেতে হবে। এবং রাসেল ও ফাতেমাকে টানাহেচড়া করতে থাকে। তাদের ডাক চিৎকারের আশাপাশের রোকজন এগিয়ে আসলে বিবাদীরা প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে পালিয়ে যায়।
একই অভিযোগ করে যুবমহিলালীগ নেত্রী ফাতেমা। তবে তিনি তার অভিযোগে তাকে মারধর ও শ্লীতহানীর অভিযোগ আনেন।
এদিকে লিখিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিককে ফোন দেয়া হলে তিনি একেকবার এক কথা বলেন। সবশেষ রাত ৯টা ৫২ মিনিটে ফোন ধরে বলেন তিনি মিটিংয়ে আছেন। এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন।
এলাকাবাসী জানায়, বহুঅপকর্মের হোতা হচ্ছে শফিকুল ইসলাম। সেভেন মাডারে নিহত নাসিকের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের ফাঁসি দাবি করে শফিকুল ইসলাম ও তার বাবা শহীদুল ইসলাম মাদনববন্ধন করেছে। এবং র্যাব ও পুলিশের বিভিন্ন দপ্তরে নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে। সেভেন মাডারে নজরুল নিহত হওয়ার পর তার বাহিনীর সকল আগ্নেয়াস্ত্র শফিকুল ইসলামের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সেই সকল অস্ত্র এখন টেনশন ও ডেভিল এক্স বাহিনী ব্যবহার করছে বলে জানান মিজমিজি এলাকার মানুষ। মোট কথা মিজমিজির সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে শফিকুল ইসলাম বাহিনীর কাছে।
আরও পড়ুন:সিদ্ধিরগঞ্জে যুবলীগ অফিসে টেনশন গ্রুপের লিডার সীমান্তের হামলা, নারী নেত্রীকে শ্লীলতাহানী