নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

মঙ্গলবার,

০১ এপ্রিল ২০২৫

রূপগঞ্জের আতঙ্ক শুটার রিয়াজ বাহিনী, গুলিবিদ্ধ পথচারীর মৃত্যু

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:০৫:২২, ৩০ মার্চ ২০২৫

রূপগঞ্জের আতঙ্ক শুটার রিয়াজ বাহিনী, গুলিবিদ্ধ পথচারীর মৃত্যু

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে দাবিকৃত চাঁদার টাকা না পেয়ে যুবদল নেতা শফিকুল ইসলামের বাড়িতে শুটার রিয়াজ ও তার বাহিনীর হামলার সময় করা গুলিতে আহত পথচারী জাফর আলী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেছেন। 

শনিবার রাতে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে শনিবার সন্ধ্যার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৯ দিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহত জাফর আলী পূর্ণ নাম ঠিকানা পাওয়া যায়নি। 

যুবদল নেতা শফিকুল ইসলাম শফিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রূপগঞ্জের চিহ্নিত সন্ত্রাসী শুটার রিয়াজ দীর্ঘদিন ধরে তার কাছে একটি গাড়ী কেনার জন্য ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। 

দাবি করা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে গত ১ লা মার্চ শনিবার রাত ৯ টার দিকে রিয়াজের নেতৃত্বে ১৫-২০ জন সন্ত্রাসী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তারাব পৌরসভার কর্ণগোপ এলাকায় শফিকুলের বাড়ি লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলিবর্ষণ করতে থাকে। এ সময় শফিকের বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় জাফর আলী নামে এক পথচারী গুলিবিদ্ধ হয়। 

পরে আহত জাফর আলীকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় শফিকুল ইসলাম শফিক বাদী হয়ে রিয়াজসহ তার বাহিনীর সদস্যদের আসামী করে মামলা দায়ের করে।

২৯ দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় শনিবার সন্ধ্যার দিকে জাফর আলীর মৃত্যু হয়। 

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, রূপগঞ্জের সাধারণ মানুষের জন্য শুটার রিয়াজ এক আতঙ্কের নাম। রিয়াজ চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে এমন কোন অপকর্ম নেই যে সে না করে। এসকল অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য রিয়াজের রয়েছে নিজস্ব বাহিনী।

আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন তাকে শেল্টার দিতো আওয়ামীলীগের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাকর্মীরা। গত ৫ আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর বিএনপির স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী নেতার শেল্টারে রিয়াজ ও তার বাহিনীর সদস্যরা আরো বেপরোয়া হয়ে পড়েছে। 

এদিকে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটিলিয়ন (র‌্যাব) সূত্রমতে, রিয়াজের নেতৃত্বে তার সন্ত্রাসী দল এলাকার বালু ভরাট ও মাটি কাটার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও ট্রাক প্রতি নির্ধারিত হারে চাঁদা নিয়ে থাকে। চাঁদা না দিলে ত্রাস সৃষ্টির জন্য হামলা, আক্রমণ ও আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার করে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছে।

নারায়ণগঞ্জ এলাকায় অবৈধভাবে জমি দখলের জন্য সে ভাড়ায় তার দল নিয়ে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত। এছাড়া বাড়ি বা বিল্ডিং করার সময় চাঁদা না দিলে গুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। ভুলতা এলাকায় বাসেও ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে তারা।

তাছাড়াও সে উঠতি বয়সের ছেলেদের কাছে অস্ত্র সরবরাহ করার মাধ্যমে তাদেরকে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে সম্পৃক্ত করেছে। এসব অপকর্মের কারণে আগেও তারা গ্রেপ্তার হয়। পরে জামিনে ছাড়া পেয়ে ফের একই ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এ চক্রের ১০ থেকে ১৫ জন সদস্য রয়েছে। 

শুটার রিয়াজ অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়ে তারই বড় ভাই আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী শওকতের হাত ধরে। তখন সে অষ্টম শ্রেণিতে পড়তো। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে শওকত নিহত হয়। এছাড়া তার আরেক ভাই রয়েছে মোহাম্মদ আলী। সে সন্ত্রাসী। পারিবারিকভাবেই সন্ত্রাসী গ্রুপ হিসেবে পরিচিত তারা। 

রিয়াজের কোনও রাজনৈতিক পরিচয় নেই। বিভিন্ন অপকর্মের জন্য সে ভাড়ায় বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে আসছিল। অস্ত্র কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে রিয়াজের বিরুদ্ধে। হত্যাচেষ্টা, মাদকসহ দেড় ডজনের ও বেশী মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী বলেন, কর্ণগোপ এলাকায় গুলিবর্ষণের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ জাফর আলী চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেন। এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের হবে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত শুটার রিয়াজকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।