যানজট নিরসন ও যাতায়াত সুবিধার্থে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভূলতায় নির্মাণ করা হয় দুটি ফ্লাইওভার। কিন্তু যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তার অভাবে ৩৫৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ফ্লাইওভার দুটির কাঙ্খিত সুফল মিলছে না। ফলে স্বস্তির চেয়ে দূর্ভোগে পরিণত হয়েছে ফ্লাইওভার দুটি।
এই ফ্লাইওভারের কিছু কিছু লাইট বিকল হয়ে যাওয়ায় ও সিসি ক্যামেরা না থাকায় অন্ধকার নামার সঙ্গে সঙ্গে অপরাধীদের নিরাপদ জোনে পরিণত হয় এই ভূলতা ফ্লাইওভার। ফ্লাইওভারে মাদক বেচা-কেনা হচ্ছে। ‘সুতার ফাঁদ’ পেতে ওমাটরসাইকেল চালকদের কাছ থেকে সর্বস্ব ছিনিয়ে নিচ্ছে ছিনতাইকারীরা।
ফ্লাইওভারটি বর্তমানে ছিনতাইকারী ও অপরাধীদের আখড়ায় পরিণত হয়ে উঠেছে। আর গভীর রাতে ফ্লাইওভারটি রীতিমতো ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে সন্ধ্যার পর কমে যায় যান চলাচল। যারা না জেনে গভীর রাতে ফ্লাইওভার দিয়ে যাতায়াত করে তাদের বিপদে পড়তে হয়।
এদিকে ফ্লাইওভারের নিচের জায়গা দখল করে অবৈধ দোকানপাট ও কাঁচাবাজার, কাপড়ের হাট, বিভিন্ন যানবাহনের পার্কিং, অটো-সিএনজি ও লেগুনা স্ট্যান্ড গড়ে তুলেছে চাঁদাবাজরা।
এতে ফ্লাইওভারের নিচে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও গাজীপুর-চট্টগ্রাম এশিয়ান হাইওয়ে সড়কটি সরু হয়ে যানবাহন চলাচলে ব্যাহত হয়ে সৃষ্টি হচ্ছে অসহনীয় যানজট। ফলে ৪ লেন বিশিষ্ট তৃতীয় তলা ফ্লাইওভারটি থাকা সত্বেও যানজটে পোহাতে হয় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ
এছাড়া ফ্লাইওভার দুটির পিলারের গোড়ায় গোড়ায় দিন-রাত ফেলা হচ্ছে ময়লা- আবর্জনা। এইগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার জন্য নেই কোনো নির্ধারিত লোকও। এই নোংরা ময়লা আবর্জনায় পরিবেশ হচ্ছে কলুষিত।
স্থানীয়রা জানান, ভূলতা ফ্লাইওভরে ছিনতাই, ডাকাতি ও যৌন হয়রানিসহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও ঘটে। রাতে তো আছেই দিনের বেলায়ও এখানে অনেক ছিনতাই হয়। অনেক উঁচু হওয়াতে উপরে কি হয় কিছুই দেখা যায় না। পুলিশের গাড়িও তেমন দেখা যায় না।
প্রথমে দিকে অনেক উৎসুক মানুষ ফ্লাইওভারে ঘুরাঘুরি করত। বিশেষ করে শুক্রবারে কিন্তু এখন মানুষ ভয়েই ফ্লাইওভারে উঠে না।
আব্দুলা জাব্বার নামে এক ট্রাক চালক জানান, আমি অনেক বছর ধরে গাড়ি চালাই। এই ফ্লাইওভার দিয়ে সাপ্তাহে দুই তিন বার যাতায়াত করি। ভূলতা ফ্লাইওভারটি দিয়ে গেলে তাড়াতাড়ি হয় কিন্তু অনেক ভয় লাগে।
এতো নিরিবিলি পরিবেশ আবার যাত্রীবাহী বাসও তেমন দেখা যায় না।
এছাড়া এখানে হোন্ডা থামানো যুবক দেখা যায় সবসময়। আর তারাই সুযোগ বুঝে ছিনতাই করে। এদিকে ফ্লাইওভারের নিচে দিয়ে গেলে পড়তে হয় যানজটে।
মুরগী নিয়ে নরসিংদী থেকে ঢাকাগামী মনির হোসেন নামে এক পিকআপ চালক জানান, ভাই আর কমু ছিনতাইকারীর ডরে ফ্লাইওভারের উপরে দিয়া যাই না নিচে দিয়া যাই। কিন্তু নিচের রাস্তার উপর কাঁচাবাজার, স্ট্যান্ড হওয়ায় দীর্ঘ সময় যানজটে পড়ে থাকতে হয়।
নাকে-মুখে হাত চেপে ফ্লাইওভারের নিচে দিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছে খাদিজা। খাদিজার কাছে জানতে চাইলে কেন নাকে মুখে হাত চেপে রাস্তা পারাপার হচ্ছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এমনিতেই নেই ফুটওভার ব্রিজ যেও দিয়েছে ফ্লাইওভার।
এই ফ্লাইওভারের গোড়ায় গোড়ায় দাঁড়াইয়া প্রস্রাব করছে এইগুলো চোখে দেখেন না। মার্কেটে যাওয়ার সময় এই প্রস্রাবের দূর্গন্ধে বমি আইসা পড়ছিলো তাই এখন নাকে মুখে হাত চেপে রাস্তা পার হয়েছি।