শীতলক্ষ্যা নদী দখল করে অবৈধ ভাবে চলছে আওয়ামী লীগ নেতার বালু ব্যবসা। নদী দখল ও শীতলক্ষ্যা নদীর ওয়াকওয়েসহ এলাকার রাস্তায় চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে চলছে বালুর এই ব্যবসা। বালুর গদি ও প্রতিনিয়ত বালুর ট্টাকের বালু ওড়ার কারণে চিটাগাংরোড-নারায়ণগঞ্জ সড়কে চলাচলকারীদের দূর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়।
আওয়ামীলীগ নেতা প্রভাবশালী হওয়ায় এ বালুর ব্যবসার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও রয়েছে নীরব। এতে ক্ষুব্দ এলাকাবাসী।
মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম পাড় থেকে শুরু করে একেবারে নদীর মধ্য অংশ পর্যন্ত ড্রেজারের ভাসমান ঘাট বসিয়ে ট্রলার দিয়ে দিনে-রাতে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
নদীর পশ্চিম পাড় থেকে ড্রেজারের ভাসমান মেশিন নদীর একেবারে মাঝ বরাবর বসানো হয়েছে। যার কারণে নদীতে ড্রেজার বসানো ওই অংশ দিয়ে ড্রেজারের পাইপের কারণে নৌযান চলাচল করতে পারছে না। এতে নদী সংকুচিত হয়ে পড়ায় যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে জেনেও উল্টো পথে নৌযানগুলো চলতে বাধ্য হচ্ছে।
ড্রেজারের কর্মরত শ্রমিক ও এলাকাবাসী জানায়, নদীর মধ্য অংশে এভাবে ড্রেজারের অবৈধ ভাসমান ঘাট বসিয়ে বালুর ব্যবসা করছেন জনৈক তাজিম বাবু। তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাতখুন মামলার মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামী নূর হোসেনের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা। তিনি প্রভাবশালী হওয়ায় তার বালু ব্যবসার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।
সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) অনুমোদন না নিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এভাবে নদীর মধ্য অংশ দখল করে ড্রেজার বসিয়ে তিনি ডেমরা-নারায়ণগঞ্জ সড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের রংধনু সিনেমা হলের পাশে গদী বসিয়ে দীর্ঘদিন যাবত এ বালুর ব্যবসা চালাচ্ছেন।
তার এসকল দৃশ্যমান অবৈধ দখলদারত্বের বিরূদ্ধে অদৃশ্যমান কারণে কোনো প্রকারের পদক্ষেপ নিচ্ছে না বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। ড্রেজার ও বালুর গদির লোকজন এলাকায় প্রচার করছেন বিআইডব্লিউটিএর লোকজনকে ম্যানেজ করেই তারা ব্যবসা করছেন।
এদিকে এলাকাবাসী জানায়, আওয়ামী লীগ নেতা তাজিম বাবু গত কয়েক বছর যাবত শীতলক্ষ্যায় ভাসমান ড্রেজার বসিয়ে বাল্কহেড থেকে বালু পাইপের মাধ্যমে রংধনু সিনেমা হলের পাশে বালুর গদিতে আনে। সেই বালু ট্রাক দিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ, ডেমরাসহ আাশেপাশের এলাকায় বিক্রি করে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, আমি বিষয়টি এখন জানতে পারলাম। কেউ যদি দলের নাম করে শীতলক্ষ্যীয় অবৈধভাবে বালু ব্যবসা করে তাহলে সে যে দলেরই হোক অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমি বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক শেখ মাসুদ কামাল জানান, আমরাতো প্রতিদিন উচ্ছেদ অভিযান চালাতে পারি না। উচ্ছেদের সময় হলে আমলা উচ্ছেদ করে দিব। আমাদের ম্যানেজের খবর ভিত্তিহীন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক তাজিম বাবু জানান, এলাকার ছেলে-পেলেরা এ ব্যবসা করে। এই ব্যবসাতো পুরা আমার না। আপনি আইসেন কথা বলমুনে।
উল্লেখ্য যে, শীতলক্ষ্যা নদীর দু'পাড়ে অবৈধ দখল দারিত্বের কারণে সংকুচিত হয়ে পড়েছে বহমান শীতলক্ষ্যা নদী। মাঝে মধ্যে অবৈধ ড্রেজারসহ নদীর তীরে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা লোক দেখানো অভিযানে উচ্ছেদ করা হলেও পরে কয়েকদিনের মধ্যে আগের রূপ ফিরে পায় শীতলক্ষ্যার দু'পাড়।
যার ফলে নদীর মাঝ বরাবর ড্রেজার মেশিন ও রাস্তায় রাস্তায় পাইপ বসিয়ে নির্বিঘ্নে বালুর ব্যবসা করলেও উচ্ছেদ করছে না সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর কোন পক্ষই। এতে বহাল থেকে যাচ্ছে আওয়ামীলীগ নেতার এই ড্রেজার মেশিন। বার বার বিড়ম্বনার শিকার হয় স্থানীয় এলাকাবাসী। হুমকির মুখে পরিবেশ, সংকুচিত হচ্ছে শীতলক্ষ্যা নদী।