ডিএনডি বাঁধের ভেতর বৃষ্টির পানি জমে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হলে কয়েক লাখ মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়ে। ঢুবে যায় রাস্তা-ঘাট। বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকে পড়ে। এই দুর্ভোগকে আরেক ধাপ বাড়িয়ে দিয়েছে ড্রেজার ব্যবসায়িরা। তাদের ড্রেজারের কারণে ডিএনডি এলাকায় দেখা দিয়েছে চৌবাচ্চা সংক্রান্ত গণিতিক সমস্যা। যেমন একনল দিয়ে পানি বের হচ্ছে। আঠারো নল দিয়ে পানি ঢুকছে। ফলে পানি বের করার চেয়ে ঢুকার মাত্রা বাড়ছে। এতে নিরসন হচ্ছে না জলাবদ্ধতা। ফলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে ডিএনডিবাসী। শীতলক্ষ্যা নদীর নাসিক ৪নং ওয়ার্ড, কাঁচপুর ব্রিজ সংলঙ্গ হয়ে নাসিক ১০নং ওয়ার্ড পর্যন্ত দেখাগেছে ড্রেজার আর ড্রেজার।
জানা গেছে, ডিএনডির বিভিন্ন এলাকায় নিচু জমি ভরাটের জন্য শীতলক্ষ্যা নদীতে অবৈধ ভাবে বসানো হয়েছে ১৮টি ড্রেজার। সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল পাম্প হাউজ দিয়ে যে শীতলক্ষ্যা নদী ডিএনডির পানি নিস্কাশন করা হচ্ছে সেই নদী থেকেই ড্রেজারের মাধ্যমে পানি ডিএনডির ভিতরে প্রবেশ করছে। পানি নিস্কাশন করা হচ্ছে একদিক দিয়ে আর প্রবেশ করছে আঠারো দিক দিয়ে। বৃষ্টি ও ড্রেজারের পানি এক হয়ে নিস্কাশনের তুলনায় পানি প্রবেশের মাত্রার ব্যবধান বেশি না হওয়ায় কমছেনা জলাবদ্ধতা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল চৌধুরী বাড়িতে একটি, চিত্তরঞ্জন এলাকায় দুইটি, আদমজীতে একটি, সাইলো দুইটি, আটিতে তিনটি, শিমরাইলে চারটি, ডেমরার শুকরসী পাথর পাথর ঘাটে দুইটি, বালুর ঘাটে দুইটি ও ডেমরা ঘাটে একটি ড্রেজার বসানো হয়েছে শীতলক্ষ্যা নদীতে। প্রতিটি ড্রেজার বালু ভরাট করছে ডিএনডি এলাকার ভিতরে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ড্রেজার মালিক জানান, বালু ভরাট করতে ড্রেজারে শতকরা ত্রিশ শতাংশ বালু আর সত্তর শতাংশ পানি যায়। চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে কমপক্ষে ১৫ ঘন্টা চলে একটি ড্রেজার। পরিসংখ্যান মতে ১৮ ড্রেজার দিয়ে যে পরিমান পানি ডিএনডি এলাকায় প্রবেশ করছে তা পাম্প হাউজের মেশিনে নিস্কাশনের চেয়ে একেবারে কম নয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব ড্রেজার যারা বসিয়েছে তাদের মধ্যে চারজন জনপ্রতিধি, বাকিরা আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনের স্থানীয় নেতা। কোন ড্রেজার একক ভাবে কেউ বসায়নি। প্রতিটি এলাকার প্রভাভশালী ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা সঙ্গবদ্ধ হয়ে এসব ড্রেজার বসিয়েছে। কোন ড্রেজারই নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দর কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বসানো হয়নি। তবে ম্যানেজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই নদীতে এসব ড্রেজার বসানো হয়েছে বলে ড্রেজার ব্যবসায়ী সূত্র জানায়। শুধু জলাবদ্ধতাই নয় এলাকার অনেক গুরত্বপূর্ণ সড়কের উপর দিয়ে ড্রেজার পাইপ বসানোর ফলে যানবাহন চলাচলেও সমস্যা হচ্ছে। এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি নয় কোন ড্রেজার ব্যবসায়ী।
আরও পড়ুন :নারায়ণগঞ্জে লকডাউনের নির্দেশনা অমান্য, ২০ মামলা (ভিডিও)
ডিএনডি প্র নিস্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প কাজে দায়িত্বরত এক কর্মকর্তারা জানান, নানা ভাবে নিস্কাশন কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন নেতৃত্ব স্থানীয় লোকদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনায় বসেও আশানারোপ সহযোগীতা পাওয়া যাচ্ছেনা। তিনি স্থানীয় সকলের সহযোগীতা প্রত্যাশা করেন।
নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের যুগ্ন পরিচালক শেখ মাসুদ কামাল বলেন, নদীতে ড্রেজার বসানোর কোন অনুমতি দেয়া হয়নি। সম্পুর্ণ অবৈধ ভাবে বসানো হয়েছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে নদী থেকে ড্রেজার উচ্ছেদ করা হবে।