নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

মঙ্গলবার,

০৪ মার্চ ২০২৫

রামনগর স্কুলে ৩টি কক্ষেই চলছে সাড়ে ৩শ’ শিক্ষার্থীর পাঠদান 

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:২১:০৮, ৩ মার্চ ২০২৫

রামনগর স্কুলে  ৩টি কক্ষেই চলছে সাড়ে ৩শ’ শিক্ষার্থীর পাঠদান 

বন্দরে ২৬নং ওয়ার্ডের একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২২ নং রামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পাশের হার কিংবা শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠাটির বিশেষ সুনাম থাকলেও এটির অভ্যন্তরে রয়েছে চরম অব্যবস্থাপনা ও নানামুখী সমস্যা। 

এক সময় ৫শ’রও অধিক শিক্ষার্থী এই প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করলেও ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসলীলায় অবতীর্ণ হতে থাকায় বর্তমানে মাত্র ৩শ’ জন শিক্ষার্থী নিয়েই চলছে এর কার্যক্রম। যেন দিনে দিনে হ্রাস পেতে যাচ্ছে এখানকার শিক্ষার হার।  

সম্প্রতি সরেজমিনে গেলে উঠে আসে নানা তথ্য-উপাত্ত। বিদ্যালয়ের জনৈক অভিভাবক আকবর আলী জানান, বিদ্যালয়টি দীর্ঘ দিন ধরেই অবহেলিত। এটির প্রতি কারো কোন খেয়াল নেই। সরকারিভাবেও এটি উন্নয়নের কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। 

স্কুলের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা আছে অথচ একটা ভবনের কারণে আমাদের ছেলে-মেয়েরা খুব কষ্ট করে লেখা-পড়া করছে। বর্ষা মওসুমেতো বাচ্চারা ক্লাসই করতে পারে না কারণ পুরো ক্লাসরুম পানিতে ডুবে যায়। 

অপরাপর অভিভাবক আকলিমা বেগম জানান,২৬নং ওয়ার্ডে একটি মাত্র স্কুল সেটির কোন পরিবর্তণ দেখছি না। ৩টা রুমে কিভাবে ৩০০ বাচ্চা পড়া-লেখা করে আমার বুঝে আসে না। 

আমাদের আশে পাশের ওয়ার্ডগুলো অনেক স্কুল রয়েছে সেখানে পর্যাপ্ত ক্লাসরুম থাকার পরও নতুন নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। আমাদের এখানে অনেক দিন ধরেই বাচ্চারা কষ্ট করে পড়া-লেখা করার পরও কারো চোখে পড়ছে না। তবে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদানে হিমসিম খেলেও চাকুরীর স্বার্থে এখনো হাল ছাড়েননি মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকরা। 

তারা মনে করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অচিরেই তাদের প্রতিষ্ঠানের সমস্যা দূরীকরণে এগিয়ে আসবে। এমনই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসিমা বেগম। 

নাসিমা বেগম আরো জানান, এলাকাবাসী শিক্ষা ব্যবস্থার বিষয়টি চিন্তা করে ১৯৩০ সালে তার পিতা আব্দুল জব্বার বিদ্যালয়ের জন্য ১০ শতাংশ সম্পত্তি দান করেন। সেই থেকে তারা বিদ্যালয়ের পিছনে নানাভাবে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন।

নিজেদের কষ্ট হলেও শিক্ষার মান বজায় রেখে তারা বিদ্যালয়টি চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু জায়গা সংকুলান না হওয়ায় তাদেরকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। 

৩টি কক্ষের মধ্যে প্রতিটি কক্ষে ১শ’রও অধিক শিক্ষার্থীকে পাঠ দান করানো হয়। কিছুই করার নেই আমরা নিরুপায়। এক কক্ষে ১শ’রও অধিক শিক্ষার্থীর পাঠদান করানো হয় সেটা কোন সমস্যা নয় বর্ষা মওসুমে প্রতিটা ক্লাসরুম হাটু পানিতে ডুবে যায়। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদেরকে অনেক ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করতে হয়। তার উপরে ক্লাসরুমগুলো এতোটাই অন্ধকার বাতি না জ্বালিয়ে সেখানে ক্লাস করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। 

আর বিদ্যুত বিভ্রাট হলেতো কোন কথাই নেই একেবারে অন্ধকারে গরমে ভিজে ভিজে মোমবাতি কিংবা টর্চ লাইট জ্বালিয়ে ক্লাস করতে হয়। ওই মুহুর্তটাকে মনে হয় আমরা যেন এখনো আদিম যুগে রয়ে গেছি। 

বিদ্যালয়ের করুন পরিস্থিতির আদৌ উন্নতি হবে কি না সে বিষয়ে জানতে চাইলে বন্দর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রেজাউল করিম জানান, ২২নং রামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বন্দরের ৪টি স্কুলের ভবন জরুরী ভিত্তিতে নির্মাণের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের ডিডি মহোদয়ের নিকট গতবছরের ২০ ডিসেম্বর চাহিদাপত্র প্রেরণ করেছি। 

আমরা আশাবাদী আগামী জুলাইয়ের মধ্যে ভবনগুলো পেয়ে যাবো। চারটি বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের অনুমোদন পেলে রামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাজটাই আগে ধরা হবে।

সম্পর্কিত বিষয়: