নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

শুক্রবার,

২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সিদ্ধিরগঞ্জে চাঁদাবাজির কৌশল পাল্টেছে সালাউদ্দিন বাহিনী

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:২০:০০, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সিদ্ধিরগঞ্জে চাঁদাবাজির কৌশল পাল্টেছে সালাউদ্দিন বাহিনী

সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি এলাকার আলোচিত চাঁদাবাজ ও ডাকাত সালাউদ্দিন এবং তার বাহিনীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে সাধারণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়িরা। চাঁদাবাজির সময় হাতে নাতে সালাউদ্দিনের ভাই কামালকে শিক্ষার্থীরা আটক করে গণধোলাই দিয়ে সেনা ক্যাম্পে হস্তান্তর করলেও সালাউদ্দিনের চাঁদাবাজি বন্ধ হচ্ছে না।

বরং প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে চাঁদাবাজদের মূলহোতা সালাউদ্দিন চাঁদাবাজির কৌশল পাল্টিয়েছে। সালাউদ্দিন ও তার বাহিনীর ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না ক্ষতিগ্রস্থ অসহায় ব্যবসায়িরা। তবে তারা সালাউদ্দিন ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে তদন্তপুর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আইনশৃংখলাবাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

জানা যায়, সালাউদ্দিন সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পাগলাবাড়ি এলাকার মৃত আমির হোসেনের ছেলে। তার দুই ভাই কামাল এবং বাবুলও অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের তিন ভাইয়ের নানা অপকর্ম এবং অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন সিদ্ধিরগঞ্জ পুল এলাকার ব্যবসায়ি ও এলাকাবাসী। সালাউদ্দিনের একটি বাহিনী রয়েছে।

এই বাহিনীর মাধ্যমে ভুমিদস্যুতা, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, জবর দখলসহ এমন কোনো অপকর্ম নাই যা করে না ডাকাত সালাউদ্দিন। বিশেষ করে ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর বেপরোয়া হয়ে উঠে সালাউদ্দিন বাহিনী। আওয়ামীলীগের আমলে তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হওয়া লোকজন এখন বলতে শুরু করেছে সালাউদ্দিন আগেও জালাইছে এখনো জালাচ্ছে। আমরা কি মুক্তি পাবো না?

৫ আগস্টের পর সালাউদ্দিনের ভাই কামাল সিদ্ধিরগঞ্জ পুলের ফুটপাতের দোকানীদের কাছ থেকে ব্যাপক চাঁদাবাজি শুরু করে। এক পর্যায়ে ৬ সেপ্টেম্বর রাতে সিদ্ধিরগঞ্জপুলস্থ বাজারের দোকান থেকে চাঁদা আদায়কালে কামালকে হাতে নাতে ধরে শিক্ষার্থীরা। পরে চাঁদাবাজ কামালকে গনধোলাই দিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার হাউজে অবস্থিত সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে সোপর্দ করে।

আওয়ামীলীগের পতনের পর সিদ্ধিরগঞ্জ পুলের বেশ কয়েকটি অস্থায়ী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়েছে সালাউদ্দিনসহ তার সহযোগীরা। শুধু সেখানেই নয় তার বাড়ির আশপাশের বাসিন্দাদের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

আবু সুফিয়ান নামে এক যুবককে মারধর করে রক্তাক্ত জখম করেছে। ব্যবসায়ীদের থেকে জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জ পুলস্থ ফল ব্যবসায়ী আনোয়ারসহ প্রায় ১০টি দোকানে হামলা চালিয়ে ভেঙে দিয়েছে সালাউদ্দিন বাহিনী। সালাউদ্দিনের দাবি প্রতি মাসে তাকে চাঁদা দিতে হবে। 

এদিকে সালাউদ্দিনের ভাই কামালকে চাঁদাবাজির সময় আটক এবং সালাউদ্দিনের চাঁদাবাজি নিয়ে পত্রিকায় অনেক সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর চাঁদাবাজির কৌশল পাল্টায় চতুর সালাউদ্দিন। সালাউদ্দিনের একটি চাউলের দোকান রয়েছে। সেই দোকানে বসেই দিনরাত চলে নানা অপকর্মের শলাপরামর্শ।

সিদ্ধিরগঞ্জ পুল এলাকায় খাজা কাচাবাজার ও আবু তালেব মার্কেটের দোকানীদের বাধ্য করছে তার কাছ থেকে চাল ও আলু কিনতে। ব্যবসায়িরা ঢাকার কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ি, চিটাগাং রোড, আদমজী বাজার থেকে পাইকারীভাবে চাল ও আলু কিনলে কিছুটা কম দামে পায়।

কিন্তু ওই ব্যবসায়িদের কোথাও থেকে চাল ও আলু আনতে দিচ্ছে না সালাউদ্দিন। সে তার লোকজন দিয়ে সকালে দোকান খোলার আগেই দোকানের সামনে আলু ও চালের বস্তা রেখে আসে। যাতে দোকানীরা বাধ্য হয় বেশি দামে তার চাল ও আলু কিনতে। 

বাজারের দোকানীরা জানায়, মানিক নামে এক নিরিহ ক্ষুদ্র দোকানদার কয়েকদিন আগে যাত্রাবাড়ি থেকে ৭ বস্তা আলু আনেন পাইকারী দামে। এই কথা জানতে পেরে চাঁদাবাজ সালাউদ্দিন আলুর বস্তাগুলো নিয়ে যায়। তখন মানিক বিভিন্ন লোকজনের কাছে ধর্ণা দিয়েও সহযোগিতা পায়নি।

পরে নিরুপায় হয়ে সন্ধ্যার দিকে সালাউদ্দিনের কাছে গিয়ে জানায়, সে আর অন্য কোথাও থেকে আলু আনবে না। তখন সালাউদ্দিন মুছলেকা নিয়ে আলু ফেরত দেয়। এছাড়া ফুটপাতে ভ্যানগাড়ি দিয়ে আলু সহ বিভিন্ন সবজি বিক্রিতাকেও শান্তি দিচ্ছে না সালাউদ্দিন ও তার লোকজন।

সালাউদ্দিনের কাছ থেকে বেশি দামে পণ্য কেনার কারণে ক্ষুদ্র ব্যবসায়িদের লোভের গুড় পিঁপড়ায় খাচ্ছে। ভয়ে সালাউদ্দিন ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস করছে না। মুখ বুঝে সব অত্যাচার জুলুম সহ্য করছে তারা। জয়নাল নামে এক ব্যক্তির বৈদ্যুতিক সংযোগ জোর করে দখল করে বিভিন্ন দোকানে ভাড়া দিয়ে টাকা উঠায় সালাউদ্দিনের ভাই কামাল।

স্থানীয়রা জানায়, আওয়ামীলীগের আমলে সিদ্ধিরগঞ্জ পুলস্থ ফুটপাতে চাঁদাবাজির ঘটনায় সালাউদ্দিনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরবর্তীতে থানা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের তদবিরে ছাড়া পায় চাঁদাবাজ সালাউদ্দিন। আওয়ামী দোসর হিসেবে পরিচিত এই ডাকাত সালাউদ্দিন এখন নিজেকে বিএনপির লোক পরিচয় দিচ্ছে।

তারা আরও জানায়, বিএনপির বিতর্কিত নেতা সালাউদ্দিন ১৯৯৮ সালে একটি ট্রাক বোঝাই ভারতীয় কাপড়ের চালান ডাকাতি করে সিদ্ধিরগঞ্জের সিআই খোলা এলাকায় রাখেন। পরবর্তীতে রাজধানী ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থা ডিবি পুলিশ সালাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে মালামাল উদ্ধার করেন।

কাপড় উদ্ধার করলেও তার বেশ কিছুদিন পর কাপড় বহনকারী ওই ট্রাকটি জয়দেবপুর থেকে উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে এখনো সেই ডাকাতি মামলা আাদলতে চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে। ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর ছয় মাসের সাজা হয় সালাউদ্দিনের। ৬ কারাভোগের পর জামিনে বেরিয়ে আগের মতোই অপকর্ম চালিয়ে যায়।

সিদ্ধিরগঞ্জের ১নং ওয়ার্ডের মিজমিজি পুর্বপাড়া, দক্ষিণ মজিববাগ, আলামিন নগর এবং  সিদ্ধিরগঞ্জপুল এলাকার খাজা কাচাবাজার, আবু তালেব মার্কেটসহ ব্যবসায়ী ও ফুটপাতের দোকানীরা জিম্মি হয়ে পড়েছে চাঁদাবাজ সালাউদ্দিন বাহিনীর কাছে। সালাউদ্দিন ও তার বাহিনীকে আইনের আওতায় আনার জন্য তারা আইনশৃংখলাবাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।