বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চাষাড়ায় আন্দোলনরত অবস্থায় বুকে ও হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে গিয়াসউদ্দিন মডেল কলেজের আহত শিক্ষার্থী জোবায়েরের পাশে দাড়িয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
গিয়াসউদ্দিন ইসলামিক মডেল কলেজের অধ্যক্ষ মীর মোসাদ্দেক হোসেনের প্রচেষ্টায় রবিবার বিজিবি সদর দপ্তরে আহত জোবায়েরের পিতার হাতে নগদ ১ লাখ টাকার অনুদান তুলে দেন বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন বিজিবি উইং কমান্ডার মেজর এস. এম হাবিব ইবনে জাহান (এসপিপি) এবং কলেজের অধ্যক্ষ মীর মোসাদ্দেক হোসেন।
এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ মীর মোসাদ্দেক হোসেন জানান, গিয়াসউদ্দিন ইসলামিক মডেল কলেজের ২০২৩ সালের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র জোবায়ের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন গত বছর ৪ আগস্ট চাষাড়ায় গুলিবিদ্ধ হয়।
ঘটনার দিন আন্দোলনরত অবস্থায় পুলিশ তাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে মাটিতে ফেলে দেয়। পরে সে বুকে এবং হাতে গুলিবিদ্ধ হয়। আহতবস্থায় জুবারেয়কে প্রথমে তার বাবা ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায়। কিন্তু সারারাত সে কোন চিকিৎসা পায়নি।
পরবর্তীতে ৫ আগস্ট তার বাবা কোনরকমে তাকে মেডিকেলে ভর্তি করাতে সক্ষম হয় এবং তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরই মধ্যে ৫ তারিখ পট পরিবর্তনের মধ্যেই তার চিকিৎসা চলছিলো।
পরবর্তীতে আমি যখন জানতে পারি আমাদের গিয়াসউদ্দিন কলেজের ২০২৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মেডিকেলে চিকিৎসাধীন তখন ৬ আগস্ট মেডিকেলে যেয়ে তার চিকিৎসার খোঁজখবর নেই।
এরপর ৮ আগস্ট ভোরবেলা আহত জোবায়েরের মা আমাকে ফোন দিয়ে বললো স্যার আমার ছেলেকে বাঁচান। মেডিকেলে আমার ছেলের চিকিৎসা হচ্ছেনা।
পরবর্তী সময় আমি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে আমার নৈতিক এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে সর্বোপরী শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে আমাদের যে নৈতিক সমর্থন ছিলো সেই প্রেরনা থেকে আমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন সেক্টরে যোগাযোগ করে সেনাবাহিনীর সহযোগীতায় আমি আহত জোবায়েরকে ৮ আগস্ট ঢাকা সিএমএইচে ভর্তি করতে সমর্থ হই।
এখন পর্যন্ত সে সিএমএইচে চিকিৎসাধীন রয়েছে। সামরিক বাহিনীর প্রতিটি সদস্য তার চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়ে তাকে বর্তমানে অনেকটা সুস্থ করে তুলেছে। বর্তমানে সে কিছুটা হাটতে পারে।
আহত জোবায়েরের যাবতীয় চিকিৎসার ব্যায়ভার সেনাবাহিনী বহন করছে। পাশাপাশি তার চিকিৎসার জন্য কলেজের পক্ষ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন স্যার নিজ উদ্যোগে পঁচাত্তর হাজার টাকা প্রদান করেছেন। গিয়াসউদ্দিন স্যারের নির্দেশে আমরা কলেজের শিক্ষকরা প্রতিনিয়ত জোবায়েরের চিকিৎসার খোঁজ খবর নিচ্ছি।
সর্বশেষ, আমি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কর্তৃপক্ষের সাথে আহত জোবায়েরের বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করলে তাদের পক্ষ থেকে আজ (গতকাল ৫ জানুয়ারী) বিজিবি সদর দপ্তরে আহত জোবায়েরের পিতার হাতে নগদ ১ লাখ টাকার অনুদান তুলে দেন বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী (ওএসপি, বিএসপি, এসইউপি, বিজিবিএম, এনডিসি, পিএসসি, এমফিল) এবং উইং কমান্ডার মেজর এস. এম হাবিব ইবনে জাহান (এসপিপি)।
এ বিষয়ে, আমাদের কলেজের প্রতিষ্ঠাতা গিয়াসউদ্দিন স্যারের সাথে আলাপ করলে তিনি এই ১ লাখ টাকার সাথে কলেজের ফান্ড থেকে আরো ৫০ হাজার টাকা যোগ করে আহত জোবায়েরের পিতাকে আর্থিকভাবে সাবলম্বী করে তোলার জন্য তাকে একটি অটো ভ্যানগাড়ি কিনে দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন।