বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ৪০ টি মামলা দয়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে ২১ টি হত্যা ও ১৯ টি হত্যা চেষ্টা মামলা। পুলিশ বাদী হয়নি এসব মামলার ।
বাদী হয়েছেন ভুক্তভোগী এবং ভুক্তভোগীর পরিবারবর্গ। মামলায় স্থানীয় কিছু বিএনপির নেতাকর্মী ব্যবসায়ীসহ নিরীহ মানুষকে আসামি করার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। যার ফলে আতঙ্কে রয়েছে এলাকাবাসী ও সাধারণ মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় নারায়ণগঞ্জ সিটিকরপোরেশনের ২ নং ওয়ার্ডের (সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি) বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন, ৬ নং ওয়ার্ডের বিএনপি নেতা এডভোকেট শাহআলম মানিক, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ সভাপতি কাদির, মহানগর ছাত্রদল নেতা শামী হাসান সাজি, ৬ নং ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আবুল কালাম, ২ নং ওয়ার্ডের ছাত্রদলের সাবেক নেতা বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবকদলের সাধারন সম্পাদক পদ প্রার্থী রেদোয়ান হোসেন পাপ্পু, ২ নং ওয়ার্ডের ছাত্রদল নেতা টুটুল, হিরাঝিলে লাইব্রেরী ব্যবসায়ী মো. জিয়াউদ্দিন, চিটাগাংরোডে কাপড়ের ব্যবসায়ী মো. হারুন এবং হিরাঝিলে ব্যবসায়ী মোত্তার হোসেন ও নেট ব্যবসায়ী মো. ইমন, আদমজীর কদমতলীর বাসিন্দা জমি ব্যবসায়ী মো. মামুন, ৩ নং ওয়ার্ডের ছাত্রদল নেতা শামীম আলম সাজিদসহ আরও অনেকে ৫ই আগষ্টের পর দায়ের করা মামলায় আসামি হয়েছেন।
এমনকি অনেক সাধারণ মানুষ ও মামলায় আসামি হয়েছেন। গণহারে মামলায় আসামি করায় তারা এসব মামলাকে ভূতুড়ে মামলা বলে অভিহিত করেছেন। রীতিমতো আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে দখলবাজি , চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডসহ কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটালে এর দায়ভার দল নেবেনা। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ এ ধরনের কর্মকান্ডে জড়ালে কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা বলে হুঁশিয়ারী দেন তিনি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি একটি বৃহৎ গনতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। এই দলে কোন দখলবাজ, চাঁদাবাজ, ভূমিদস্যু এবং সন্ত্রাসীদের জায়গা নেই। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। আপনারা দেখেছেন ৫ই আগষ্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত সারাদেশে বিএনপিরও অঙ্গ সংগঠনের যে সকল নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হাই কমান্ড অভিযোগ পেয়েছেন তাদেরকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার এবং বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন।
এতে করে প্রমাণ হয়েছে বিএনপি একটি সুশৃঙ্খল রাজনৈতিক দল, এখানে অন্যায় অপরাধ করে কেউ ছাড় পায়না। আমাদের নেতা তারেক রহমানের সুস্পষ্ট নির্দেশ কোন অপরাধীর এই দলে জায়গা হবে না। কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এলে দলীয়ভাবে তা তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়।
আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর নারায়ণগঞ্জ জেলায় দায়ের করা মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এসব মামলা গুলোতে আমার অনেক নেতাকর্মী কে আসামি করা হয়েছে। শুনেছি অনেক সাধারণ মানুষ ও ওইসব মামলায় আসামি হয়েছে। আমি মনে করি পুলিশ সকল মামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত পূর্বক দোষীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনবে এবং নিরপরাধ ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে দিবে।
এসব মামলা দায়ের করে কেউ যদি আর্থিক ফায়দা লুটতে চায় তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই দলীয় এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবীও জানান বিএনপি নেতা মামুন মাহমুদ।
ভুক্তভোগী নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ- সভাপতি কাদির বলেন, আমরা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সৈনিক। আমিসহ আমাদের বিএনপি'র নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে আমাদের রাজনৈতিক মাঠ থেকে সরাতে পারবে না। আমাদের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ যারা দলের নাম ব্যবহার করে অপকর্ম করবে তারা বিএনপির কেউ নয়।
একটি কুচক্রী মহল স্বার্থসিদ্ধির জন্য বিএনপি নেতাকর্মীসহ নিরীহ মানুষকে মামলায় জড়িয়ে আর্থিক ফায়দা লুটছে। আমরা এসব কুচক্রী মহলকে চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছি।
সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মোঃ সিরাজুল ইসলাম সিরাজ বলেন, গত ১৬ বছর পূর্বে নাসিক ৪ নং ওয়ার্ড শ্রমিকলীগের যুগ্ন সম্পাদক পদসহ প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি নিজের ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত রয়েছি কিন্তু আমার নামেও একটি হত্যা চেষ্টা মামলা হওয়ায় আমি রীতিমতো অবাক হয়েছি। তিনি অভিযোগ করেন ব্যক্তি স্বার্থসিদ্ধির জন্য স্থানীয় বিএনপির এক নেতার ইন্ধনে তাকে আসামি করা হয়েছে ।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবকদলের সভাপতি প্রার্থী মো. শাহআলম মাষ্টার বলেন, দলীয় আধিপত্য ও বানিজ্যিক চিন্তাভাবনা ও হিংসাত্মক কারণে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে যা কাম্য নয়। তিনি বলেন, আমার ছেলের নামেও মামলা দেওয়া হয়েছে।
এবিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মো. শাহিন আলম বলেন, মামলা তদন্তে যাদের সংশ্লিষ্টতা নেই তারা মামলার চার্জশীট থেকে অব্যাহতি পাবেন।