বামে শেখ মুজিবের সমাধির সামনে এস আই মাহবুবের পোজ ডানে পায়ের নিচে তার ছবি মাড়ানোর দৃশ্য
সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা বানিজ্য, অপরাধি, সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারিদের সাথে সখ্যতা ও ভুক্তভোগীদের অসহায়তাসহ নানা কর্মকান্ডে অভিযুক্ত বিতর্কিত সেই এসআই সামারিবাজ মাহাবুবের অপসারণের দাবিতে ক্ষোভে ফুঁসে উঠছে সিদ্ধিরগঞ্জবাসী।
সম্প্রতি মুক্তিনগর এলাকায় একটি জমির বিরোধ নিয়ে হামলায় লিলি বেগম (৫০) নামে এক নারী নিহতের ঘটনায় ভুক্তভোগীদের সহায়তা না করে উল্টো হামলাকারীদের পক্ষ নেয়ার অভিযোগে তার বিচার ও অপসারণের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছে নিহতের স্বজনরা।
এরপর বিচারের দাবিতে বুধবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে নিহতের স্বজনরাসহ স্থানীয় এলাকাবাসী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
এসময় হামলায় আহত ও নিহতের স্বজনরা দাবি করেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই মাহাবুরের উপস্থিতিতে হামলাকারীরা তাদেরকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করলেও পুলিশের সাহায্য চেয়েও পাননি তারা। উল্টো বিএনপি নেতা আইয়ুব আলী মুন্সির ইশারায় আমাদের মামলাও নেয়নি পুলিশ। আমরা ওই পুলিশ কর্মকর্তার অপসারণ ও বিচার চাই।
পরে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি শাহিন আলম আন্দোলনকারীদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলে তারা শান্ত হয়ে ফিরে যান।
এসময় ওসি শাহিন আলম বলেন, আমি আজ নতুন জয়েন করেছি আমি আপনাদেরকে আশ^স্ত করছি বিষয়টি আমি নিজে গিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিব। এখানে সঠিক বিচার হবে, এর কোন ব্যত্যয় হবে না।
জানাগেছে, এসআই মাহাবুব থানায় যোগদানের পর থেকেই সাবেক ওসি মামুনকে ম্যানেজ করে বেপোরোয়া কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে। ধরাকে সরাজ্ঞান করে থানা এলাকায় বিচরণ করছে। থানায় কোনো অভিযোগ পড়লেই মাহাবুব অভিযুক্তদের থানায় ডেকে এনে বানিজ্যে মেতে উঠতেন।
অপরদিকে অভিযোগকারীরা তার সাথে দেখা করলে উল্টো নানা নয়ছয় ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদেরকে চুপসিয়ে দেন। আটক বানিজ্য (ধর-ছাড়ো) এটা ছিলো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়।
বিহারী ক্যাম্পের ফারুক নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, এলাকায় মারামারির ঘটনায় তিন জন গুরুতর আহত হয় পরে থানায় এসে অভিযোগ দায়ের করেন তার এই অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব পান এসআই মাহাবুব। অভিযোগের তিন দিন পার হলেও এসআই মাহাবুব ঘটনাস্থলে জাননি।
পরবরর্তীতে ভুক্তভোগী ফারুক থানায় এসে ওসির সাথে দেখা করেন অভিযোগের বিষয়ে ওসিকে জানালে সাবেক ওসি আল মামুন ফোন করেন মাহাবুবকে অভিযোগের বিষটি জান্তে চাইলে তিনি বিভিন্ন অজুহাত দেখান।
ফরহাদ নামে আরো এক ভুক্তভোগী জানায়, তাদের স্বামী স্ত্রী মধ্যে দন্ধের কারনে ফরহাদের স্ত্রী তার এক ছেলেকে নিয়ে মুক্তিপণ দাবি করেন এই বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এই অভিযোটি তদন্তের দায়িত্ব পায় এসআই মাহাবুব। ফরহাদ বলেন আমি কত দিন দরে দারোগাকে ফোন করেছি কিন্তুু সে ঘটনাস্থলে নাগিয়ে আমাকে থানায় আসতে বলে।
এদিকে ৫ আগষ্টের পর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতের ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (মামলা নং-০৭) দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি আরও ক্ষমতাধর পুলিশ অফিসার বনে যান। ওই মামলায় বিভিন্ন লোকদের অজ্ঞাত আসামি হিসেবে গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে নেমে পড়েন বানিজ্যে।
গত মাসে জালকুড়ি থেকে এক ব্যক্তির কাছ থেকে (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) গ্রেপ্তার করে ওই হত্যা মামলায় আসামি করার ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে আসেন। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হওয়ায় ক্ষোভের সৃষ্টি হলেও ওই ভুক্তভোগী পুলিশী হয়রানী ও আইনি জটিলতা এড়াতে নিশ্চুপ হয়ে যান। এভাবে তিনি অনেক সাধারণ মানুষ ও আসামি থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আওয়ামী ঘরোয়ানার পুলিশ কর্মকর্তা মাহবুব মুন্সিগঞ্জে থাকার কালীন সেখানেও আটক ও গ্রেপ্তার বাণিজ্য করে সাধারণ নিরিহ মানুষদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।
একটি সূত্র জানায়, এসআই মাহবুব আওয়ামী ফ্যাসিষ্টদের দোসর হিসেবে কাজ করে আসছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তাকে নিয়ে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিলো। তার এসব কর্মকান্ডে যে কোনো সময় সিদ্ধিরগঞ্জের আইনশৃংখলার অবনতি ঘটতে পারে।
এসব বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, আমি আজ নতুন জয়েন করেছি। এই মুহুর্তে কিছু বলতে পারছিনা। অভিযোগগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।