সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টে মামনুল হককে হেনস্থার করার পর প্রতিবাদ করায় ইকবাল হোসেন নামে এক হেফাজত কর্মী মারধরের পর মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সাংবাদিক হাবিবুর রহমান হাবিবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বুধবার রাত ১১টার দিকে সোনারগাঁ পৌরসভার টিপরদী এলাকায় তার নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রেপ্তার করে সোনারগাঁ থানা পুলিশ। সাংবাদিক হাবিবুর রহমান চ্যানেল এস নামে বেসরকারী টেলিভিশনের সোনারগাঁ প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত।
সোনারগাঁ থানা সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টে হেফাজত কান্ডের তিন বছর পর গত ২১ অক্টোবর রাতে হেফাজতে ইসলামের সোনারগাঁ শাখার সদস্য মাওলানা শাজাহান শিবলী বাদি হয়ে ১২৮ জনকে আসামি করে হেনস্তা ও হত্যা চেষ্টার একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার এজাহারভুক্ত আসামী হাবিবুর রহমান হাবিব।
মামলার বাদি বিবরনীতে উল্লেখ করেন, ২০২১ সালের ৩ এপ্রিল রাতে কেন্দ্রীয় হেফাজতে ইসলামের তৎকালীন যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক তার স্ত্রীসহ সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্ট হোটেলে অবকাশ যাপনের জন্য আসেন।
মামুনুল হককে হেনস্থা করার উদ্দেশ্যে এবং রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করার হীনমানসে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে ১০০/১৫০ জন একত্রে জোটবদ্ধভাবে পরস্পর যোগসাজসে একে অপরের সহায়তায় মামুনুল হক সাহেবকে স্ত্রী সহ রিসোর্ট হইতে জোরপূর্বক বাহির করিয়া নিয়া জিজ্ঞাসাবাদ করিতে থাকে।
ইহার ধারাবাহিকতায় রাতে সোনারগাঁ উপজেলার হেফাজতকর্মী মাওলানা ইকবাল হোসেনকে মোগরাপাড়া চৌরাস্তা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থান করিয়া একত্রিত হইয়া মাওলানা মামুনুল হককে স্ত্রী সহ আটক করার বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ করায় ১০০/১৫০ জন একত্রে সেখানে উপস্থিত হইয়া মাওলানা ইকবাল হোসেনকে খুন করার উদ্দেশ্যে জোটবদ্ধ ভাবে এলোপাথারী ভাবে কিলঘুষি মারিয়া ও লোহার রড, লাঠি দিয়া মাথাসহ শরীরের অন্যান্য জায়গায় আঘাত করিয়া গুরুতর জখম করে।
জখম অবস্থায় ইকবাল হোসেনকে পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায়। পরে পুলিশের নির্যাতনে মাওলানা ইকবাল হোসেন গুরুতর অসুস্থ্য হইয়া পড়িলে তাহাকে পুলিশ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাওলানা ইকবাল হোসেনকে শহীদ সোহরাওয়াদী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ২০২১ সালের ২১ এপ্রিল দুপুরে মারা যান।
সোনারগাঁ রয়েল রিসোর্টে ২০২১ সালে ৩ এপ্রিল মামুনুল হকের ধর্ষণ কান্ডে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। ওই বছর ৩ এপ্রিল বিকেল ৫টায় সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টের ৫০১ নম্বর কক্ষে মামুনুল হককে দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণাসহ অবরুদ্ধ করে রাখে উপজেলা যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ স্থানীয় কয়েকজন।
সন্ধ্যা ৭টায় মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে খবর পেয়ে স্থানীয় হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা রয়েল রিসোর্ট ভাঙচুর করে নারীসহ মামুনুল হককে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় গাড়ি ভাঙচুর, মহাসড়কে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ, আওয়ামী লীগ অফিস, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতার বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে।
পরে ওই বছরের ৬ এপ্রিল রাতে হেফাজত নেতাকর্মীরা সাংবাদিক হাবিবুর রহমানকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে হামলা চালিয়ে মারধর করেন। পরে ফেইসবুক লাইভে এসে নির্যাতনের মুখে মামুনুল হকের কাছে ক্ষমা চাওয়াতে বাধ্য করার ঘটনাও ঘটে।
এই বিষয় জানতে চাইলে সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল বারী জানান, হেফাজত এর মামলায় সাংবাদিক হাবিবুর রহমান হাবিবকে গ্রেফতার করা হয়ছে। আজ তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।