নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন লক্ষীনারায়ন কটন মিল অভ্যন্তরে অবস্থিত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উপাসনালয় নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক এবং পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার।
সেখানে তারা স্থানীয়দের সাথে কথা বলেন এবং সকল পক্ষকে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে আসন্ন দূর্গাপূজার আগেই সুষ্ঠু সমাধানের আশ্বাস প্রদান করেন। এ সময় নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন ১০ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত লক্ষীনারায়ণ কটন মিলটি বিগত স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের আমলে নারায়ণগঞ্জের খুনি গডফাদার নাসিম ওসমান ও তার ভাই শামীম ওসমানের সহায়তায় দখল করে নেয় নারায়ণগঞ্জে চিহ্নিত ভূমিদস্যু নীট কর্নসার্ন গ্রুপের মালিক জয়নাল আবেদীন মোল্লা ও তার ভাই জাহাঙ্গীর মোল্লা।
মিল অভ্যন্তরের সকল স্থাপনা ভেঙে ফেললেও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দীর্ঘদিনের পুরাতন মন্দিরটি রক্ষার জন্য মন্দিরে আগত ভক্তবৃন্দ তখন থেকেই আন্দোলন করতে থাকে কিন্তু সু-চতুর জয়নাল মোল্লা ও জাহাঙ্গীর মোল্লা তৎকালীন এমপি নাসিম ওসমান ও শামীম ওসমানকে ম্যানেজ করে ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের টাকা খাইয়ে সেই মন্দিরের জায়গাটুকুও দখল করে নেয়।
স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দাবি মন্দিরের জায়গা দেবোত্তর সম্পত্তি, তা কখনো বিক্রি করা যায় না বা হস্তান্তর করা যায় না। মিল কর্তৃপক্ষ যদি মিলটি বিক্রি করে থাকে কিন্তু মন্দিরের জায়গা তো বিক্রি করে নাই। তাহলে আমাদের মন্দিরের জায়গা কেন দখল করা হলো, আমাদেরকে কেন ধর্মীয় উপাসনা করা থেকে বিরত রাখা হচ্ছে?
তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর দুর্গাপূজা এলেই প্রশাসনের লোকজন এখানে আসেন এবং জয়নাল মোল্লা ও জাহাঙ্গীর মোল্লার কাছ থেকে মোটা অংকের সুবিধা নিয়ে কোনো রকমে দুর্গা পূজাটুকু উদযাপন করার জন্য সুযোগ করে দেন, বছরের বাকি সময় সাধারণ মানুষ সেই মন্দিরে যেতে পারেন না।
এবার আর তারা কোনো সাময়িক সমাধান মানবেন না, তারা চান এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান। তাদের দেবোত্তর সম্পত্তি তাদেরকে বুঝিয়ে দেয়ার দাবি জানান স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন যাতে করে সারা বছর তারা মন্দিরে গিয়ে ধর্মীয় উপাসনা করতে পারেন।
এদিকে আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসব সফল করতে গত ২৬ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতৃবৃন্দ লক্ষী নারায়ণ কটন মিল অভ্যন্তরের পূজা মন্ডপের বিষয় স্থায়ী সমাধান দাবি করেন। তখন জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক এবং পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার তাদেরকে কথা দেন তারপর দিন শুক্রবার ২৭ সেপ্টেম্বর সকালে ঘটনাস্থলে তারা যাবেন এবং সশরীরে পরিদর্শন করবেন।
শুক্রবার সকাল ১১ টায় জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার লক্ষীনারায়ন কটন মিলের অভ্যন্তরে অবস্থিত মন্দিরের জায়গাটি পরিদর্শন করেন এবং স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বী ভক্তবৃন্দের সাথে কথা বলেন। সকলের দাবি এবং অভিযোগ তারা শোনেন এবং সকল পক্ষকে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে এবার স্থায়ী সমাধান করার আশ্বাস প্রদান করেন।
এ সময় নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারকে মন্দিরের এলাকা ঘুরিয়ে দেখান এবং সমস্যাগুলো তুলে ধরেন। সেইসাথে প্রতিবারের মতো সাময়িক সমাধান না করে এর একটি স্থায়ী সমাধান করার জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলার বর্তমান দুই অভিভাবককে অনুরোধ করেন। এর জন্য প্রয়োজনে তারা বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেন।
পরিদর্শনকালে আরও উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সাংবাদিক সংকর কুমার দে, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুশীল দাস, জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রদীপ কুমার দাস, মহানগর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি লিটন চন্দ্র পাল, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শিশির ঘোষ অমর, সাধারণ সম্পাদক খোকন বর্মন, লক্ষী নারায়ন কটক মিল পূজা মন্ডপের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা বিজয় সরকার, তরুণ বেগিসহ স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতৃবৃন্দ।