নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার রূপসী এলাকায় গাজী গ্রুপের টায়ার তৈরির কারখানায় লুটপাট চালিয়ে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রোববার দিবাগত রাত ৯টার দিকে আগুন দেওয়ার এ ঘটনা ঘটে বলে জানান কারখানার সহকারী মহাব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম।
এদিকে অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ডেমরা, কাঁচপুর, আদমজী ইপিজেড ও কাঞ্চন ফায়ার স্টেশনের মোট ১২ টি ইউনিট রাত পৌনে ১২টা থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা শুরু করে।
পরে রাজধানির সিদ্দিকবাজার থেকে টিটিএল মেশিন দিয়ে উপর থেকে পানি দিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করা হলেও দীর্ঘ ১৫ ঘন্টায়ও নিয়ন্ত্রনে আসেনি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের গাজী টায়ার কারখানার আগুন।
ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ বলছেন, ভবনটির ভেতরে প্লাস্টিক, রাবার ও কেমিক্যাল সহ বিভিন্ন প্রকার দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রনে আনতে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হচ্ছে।
স্থানীয়দের দাবি, ভবনটিতে ৪০০ থেকে ৫০০ মানুষ আটকা পড়েছেন। তারা জীবিত আছেন কিনা সে বিষয়ে কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না।
তারা জানান, গত রবিবার (২৫ আগস্ট) বিকেলে কারখানার মালিক নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীকে নারায়ণগঞ্জের আদালত ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলে এর পর পর রূপগঞ্জের রূপসি এলাকায় আনন্দ মিছিল বের করে বিএনপি ও বিভিন্ন সহযোগি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
এসময় শত শত মানুষ গাজী টায়ার কারখানার ভেতরে প্রবেশ করে মেশিনপত্র ও আসবাবপত্র সহ বিভিন্ন সামগ্রী লুটপাট করে নিয়ে যেতে শুরু করে। এক পর্যায়ে লুটপাটের ঢল চলতে থাকলে প্রায় ৫ শতাধিক মানুষ ছয়তলা ভবন টির বিভিন্ন ফ্লোরে উঠে পড়েন। সেখান থেকেও লুটপাট শুরু হয়।
রাত নয়টার দিকে ভবনের নীচতলায় দূর্বৃত্তরা আগুন ধরিয়ে দিলে এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে। এসময় দুই তলা ও তিন তলার জানালা দিয়ে অনেকেই নীচে লাফিয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে আগুন একে একে ছয় তলা পর্যন্ত ছড়িয়ে গেলে ভেতরে আটকে পড়া অনেকেই আর বের হতে পারেননি বলে এলাকাবাসি দাবি করছেন।
সহকারী মহাব্যবস্থাপক সাইফুল বলেন, হামলা শুরুর পর থানাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন জায়গায় ফোন দিলে সেনাবাহিনীর একটি টিম আসে গেটের সামনে। কিন্তু ১০ মিনিটের বেশি তারা দাঁড়াননি। পরে আগুন দেয়ার পর ফায়ার সার্ভিস ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আসে।
এ বিষয়ে এক ব্রিফিংয়ে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ঢাকা বিভাগের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল রেজাউল করিম সোমবার (২৬ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে বলেন, আগুনের খবর পেয়ে রাত ১১টা ৪০ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনতে আমাদের বিভিন্ন স্টেশনের ১২ টি ইউনিট কাজ করছে।
আমরা টিটিএল মেশিন দিয়ে উপর থেকে পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছি। এটি একটি টায়ার তৈরির ফ্যাক্টরি। এতে টায়ার, টায়ার তৈরির কাঁচামাল রাবার ও প্লাস্টিকজাতীয় দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
এছাড়া ভবনটির অধিকাংশ ফ্লোরে প্লাস্টিক, রাবার ও কেমিক্যাল সহ বিভিন্ন ধরণের দাহ্য পদার্থ মজুদ ছিল। যে কারণে এগুলো জ্বলে শেষ না হওয়া পর্যন্ত নেভানো খুবই দু:সাধ্য ব্যাপার। তারপরেও আমরা আগুন নিয়ন্ত্রনে আনতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আমরা ভবনের ভেতর থেকে আহত ১৪ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেছি। তারা এ কারখানার কর্মী নন, মূলত কারখানাটির মালামাল সরিয়ে নিতে তারা এসেছিলেন। তবে ভেততে কি পরিমান মানুষ আটকা পড়েছিলেন সেটি এখন বলা সম্ভব হচ্ছে না।
উল্লেখ্য,এর আগে গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গাজীর রূপসী ও কর্ণগোপের দুটি কারখানায় হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।