নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

রোববার,

২২ ডিসেম্বর ২০২৪

সিদ্ধিরগঞ্জে ১৩ ট্রাক মালামাল লুট করতে না পেরে যুবদল নেতা সাহেদকে ফাঁসানোর চেষ্টা

নারায়ণগঞ্জ টাইমস:

প্রকাশিত:২১:৫৫, ১৭ আগস্ট ২০২৪

সিদ্ধিরগঞ্জে ১৩ ট্রাক মালামাল লুট করতে না পেরে যুবদল নেতা সাহেদকে ফাঁসানোর চেষ্টা

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের হস্তক্ষেপে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী ইপিজেডের এক ব্যবসায়ির কয়েক লাখ টাকার মালামাল রক্ষা পেয়েছে। একটি চিহ্নিত সন্ত্রাসী গ্রুপ ১৩টি ট্রাকে ভর্তি মালামালগুলো লুটপাটের জন্য ট্রাকগুলো আটকে দেয়। খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে পৌছে ১৩টি ট্রাক থানায় নিয়ে যায়। এবং কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত মালিককে মালামালগুলো বুঝিয়ে দেয়ার অনুরোধ জানায়।


এদিকে দলের নাম ভাংগিয়ে ট্রাকের মালামাল লুটপাটের চেষ্টার খবর পেয়ে থানায় ছুটে যান নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব সাহেদ আহমেদ। তিনি শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে পুরো বিষয় অবহিত হয়ে পুলিশকে বলেন, মালামালগুলো ঢাকার এক ব্যবসায়ির। তাদের সকল কাগজপত্র আছে। পরে পুলিশ কাগজ পত্র যাচাই-বাছাই শেষে প্রকৃত ব্যবসায়িকে মালামালগুলো বুঝিয়ে দেয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আবু বকর সিদ্দিক। তিনি জানান, কাগজপত্রে যারা বৈধ তাদেরকে মালামাল বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। 


এদিকে লুটপাটের চেষ্টাকারী চক্রটি প্রচার করছে গভীর রাতে ১৩টি ট্রাক ছিনিয়ে নিয়েছে জেলা যুবদলের সদস্য সচিব সাহেদ আহমেদ। 


প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আদমজী ইপিজেডে অবস্থিত ইউনেস্কো (বিডি) লিঃ এর চুক্তিবদ্ধ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ডিনকুম ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল-এর অনুকুলে কারখানা কর্তৃপক্ষ ১২ ট্রাক ঝুট (ফ্লোর ডাস্ট ও গার্বেজ) এবং ৪ মে. টন কাগজের কার্টুন ও ৫০০ কেজি পলি বিক্রির অনুমতি প্রদান করে।


ডিনকুম প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বৃহস্পতিবার বিকালে ১২ ট্রাক ঝুট ও ৩ ট্রাক কাগজের কাটুর্ন ও পলিসহ মোট ১৫ ট্রাক মালামাল কাস্টমস গেট দিয়ে বের করে নেয়া হয়।


এদিকে দুটি ট্রাক গন্তব্যে যেতে পারলেও একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ সিদ্ধিরগঞ্জ পুল এলাকায় এমএস টাওয়ারের সামনে ১৩টি ট্রাক আটকে দেয়। এবং ট্রাকভর্তি মালামাল লুট করার প্রস্তুতি নেয়। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি টের পেয়ে শিক্ষার্থীদের জানায়। পরে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ও জনতা ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। ঘটনার সত্যতা পেয়ে তারা সেনাবাহিনী ও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে ট্রাকগুলো থানায় নিয়ে যায়। 


এ বিষয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় সমন্বয়ক প্রভাত ও নাহিদ জানায়,  আমাদের ধারাবাহিক কাজের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ পুল এলাকায় ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছিলাম। এসময় খবর আসে কারা যেন আদমজী ইপিজেড থেকে বের হওয়া ১৩টি ট্রাক ভর্তি মালামাল আটকে রেখেছে। এবং লুটপাট করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা ছাত্ররা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি সেনাবাহিনী ও থানা পুলিশকে অবহিত করি। এবং তাদের পরামর্শে ট্রাকগুলো থানায় নিয়ে যাই। এবং পুলিশকে বলেছি, মালামালগুলোর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত মালিকদের বুঝিয়ে দিবেন। পরে জানতে পেরেছি পুলিশ কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে প্রকৃত ব্যবসায়িকে মালামালগুলো বুঝিয়ে দিয়েছে।


সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবু বক্কর সিদ্দিক জানায়, কাগজপত্রে যারা বৈধ তাদেরকে মালামাল বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। 


এ বিষয়ে ইউনেস্কো (বিডি) লিঃ এর চুক্তিবদ্ধ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ডিনকুম ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের ব্যবসায়ি আবু হানিফ হৃদয়ের শ্যালক মো: তোহা জানান, বেপজার সব ধরনের নিয়মনীতি ও কাগজপত্র ঠিক রেখে আমরা ব্যবসা করে আসছি। বৃহস্পতিবার বিকালে আমাদের ১৫ ট্রাক ওয়েস্টেজ মালামাল ডেলিভারী হয়। সিদ্ধিরগঞ্জ পুল এলাকায় ১৩টি ট্রাক আটকে দেয়। তারা ট্রাকভর্তি মালামাল লুটে নেয়ার চেষ্টা চালায়। তখন বিষয়টি আমি আমার চাচাতো ভাই ঢাকা দক্ষিন মহানগর ছাত্রদলের সদস্য সচিব নিলয়কে জানাই। তার পরামর্শে নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সদস্য সচিব শাহেদ আহমদকে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় যান। এরমধ্যে ছাত্ররা ঘটনাস্থলে আসলে যারা ট্রাক আটকে রেখেছিল তারা সটকে পড়ে। এক পর্যায়ে ট্রাকগুলো থানা পুলিশের কাছে বুঝিয়ে দেয় ছাত্ররা। পরে শাহেদ আহমেদ পুলিশকে মালামালের বৈধ কাগজপত্র দেখালে ট্রাকগুলো ছেড়ে দেয়।


এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব শাহেদ আহমেদ বলেন, গত বৃহস্পতিবার আমাদের একটি কেন্দ্রীয় প্রোগ্রাম ছিল। হঠাৎ করে আমার কাছে ফোন আসে যে কে বা কারা সিদ্ধিরগঞ্জ ইপিজেটের মালামাল দলের নাম ভাঙিয়ে লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে। সেই মালামাল ছাত্ররা আটক করে তা সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় নিয়ে আসে। পরবর্তীতে আমরা থানায় যাই বিষয়টি থানার ওসি, এসপি সাহেব ও ও সেনাবাহিনীকে জানানো হয়। পরবর্তীতে ছাত্ররা চেক করল যে ইপিজেডের মাল তাদের পেপারস গুলা ঠিক আছে কিনা। আর পেপার যদি থাকে তাহলে সে মাল কেন লুটতরাজ হবে। যদি সেই সময় সেখানে ছাত্ররা না থাকতো তাহলে মালামাল গুলো লুট করে নিয়ে চলে যেত। ইতিমধ্যে ১৫ গাড়ি থেকে  ২ গাড়ি মাল তারা নিয়েও গেছে বাকি মাল আমাদের ছাত্ররা উদ্ধার করে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে রাত ৯ টার দিকে আমি সেখান থেকে চলে আসি। পরে ছাত্ররা সকল পেপার চেক করে ওসির সাথে কথা বলে যার মাল তাকে বুঝিয়ে দেয়। 

 

তিনি আরও বলেন, একটি মহল যারা এই চাঁদাবাজি ও লুটতরাজ করতেছে। আমি যেহেতু তাদের বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছি তারাই আমার বিরুদ্ধে উল্টো বিভিন্ন মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে আমাকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তারা এতটাই গন্ড মূর্খ যে তারা জানে না ইপিজেডের মাল সরকারি ট্যাক্স ছাড়া বের করা যায় না। তাহলে আমি কিভাবে সে মালামাল ছিনিয়ে নিয়ে আসব। প্রকৃত মালিকরাই তাদের মাল নিয়ে গেছে। 

 

শাহেদ আহমেদ আরও বলেন, এই ঘটনার পিছে আকরাম নামের এক লোক জড়িত। সে নাকি এই আদমজী ইপিজেতের হর্তাকর্তা। আকরাম তো আর দলের কেউ না। সে বিএনপি'র কোন পদ দারি নেতাও না। আমি এত বছর ধরে রাজনীতি করি আমি তাকে চিনি না। সে আবার আমাদের সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন সাহেবের নাম বিক্রি করে। পরবর্তীতে আমরা সাবেক এমপির সাথে কথা বলেছি কেউ কিছুই জানে না। সাবেক এমপি সাব কঠিন সুরে ঘোষণা দিয়েছিলেন ব্যবসায়ীদের কাছে কোন চান্দাবাজি ধান্দাবাজি চলবে না ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবে। আকরাম এমপি সাহেবকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করতেছে। এমপি সাহেবের নাম বলে এই মালামাল লুট করতে চেয়েছিল। আকরাম ইপিজেডের সকল জায়গায় এমপি সাহেবের নাম বিক্রি করে বলেন- এই পৃথিবীতে সকল দায়-দায়িত্ব নাকি তাকে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক জায়গায় সে এমপি সাহেবের নাম বিক্রি করতেছে। আমি এর তীব্র নিন্দা প্রতিবাদ জানাই। আমি জানি আলহাজ্ব মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন সাহেব দলের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। আন্দোলন সংগ্রামে দলের জন্য উনার ভুমিকা অতন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আর এই সকল কাজ যেন না হয় তার জন্য কিন্তু তিনি সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিয়েছেন। আমি জানতে চাই আকরাম কি বিএনপি'র কেউ তাহলে সে কেন বিএনপির নাম বিক্রি করে এ সকল চান্দাবাজি ও ধান্ডাবাজি করছে। তার জন্য কিন্তু আমাদের দলের বদনাম হচ্ছে। কে এই আকরাম? তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানাচ্ছি।