নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

শুক্রবার,

১৮ অক্টোবর ২০২৪

রূপগঞ্জে সড়কের মাঝে বৈদ্যুতিক খুঁটি রেখেই চলছে উন্নয়ন কাজ

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:১৭:৩৭, ১ আগস্ট ২০২৪

রূপগঞ্জে সড়কের মাঝে বৈদ্যুতিক খুঁটি রেখেই চলছে উন্নয়ন কাজ

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ডেমরা-কালিগঞ্জ সড়কের মাঝে বৈদ্যুতিক খুঁটি রেখেই চলছে সড়ক উন্নয়ণ কাজ। খুঁটি অপসারণ নিয়ে জটিলতায় সড়কের বেশ কিছু জায়গায় নির্মান করা হচ্ছে সর্পাকৃতির ড্রেন। এ সড়কের উপজেলার পুর্বগ্রাম থেকে রূপগঞ্জ অংশের শিমুলিয়া পর্যন্ত সাড়ে দশ কিলোমিটার সড়কে রয়েছে দুই শতাধিক বৈদ্যুতিক খুঁটি। এ নিয়ে সড়ক ও বিদ্যুৎ বিভাগের মধ্যে চলছে রশি ঠেলা-ঠেলিতে খুঁটি অপসারণে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।   

রাস্তর মাঝখানে বিদ্যুতের খুঁটি রেখেই সড়ক উন্নয়নের কাজ চলছে। এতে একদিকে যেমন চলাচলে বাধাগ্রস্থ  হচ্ছেন পথচারীরা, অন্যদিকে দুর্ঘটনা শঙ্কা রয়েছে সার্বক্ষণিক। এতকিছুর পরও বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলো অপসারণে জোরালো কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কাউকেই। উল্টো এলজিইডি ও পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ড একে অপরের ওপর দায় চাপাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানাযায়, এই সড়ককে কেন্দ্র করে এর উভয় পাশে গড়ে উঠেছে প্রায় অর্ধশত শিল্প কারখানা। শিল্প কারখানার ভারি যানবাহনের চাপের কারণে গত কয়েক বছর ধরেই সড়কের বেহাল অবস্থা ছিল। এতে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে দেখা দেয় জনদুর্ভোগ। পূর্বে সড়কটি সরু থাকায় শিল্প কারখানার ভারি যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতো। 

তাই সড়কটি প্রশস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আর এতে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখা যায় বিদ্যুতের খুঁটি। প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়কের ওপর ২০০ টির অধিক বিদ্যুতের খুঁটি রয়েছে। কোনোটি সড়কের দুই থেকে আড়াই ফুট আবার কোনোটি দুই পাশের পথোচারী চলাচলের ফুটপাতের মধ্যে আছে।

উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সুত্রে জানাযায়, বৃহত্তর ঢাকা উন্নয়ন প্রকল্প-৪ (জিডিপি-৪) এর অধীনে সড়কটি নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রায় ১৬ কিলো মিটার দৈঘ্যের ডেমড়া-কালীগঞ্জ সড়কটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কর্তৃক ১৮ ফুট প্রস্থে পাকাকরণ ও ৬ ফুট প্রস্থে মাটি ভরাটসহ সম্পুর্ন কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৫ কোটি টাকা।

এনডিই  ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড নামক একটি ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠান এ সড়কের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করছে। চলতি বছরের জুন মাসেই নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ৪৫শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর ওপর বৈদ্যুতিক খুঁটি গুলো সড়কে যানবাহন ও পথোচারী চলাচলে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

সড়কটি নির্মাণ হলে গাজীপুর, নরসিংদী ও ঢাকার সঙ্গে রূপগঞ্জবাসীর স্থল যোগাযোগ আরো একধাপ এগিয়ে যাবে। কাজ শেষ হলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ওপর যানবাহনের চাপ কমবে। ঢাকার সঙ্গে গাজীপুর, নরসিংদী দূরত্ব কমবে। এতে যানবাহনের জ্বালানি খরচ সাশ্রয়ের পাশাপাশি যাতায়াতকারীদের সময় বাঁচবে। কিন্তু দুই পক্ষের রশি টানাটানিতে নির্ধারিত সময় পার হলেও কাজ শেষ হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। 

স্থানীয় অটোচালক বাবুল মিয়া বলেন, ডেমরা-কালীগঞ্জ সড়কটি প্রশস্ত হওয়ায় আমাদের এলাকার লোকদের চলাচলে অনেক সুবিধা হয়েছে। কিন্তু রাস্তায় ও দুইপাশে ফুটপাতের মাঝে ইছাঁখালি থেকে বক্তবাড়ি পর্যন্তই রয়েছে ২০০-২৫০ খুটি। রাস্তায় বিদ্যুতের খুঁটি থাকায় সবসময় ভয়ে ভয়ে চলাচল করি।

সড়ক পাশ্ববর্তি ভক্তবাড়ি এলাকার বাসিন্দা মনির হোসেন বলেন, রাস্তাটির উন্নয়ণ করা হচ্ছে এটা ভালো খবর হলেও সড়কসহ  দুই পাশে হাঁটার জায়গায় বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলোও সরানো হয়নি। খুঁটি থাকায় দুর্ঘটনার আশংকা তৈরী হয়েছে।

এ সড়কের পাশে রূপগাঁও নলেজ এক্স্রচেঞ্জ সেন্টারের স্বপ্নদ্রষ্টা পরিবেশ কর্মি  ব্রাত্য আমিন বলেন , জন গুরুত্বপূর্ন সড়কটিতে বৈদ্যুতিক খুঁটি গুলো যানবাহন ও পথোচারীদের জন্য হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে। খুঁটি অপসারণ নিয়ে জটিলতায় সড়কের বেশ কিছু জায়গায় নির্মান করা হচ্ছে সর্পাকৃতির ড্রেন। খুঁটি অপসারণ না করে সড়ক প্রশস্থ করলেও ভোগান্তি আর দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনডিইর প্রকৌশলী রিমন সরকার জানান,  বৈদ্যুতিক খুঁটি সড়াতে না পারায় ব্যাঘাত ঘটলেও কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে। তবে সড়ক ও ড্রেনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে এমন আঁকাবাঁকা দেখাবে না।

রূপগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী  মেহমুদ মোরশেদউল আল আমিন  বলেন, খুঁটি সরাতে বিদ্যুৎ অফিসে জানালে তারা প্রাক্কলন ফি দাবি করে। আর আমাদের টাকা দেওয়ার মত কোনো সংস্থান নেই। এতো গুলো খুঁটি স্থানান্তর করতে মোটা অংকের একটা অর্থের প্রয়োজন। সড়ক উন্নয়ণ প্রকল্পে এইখাতে কোন বরাদ্ধ না থাকায় এবং পল্লিবিদ্যুৎ প্রাক্কলন ফি ছাড়া খুঁটি গুলো না সরানোর কারণে একটু জটিলতা  দেখা দিয়েছে। 

নারায়ণগঞ্জ পল্লীবিদ্যুতের রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার জোনাল অফিসের ডিজিএম (কারিগরি) শান্তনু রায়  বলেন, ২০২২ সালের দিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ডেমরা-কালিগঞ্জ সড়কের বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণের আবেদন করে। বিধি অনুযায়ী প্রাক্কলন ফি বাবদ ডিমান্ড নোট প্রেরণ করি।

পরবর্তিতে সংশ্লিষ্ট দপÍর পাক্কলন ফি দিতে অপারগতা প্রকাশ করে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ খুঁটিগুলোকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তুলে নেয়ার জন্য বলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ইতিমধ্যে এ সড়কের মাঝে থাকা  ১০-১৫টা খুঁটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
 

সম্পর্কিত বিষয়: