১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ে শহরের চাদমারী থেকে অপহৃত তিন বছরের শিশু আব্দুর রহমানকে অপহরণের ঘটনায় এক নারী সহ দুজন কে গ্রেফতার করেছে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো মমতাজ বেগম (৫৬) ও তার স্বামী জামালপুর জেলার মেলাহন্দ থানার কাউয়া বাড়ীর মোঃ হাবিবুর রহমানের পুত্র ফজলু (৪৬)।
শুক্রবার (১০ মে) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে তাদেরকে জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার চৌধুরী বাড়ী এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। এর আগে
বুধবার (৮ মে) রাতে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ জামালপুল জেলার মেলাহন্দ থানা পুলিশের সহায়তায় কাউটা বাইদ এলাকাস্থ ধানক্ষেতের পাশ থেকে উদ্ধার করে অপহৃত শিশু আব্দুর রহমান কে।
ফতুল্লা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ ফারুক হোসেন জানান, শিশুটির সৎ দাদী গ্রেফতারকৃত মমতাজ বেগম মঙ্গলবার(৭ মে) সকালে আব্দুর রহমান কে অপহরন করে তার বাবা মায়ের নিকট ১০ লাখ টাকা দাবী করে। অন্যথায় তাকে ভারতে নিয়ে যাবে বলে হুমকি প্রদান করে।
অভিযোগ পেয়ে তারা তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় জামালপুর মেলাহন্দ থানা পুলিশের সহায়তায় বুধবার রাতে শিশুটিকে একটি ধান ক্ষেতের পাশ থেকে উদ্ধার করে। তবে সে সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় অপহরনকারীরা।
পরবর্তীতে পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ নিশ্চিত হয়ে শুক্রবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার চৌধুরী বাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে মমতাজ বেগম ও তার পূ্র্বের স্বামী ফজলু কে গ্রেফতার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মমতাজ বেগম পুলিশের নিকট স্বীকার করে যে,শিশুটিকে অপহরন করে প্রথমে রিক্সাযোগে ঢাকার ধলপুর এলাকায় যায়। সেখানে গিয়ে তার পূর্বের স্বামী ফজলুকে সাথে নিয়ে জামালপুরের মেলাহন্দে চলে যায়। এরই মধ্যে অপহৃত শিশুটির পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে মুক্তিপণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা দাবী করে। দাবীকৃত টাকা না পেলে শিশুটিকে ভারতে নিয়ে যাবে। শিশুটির বাবা মা দুই লাখ টাকা প্রদান করার কথা স্বীকার করলে তারা মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে দেয়। পরে তারা পুলিশের উপস্থিতি দেখতে পেয়ে শিশুটিকে নিয়ে পালিয়ে যেতে চাইলে গ্রেফতারকৃত ফজলুর বোন শিশুটিকে রেখে পালিয়ে যাওয়ার কথা বললে তারা শিশুটিকে রেখে পালিয়ে যায়।
তিনি আরো জানান,গ্রেফতারকৃত মমতাজ বেগম ভারতের বাসীন্দা। তিনি একাধিক বিয়ে করেছেন। তার পূ্র্বের স্বামীকে নিয়েই তিনি এ অপহরনের পরিকল্পনা করেন।
অপহৃত শিশুটির বাবা ও মামলার বাদী রবিন জানায়, তার বাবা ছয় মাস পূর্বে মামলার এজাহারনামীয় আসামী মমতাজ বেগম কে বিয়ে করে। তার সৎ মা শিশু সন্তানটিকে আদর করতেন। সে শহরের কালিবাজরস্থ একটি মাংসের দোকানে এবং তার স্ত্রী একটি গার্মেন্টেসে কাজ করে চানমারিস্থ আয়েশা বেগমের বাড়ীতে ভাড়ায় বসবাস করতো। এবং তার সৎ মা একই এলাকার দুলু মিয়ার বাসায় ভাড়ায় বসবাস করে আসছিলো। তারা স্বামী স্ত্রী উভয়েই সকালে নিজ নিক কর্মস্থলে চলে গেলে শিশুটিকে বাদীর সৎ মায়ের নিকট রেখে যায়।
৪-৫ দিন পূ্র্বে তার বাবার সাথে সৎ মায়ের ঝগড়া ও মন মালিন্য হয়। ধারনা করা হয় তার বাবার উপর অভিমান করে সৎ মা শিশুটিকে অপহরন করে নিয়ে যায়। তিনি আরো জানায়,মঙ্গলবার (৭ মে) সকালে তারা স্বামী স্ত্রী উভয়েই নিজ নিজ কমস্থলে চলে গেলে শিশুটিকে প্রতিদিনের ন্যায় তার সৎ মায়ের নিকট রেখে যায়। পরে বেলা ১২ টার দিকে রবিনের বাবা তার স্ত্রী আখি কে জানায়, শিশু সহ তার বাদীর সৎ মা সকাল নয়টার সময় বাসা থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। তখন বাদী তার সৎ মায়ের নাম্বারে ফোন করলে তা রিসিভ করছিলোনা।এক পর্যায়ে বাদীর সৎ মা বাদীকে ফোন করে ফোন করে ১০ লাখ টাকা দাবী করে অন্যথায় শিশুটিকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পাচার করে দিবে বলে জানিয়ে দেয়।
এঘটনায় তিনি বাদী হয়ে তার সৎ মা মমতাজ বেগম (৫৬) সহ অজ্ঞাত নামা আরো ২-৩ জন কে আসামী করে বুধবার(৭ মে) দুপুরে ফতুল্লা মডেল মামলা দায়ের করেন।