ঈদকে সামনে রেখে ফতুল্লায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়লেও থেমে নেই অপরাধীরা। একটু অন্ধকার হলেই রাস্তায় নেমে পরে অপহরনকারী, ছিনতাইকারী,ডাকাত সহ নানা অপরাধীরা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদ ঘিরে প্রতি বছরই এসব অপরাধী তৎপর হয়। এদের নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দারা তৎপর রয়েছে। তার পরও প্রায় প্রতিদিনই ছিনতাই,সন্ত্রাসী কর্মকান্ডসহ চাঁদাবাজির খবর আসছে।
তথ্য মতে, ঈদকে ঘিরে শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্ভর ফতুল্লাঞ্চল জুড়ে এসব অপরাধীরা ছদ্মবেশ ধারন করে নানা অপরাধের সাথে জড়িয়ে পরেছে। এসব অপরাধের সাথে অনেক ভদ্রবেশী অপরাধীরাও রয়েছে। প্রতিটি পাড়া মহল্লায় বৃদ্ধি পেয়েছে অপহরন, ভিন্ন কৌশলের চাদাবাজ চক্র ও ছিনতাইকারীদের তৎপরতা।
ঈদকে ঘিরে অপরাধীদের তৎপরাতায় শঙ্কিত হয়ে পরেছে সাধারন মানুষ। অন্যদিকে, ঈদকে ঘিরে মাদক ব্যবসায়ীরাও সক্রিয় রয়েছে। গুঞ্জন চলছে, ঈদের আগে মাদক মজুদ করার চেষ্টা করছে মাদক ব্যবসায়ীরা। তবে অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সক্রিয় রয়েছে।
একাধিক সূত্র মতে রমজানের শুরু থেকেই অপরাধিরা সক্রিয় হয়ে মাঠে নেমেছে একই সাথে থানা পুলিশ ও অপরাধ দমনে ছক করে মাঠে নেমেছ। ইতিমধ্যেই পুলিশ বেশ কয়েক ডাকাত, ছিনতাইকারী, অপহরনকারী চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়ছে।
রমজানের শুরুতেই ২৪ মার্চ দিবাগত ভোর রাতে ফতুল্লার পঞ্চবটী মেথরখোলাস্থ পঞ্চবটী-মুক্তারপুর সড়ক থেকে ডাকাতির প্রস্ততিকালো দেশীয় তৈরি ধারালো অস্ত্র সহ ডাকাত দলের চার সদস্য কে আটক করেছে পুলিশ।
আটককৃতরা হলো ফতুল্লা মডেল থানার মুসলিম নগর বারেকের বাড়ীর ভাড়াটিয়া আব্দুল বাতেনের প্ত্রু মঞ্জু (২২), মাসদাইর গানতলীর রমজানের বাড়ীর ভাড়াটিয়া আলী আহম্মেদের পুত্র শাওন (২৫), দেওভোগ সামছুলের বাড়ীর ভাড়াটিয়া মনির ওরফে মনা মিয়ার পুত্র মিঠু দেওয়ান (২৩) ও আলীগঞ্জের আক্তার হোসেনের ভাড়াটিয়া মোতাহার হোসেনেরে পুত্র শান্ত হোসেন (২৩)।
এর একদিন আগে ২৩ মার্চ রাত সাড়ে ১০ টার দিকে ফতুল্লার শারজাহান রোলিং মিলস বাজার থেকে তুলে নিয়ে ইয়াসিন ও মনির নামের দুজনকে দাপা চন্দ্রাবাড়ীর একটি পরিত্যাক্ত ঘরে নিয়ে আটকে রেখে নির্যাতন করে মুক্তিপন হিসেবে ৫ লাখ টাকা দাবী করা হয়।
পরে পুলিশ বিষয়টি জানতে পেরে তথ্য প্রযক্তির মাধ্যমে অপহরনকারীদের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে সেখানে অভিযান চালিয়ে অপহৃত ইয়াসিন ও মনির কে উদ্ধার সহ গ্রেফতার করে মাজহারুল নামের এক অপহরনকারীকে। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় অপহরনকারী চক্রের মূল হোতা কামরুল সহ চক্রটির অপর সদস্যরা।
এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাল কস্টেপ পেচানো বেশ কিছু লাঠি, লোহার রড উদ্ধার করে। এঘটনায় গ্রেফতাকৃত মাজহারুল, অপহরনকারীচক্রের মূল হোতা কামরুল,(২২),আল আমিন(২৪), রাসেল(২১), মমিন(২১)তারেক (২৫)রবিন(২৭) সহ অজ্ঞাতনামা আরো ২-৩ জন কে আসামী করে মামলা দায়ের ইয়াসিনের বড় ভাই।
৪ এপ্রিল রাত একটার দিকে ফতুল্লা একটি অটোরিক্সায় করে ৪-৫ জনের ছিনতাইকারীদের একটি দল দাপা বালুরঘাটস্থ কবির নামক এক ট্রাক চালক কে ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সাথে থাকা নগদ ৫ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। পরে তার ডাক চিৎকারে পথচারীরা ধাওয়া করে রাকিব নামক এক ছিনতাইকারী কে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।
২৭ মার্চ রাতে ফতুল্লার বালুরঘাটস্থ জামাইয়ের দোকান গলিতে রশিদ নামক এক পথচারীর নিকট থেকে ছিনতাইকারীরা ২ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী মিল্টন চৌধুরী জানায় একই গলি থেকে তার কর্মচারীর ও টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনতাই করে নিয়ে গেছে। একাধিক বালু ব্যবসায়ী জানায় নদীর তীরে ওয়াক ওয়তে ছিনতাইকারীরা দলবেধে আড্ডা দেয় এবং একটু অন্ধকার হলেই তারা ছড়িয় ছিটিয়ে ওয়াক ওয়ে সহ দাপা বালুরঘাট,ফতুল্লা ঘাট সহ বিভিন্ন গলিতে ছিনতাইয়ের মহাৎসবে মেতে উঠে।
তাছাড়া বালুর ঘাটে রয়েছে চোরাই মাল কেনা বেচার দোকান। সেটি সারাদিন বন্ধ থাকলে ও রাতভর খোলা থাকে একই সাথে চলে নানা বয়সী নানা শ্রেনীর মাদকাসক্তদের আড্ডা।
৬ এপ্রিল রাত সাড়ে দশটার দিকে চানমারী রেললাইন থেকে সাইফুল ইসলাম নামের এক সিএনজি চালক কে অপহরন করে লামাপাড়া এলাকায় নিয়ে গিয়ে একটি রুমে আটকে রাখে। পরে রাত তিনটার দিকে সিএনজি চালকের স্ত্রীর মোবাইল ফোনে ফোন করে মুক্তিপণ হিসেবে দুই লাখ টাকা দাবী করে।
বিষয়টি পুলিশ কে জানালে পুলিশ কৌশল অবলম্বন করে ৭ এপ্রিল রাতে নয়ামাটি লামাপড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে মৃত ইস্রাফিলের পুত্র সাব্বির(২৬), একই এলাকার মৃত শারজাহান দেওয়ানের পুত্র মনির(৩৪) ও লোকমান(২৮) কে গ্রেফতার করে একই সাথে উদ্ধার করে সিএনজি চালক সাইফুল কে।
এর কয়েকদিন আগে ফতুল্লার পঞ্চবটীস্থ কস্তুরি হোটেলের সামনে থেকে ১ লাখ টাকা মুক্তিপণের জন্য এক সিএনজি চালক রাসেল (৪০) কে অপহরন করে অপহরনকারীচক্র। বিষয়টি জানতে পেরে শাসনগাও এলাকায় অভিযান চালিয়ে
অপহরণের ৯ ঘণ্টা পর অপহরণকারীদের কবল থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করেছে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ। এ সময় অপহরণকারীচক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
অপহৃত সিএনজি চালক রাসেল ফতুল্লা মডেল থানার ধর্মগঞ্জের জলিল মিয়ার পুত্র। গ্রেফতারকৃতরা হলো ফতুল্লা মডেল থানার এনায়েত নগরের সরদার বাড়ীর মোঃ আকবর সরদারের পুত্র নুর হোসেন সরদার(৪২) ও হাসান আলীর পুত্র হাবিব সরদার(২৫)।
ফতুল্লা মডেল থানার ইনচার্জ শেখ রিয়াজুল হক দিপু জানায়, ঈদ মৌসুমে যাতে সাধারন মানুষ নিরাপদে চলাচল করতে পারে,বাসায় ফিরতে পারে সেজন্য পুলিশের অতিরিক্ত তিনটি টিম মাঠে কাজ করছে। মোট তেরোটি টিম মাঠে রয়েছে এবং একজন ইনিস্পেক্টর তা সর্বক্ষন তদারকি করছে।
ইতিমধ্যেই বেশ কিছু ছিনতাইকারী, ডাকাত,অপহরনকারী, মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। প্রতিদিনই ছিনতাইকারী, মাদক ব্যবসায়ী সহ অপরাধীরা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হচ্ছে।
তাছাড়া বিভিন্ন মার্কেটগুলোতে নিরাপত্তার দ্ধায়িত্বে পুলিশ সর্বক্ষন অবস্থান করছে একই সাথে ব্যাংকিং নিরাপত্তায় কাজ করছে পুলিশ। তাছাড়া যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশের সাথেও কাজ করছে পুলিশ।