সংবাদ সংগ্রহে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে সাইনবোর্ড এলাকায় অবস্থিত ‘বাংলাদেশ নবজাতক হাসপাতাল লিঃ’ এ সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হয়েছেন সংবাদকর্মীরা। এসময় হাসপাতালের কয়েকজন সাংবাদিকদের হাত থেকে ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে এবং ধমকি দিয়ে সাংবাদিকদের দমানোর চেষ্টা করে। পরে তাদের সাথে সংবাদ কর্মীদের সাথে ব্যাপক বাক-বিতন্ডা হয়।
বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় হাসপাতালটির ভুল চিকিৎসায় এক নবজাতকের মৃত্যুর সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটে। পরে সাংবাদিকদের ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে। এসময় ঘটনাস্থলে সিদ্ধিরগঞ্জ প্রেসক্লাব, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা প্রেসক্লাব এবং সিদ্ধিরগঞ্জ রিপোর্টার্স ক্লাবের সদস্যরা’সহ প্রায় ১৫/১৬ জন সংবাদ কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
তথ্য সংগ্রহকালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কমিউনিকেশন অফিসার বাবু সহ বহিরাগত আরো দুই যুবক ক্যামেরা বন্ধ করে ভিডিও করতে বাধা প্রদান করে। এসময় তারা সাংবাদিকদের সাথে উশৃঙ্খল আচরণ করে বিশৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি করে।
এ ঘটনায় উপস্থিত সংবাদ কর্মীরা সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় বিষয়টি অবগত করলে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং হাসপাতালটির কমিউনিকেশন অফিসার বাবু, সহকারী ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম এবং ডা. মজিবরের সাথে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সম্মুখে কথা বলে। পরে বাবু উপস্থিত সকল সাংবাদিক ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সামনে ক্ষমা প্রার্থণা করেন এবং নিজেদের ভুল শিকার করেন।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক মো. হাসান বলেন, সংবাদ কর্মীরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে কেউ বাধা দেওয়ার অধিকার নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিষয়টি খুবই নিন্দনীয়। অভিযুক্তরা সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে বিষয়টি মিমাংসা করেন।
বেসরকারী স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল ‘বাংলা টিভি’র ক্যামেরা পার্সন মো. সারোয়ার হোসেন জীবন ও বিডি২৪ রিপোর্টের স্টাফ রিপোর্টার মো. নুর নবী বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাংরোডস্থ মাদানী নগর এলাকার এক বাসিন্দার সিজারের নবজাতক ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে সংবাদ সংগ্রহ করতে ঐ হাসপাতালে যাই।
এসময় ভুক্তভোগীরা তাদের অভিযোগ আমাদের জানালে আমরা তা ক্যামেরা বন্দী করি। হঠাৎ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উচ্চ-বাচ্চ শুরু করে আমাদের কাজে বাধা প্রদান করে। তারা আমাদের হাত থেকে মোবাইল ফোন এবং ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। যা আমরা আমাদের ক্যামেরায় ভিডিও আকারে ফুটেজ ধারণ করি।
সংবাদ কর্মীদের করা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, নিহত নবজাতকের এক স্বজন তাদের অভিযোগ সংবাদ কর্মীদের বলছিল। এসময় হাসপাতালের এক যুবক এসে উচ্চ কন্ঠে কড়া কথা বলতে থাকে। পরে ঐ হাসপাতালের কমিউনিকেশন অফিসার বাবু এসে ঐ যুবককে সরিয়ে নিয়ে নিজে এসে সংবাদ কর্মীদের ভিডিও বন্ধ করতে বলেন। পরে ক্যামেরা বন্ধ করতে ধমক দিতে থাকে। পরে তারা চিৎকার চেচামেচি করতে থাকে।
এদিকে নবজাতক মৃত্যুর বিষয়ে ভুক্তভোগীরা জানান, গত ১৮ জানুয়ারি চিটাগাংরোডস্থ সুগন্ধা হাসপাতালে তাদের রোগীর সিজারের মাধ্যমে নবজাতকটির জন্ম হয়। পরে তার অবস্থা সূচনীয় হলে সেখান থেকে সাইবোর্ডস্থ ‘বাংলাদেশ নবজাত হাসপাতাল লিঃ’ এ রেফার্ড করা হয়। সেখানে শিশুটিকে এনআইসিওইউ’তে রাখা হলে বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে শিশুর মৃত্যুর খবর জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এর আগে তারা আমাদের জানায় শিশুর অবস্থা দিন দিন উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু আজ গিয়ে দেখি বাচ্চার গায়ের রং সম্পূর্ণ কালো বর্ণে ধারণ করেছে। আমাদের ধারণা আরো আগেই বাচ্চা মারা গেছে। যা তারা আমাদের কাছে গোপন করেছে।