লেবাসধারী সেই প্রতারক জুলকার নাইন ওরফে নাঈমকে অবশেষে নরসিংদী মাধবদী থানার পুলিশ দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর তাকে ফতুল্লার মাসদাইর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে নরসিংদী কারাগারে প্রেরণ করেছে।
মাধবদী থানার ওসি জানান, জুলকার নাইন সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে ওমরা হজ্ব পালনের জন্য টাকা নিয়ে নিজের ঠিকানা গোপন রেখে প্রতারনা করার অভিযোগে মাধবদী এলাকার জনৈক আব্দুল হক বাদী হয়ে মামলা করে।
২০১৭ সালে আদালতে ৪টি মামলা হলে আদালত প্রতারক জুলকার নাইনকে দোষি সাব্যস্ত করে চারটি মামলাতেই সাজা প্রদান করে। উক্ত মামলার রায় ঘোষণার পর থেকে প্রতারক জুলকার নাইন আত্মগোপন করে।
এরই মধ্যে গত বছর সাংবাদিক হাবিবুর রহমান বাদলের ২১ লাখ টাকা আত্মসাত করে। ২১ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় জুলকার নাইনের বিরুদ্ধে আদালতে চেক জালিয়াতি মামলা করলে আদালত গত ৮ আগষ্ট জুলকার নাইনের বিরুদ্ধে জেল ও জরিমানার রায় ঘোষণা করেন।
এরই মধ্যে গত ১৭ নভেম্বর মাধবদী থানা পুলিশ প্রতারক জুলকার নাইনকে মাসদাইর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে নরসিংদী কারাগারে প্রেরণ করে।
সাংবাদিক হাবিবুর রহমান বাদলের মামলার রায়ে আদালত বলেন, পলাতক জুলকার নাইন এর বিরুদ্ধে এনআই এ্যাক্টের ১৩৮ ধারায় অপরাধ প্রমানিত হওয়ায় তাকে উক্ত ধারায় দোষি সাব্যস্তপূবর্ক ১ বছরের কারাদন্ড এবং চেকে বর্ণিত ২১ লাখ টাকা অর্থ দন্ড করা হয়। এ টাকা অভিযোগকারী পাইবেন। রায় ঘোষনার দিন থেকে ৭দিনের মধ্যে উল্লেখত অর্থদন্ডের সমূদয় টাকা প্রদানের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
অপরদিকে জুলকার নাইনের বিরুদ্ধে মাধবদীর আব্দুল হক যে মামলাগুলি দায়ের করেন, তার চারটিতে সাজা প্রদান করা হলে প্রতারক জুলকার নাইন পলাতক থাকে।
জানা গেছে, মামলাগুলি হলো মাধবদী সিআর-৫৯/১৭, সিআর সাজা রিসিভ নাম্বার-১০৪/২২। মাধবদী সিআর-৬৬/১৭, সিআর সাজা রিসিভ নং-৯৭/২২। মাধবদী সিআর-৬৭/১৭, সিআর সাজা রিসিভ নং-১৩৫/২২ ও মাধবদী সিআর-৬৮/১৭, সিআর সাজা রিসিভ নং-১০৪/২২।
প্রতারক জুলকার নাইনের পৈত্রিক বাড়ি আলীরটেক এবং সে ফতুল্লার মাসদাইর বাজারের সাব্বির আলম খন্দকার সড়কের ইনডেক্স নূর ভিলায় বসবাস করলেও একেক সময় একেক ঠিকানা ব্যবসার করে প্রতারনা করতো।
নরসিংদীতে প্রতারনার সময় সে মাধবদী বাজার এলাকার ঠিকানা ব্যবহার করে। একেক সময় একেক ঠিকানা ব্যবহার করে ধর্ম প্রাণ মানুষের সাথে প্রতারনা করতো বলে জানা গেছে। নরসিংদীতে বাদীর কাছ থেকে ওমরা হজ্বে নেয়ার তথা বলে টাকা নিয়ে তা আত্মসাত করে।
এদিকে চেক জালিয়াতি ও প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাতের মামলায় আলীরটেকের আব্দুল কাদিরের পুত্র প্রতারক জুলকার নাইন ওরফে নাঈমকে গত ৮ আগষ্ট আদালত ১ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ২১ লাখ টাকা অর্থ দন্ড করেন।
জুলকার নাইন ২১ লাখ টাকা হাওলাত হিসাবে সাংবাদিক হাবিবুর রহমান বাদলের কাছ থেকে প্রতারনা করে নেন। পরবর্তিতে উক্ত টাকা জুলকার নাইন চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করার লক্ষ্যে ২১ লাখ টাকার একটি চেক প্রদান করে। দীর্ঘদিন জুলকার নাইন টাকা পরিশোধ না করে বিভিন্ন ধরনের তালবাহানা করতে থাকে।
এক পর্যায়ে সাংবাদিক হাবিবুর রহমান বাদল চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে তা ডিজঅর্নার হয়। পরবর্তিতে হাবিবুর রহমান বাদল আদালতের স্বরনাপন্ন হন। তিনি ২১ লাখ টাকা ফেরত চেয়ে (বর্তমান ঠিকনা) ফতুল্লার মাসদাইর বাজারের ৯৪ শহীদ সাব্বির আলম খন্দকার সড়কের (ইনডেক্স নূর ভিলা) বসবাসকারী জুলকার নাইনের বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতি করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে আদালতে ন্যায় বিচার চেয়ে মামলা দায়ের করেন।
দীর্ঘদিন মামলাটির বিচারকার্য শেষে নারায়ণগঞ্জ যুগ্ম জেলা জজ এসএম মাসুদ জামানের প্রথম আদালত জুলকার নাইনকে দোষী সাবস্ত করে ১ বছর বিনাশ্রম কারাদন্ড ও ২১ লাখ টাকা অর্থ দন্ডের আদেশ প্রদান করেন। রায় প্রদানকালে প্রতারক জুলকার নাইন আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন।