সড়কে ঝরছে তাজা প্রাণ। খালি হচ্ছে মায়ের বুক। প্রিয়জন হারানোর কষ্টের কোনো বর্ণনা হয় না। যে হারায় কেবল সেই বোঝে। অন্যদিক নিহত অনেকের পরিবার পথে বসছে। চরম আর্থিক সংকটে কাটাচ্ছে দিন।
তাদেরও দেখার কেউ নাই। অদক্ষ চালক, মাদকাসক্ত চালকদের যানবাহন চালানো, লক্কড় ঝক্কড় যানবাহন, ঢিলেঢালা ও দুর্ণীতিগ্রস্ত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কারণেই এসব প্রাণহানীর ঘটনা ঘটছে।
তেমনি মৃত্যুকুপে পরিণত হয়েছে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড থেকে কাঁচপুর সেতু অধ্যুষিত এলাকা। এখানে মহাসড়কে নেই কোনো শৃঙ্খলা।
মাসোহারা দিয়ে উল্টো পথে দিব্বি চলাচল করছে নিষিদ্ধ ব্যাটারি চালিত থ্রি-হুইলার, অটো রিকশা, সিএনজি। গত রোববার সকালে উল্টো পথে চলা একটি ইজিবাইকের সঙ্গে মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৫ জনের ঝরে পড়লেও জেগে উঠছেনা কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশ। এ যেনো দেখার কেউ নেই।
জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড থেকে শিমরাইল মোড় ও শিমরাইল মোড় থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত কয়েক শতাধিক ইজিবাইক ও অটোরিকশা চলাচল করছে উল্টো পথে।
মহাসড়কে ব্যাটারি চালিত থ্রি-হুইলার চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও একটি চক্র হাইওয়ে পুলিশের নামে গাড়ি প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা করে মাসোহারা নিয়ে থাকে। এবং মহাসড়কে অবৈধ নিষিদ্ধ গাড়ী অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, হাইওয়েতে টাকা দিয়েই এসব নিষিদ্ধ গাড়ির চাকা ঘুরছে । বিশেষ করে কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের শিমরাইল ফাঁড়িকে ম্যানেজের কারনেই এসব নিষিদ্ধ গাড়ী অবাধে চলছে।
তবে শিমরাইল ফাড়ির দায়িত্বরত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর শরফুদ্দিন বলছেন উল্টো কথা। মাসোহারা নয় জনবল সংকটের কারনে এসব গাড়ি চলাচল করতে পারছেন। তবে জনবল সংকট থাকলেও প্রতিনিয়ত ব্যাটারি চালিত বাহন আটক করে ডাম্পিং করা হচ্ছে।
এদিকে সরেজমিনে মহাসড়কে গিয়ে দেখা গেছে, শিমরাইল মোড় নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের পশ্চিম পাশের কোণা থেকে মহাসড়কে উল্টোভাবে চলাচল করছে ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক ও অটোরিকশা।
এখান থেকে দৈনিক দেড়শতাধিক গাড়ি যাত্রী নিয়ে উল্টোভাবে কাঁচপুর যায় বলে আশপাশের কয়েকজন দোকানদার জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইজিবাইক চালক বলেন, উল্টোভাবে যাওয়ার জন্য হাইওয়ে পুলিশকে মাসে ৩ হাজার টাকা মাসোহারা দেই।
এছাড়া সাইনবোর্ড থেকে মৌচাক বাসস্ট্যান্ড ও মৌচাক থেকে শিমরাইল মোড় হাজী আহসান উল্লাহ সুপার মার্কেট পর্যন্ত ব্যাটারি চালিতসহ বিভিন্ন পরিবহন উল্টোভাবে চলাচল করতে দেখা যায়।
শিমরাইল মোড়ের মানিক নামে একজন দোকানদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উল্টোপথে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনা একটি ইজিবাইকের চালকসহ ৫ জনের মৃত্যু ও কয়েকজন গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনার পরও নিরব শিমরাইল হাইওয়ে পুলিশ। এতবড় ঘটনার পরও এসব নিষিদ্ধ ব্যাটারি চালিত গাড়ি চলছে উল্টোভাবে।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রহমান জানান, মহাসড়কে উল্টোপথে এসব ছোট পরিবহন চলাচলের কারণে প্রতিনিয়তই ঘটছে দূর্ঘটনা। প্রাণ হারাচ্ছে যাত্রী ও গাড়ি চালকরাও।
ঢাকা-চট্টগ্রাম সানারপাড় থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত মহাসড়কে কোন ডিভাইডার বা ইউটার্ন না থাকায় সময় বাঁচাতে অনেক পরিবহন উল্টোভাবে চলে বলে জানান তিনি।
উল্টোভাবে চলাচলের বিষয়ে জানতে চাইলে একাধিক ইজিবাইক ও অটোরিকশা চালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একে সীমনা একেকজন নিয়ন্ত্রন করছে। এসব নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে হাইওয়ে পুলিশের যোগসুত্র রয়েছে। তারা গাড়ি প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা চাঁদা নেয়।
চাঁদার টাকার একটি অংশ হাইওয়ে পুলিশ আরেক অংশ নিয়ন্ত্রকরা নেয়। মহাসড়কে গাড়ি চালালে হাইওয়ে পুলিশ কিছু বলবেনা বলে নিশ্চয়তা দেয় নিয়ন্ত্রকরা। তবে চালকরা নিয়ন্ত্রকদের নাম বলতে অনিহা প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের ওসি নবীর হোসেন বলেন, শিমরাইল এলাকাটি টিআই শরফুদ্দিনের অধীনে। বিষয়টি তিনিই ভালো জানেন এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।