জ্বালানি তেলের অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি ও গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি, ইউরিয়া সারের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ সোনারগাঁ উপজেলা শাখা। মঙ্গলবার (৯ আগষ্ট) সকাল সাড়ে ১০ টায় মোগড়াপাড়া চৌরাস্তায় এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
বাসদ সোনারগাঁ উপজেলার সমন্বয়ক বেলায়েত হোসেনের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সদস্যসচিব আবু নাঈম খান বিপ্লব, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শরীফ, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আক্তার, বাসদ রূপগঞ্জ উপজেলার সমন্বয়ক সোহেল, বাসদ সোনারগাঁ উপজেলা কমিটির সদস্য আনোয়ার খান, ইসহাক মিয়া।
নেতৃবৃন্দ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে যখন জ¦ালানি তেলের দাম কমে এসেছে তখন আমাদের সরকার রেকর্ড পরিমান তেলের দাম বৃদ্ধি করেছে। ডিজেলের দাম ৪২.৫% বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, কেরোসিন ৪২.৫% বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, পেট্রোল ৫১.১৬% বাড়িয়ে ১৩০ টাকা, অকটেন ৫১.৬৮% বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা করেছে।
নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের সময়ে জ¦ালানির মূল্য বৃদ্ধি জনজীবনে ভয়াবহ বিপর্যয় নিয়ে আসবে। জ¦ালানির মূল্যবৃদ্ধি নিত্যপণ্যের মূল্য আরও অনেক বাড়িয়ে দেবে। কৃষি উৎপাদন ব্যয়ও অনেক বাড়বে। ইতোমধ্যে গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির কার্যকর হয়েছে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, বিপিসি গত ৮ বছরে ৪৮ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে। গত কিছুকাল তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বেশি থাকায় সরকার লোকসানের কথা বলে এ দাম বৃদ্ধি করল। দাম বৃদ্ধি করার কারণ হিসাবে ভারতে তেল পাচারের কথাও বলেছে। ভারতে নিয়মিত আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে দাম সমন্বয় করে। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে যাওয়ায় ভারতেও দাম কমে যাচ্ছে।
এখানে পাচারের কথা বলা দাম বৃদ্ধিও একটি অজুহাত মাত্র। ক্রুড অয়েলের দাম এখন আন্তর্জাতিক বাজারে ৯৪ ডলারে নেমে এসেছে। এটা আরও কমবে। তেল থেকে সরকার শতকরা ৩২ টাকা কর নেয়। বিপিসির বিগত দিনের বিপুল পরিমান লাভ বিবেচনায় নিয়ে এবং কর কমিয়ে সরকার জনজীবনের বিপর্যয়ের কথা বিবেচনায় তেলের দাম না বাড়ালেও পারত।
পেট্রোল এবং অকটেন দেশে উৎপাদন হয়। এর দাম বৃদ্ধির আসলে যুক্তিসঙ্গত কোন কারণ নেই। শোনা যাচ্ছে আইএমএফ এর শর্ত পূরণের জন্যই এক লাফে এ মূল্য বৃদ্ধি করা হল। দেশের শ্রমজীবী মানুষের মজুরি বাড়েনি, মধ্যবিত্তের আয় বাড়েনি, জ¦ালানি তেলের ব্যাপক মূল্য বৃদ্ধি তাদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, জ¦ালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে শুরু হয় পরিবহনের নৈরাজ্য। সরকার দূরপাল্লার বাসে ২২.২২% এবং নগরে ১৬.২৭% ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু বাস মালিকরা স্বেচ্ছাচারীভাবে অনেক বেশি পরিমাণে ভাড়া আদায় করছে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে মালিকরা ৪৫ টাকার ভাড়া ৪৪.৪৪% বাড়িয়ে রবিবার ৬৫ টাকা আদায় করেছে।
সোমবার থেকে ৬০ টাকা ভাড়া নেয়া হচ্ছে। সরকার ভাড়া নারায়ণগঞ্জের জন্য ২.৪০ টাকা কিলোমিটারে নির্ধারণ করেছে। ঢাকা নারায়ণগঞ্জের দূরত্ব ১৮.৫ কিলোমিটার তাতে ভাড়া কোনভাবেই ৫০ টাকার বেশি হতে পারে না। নারায়ণগঞ্জে পরিবহন মালিকেরা যাত্রিদের জিম্মি করে ভাড়া আদায় করছে। প্রশাসন এখানে নির্বিকার। পরিবহন মালিকদের কাছে সরকার-প্রশাসনকে সবসময়ই নমনীয় ভূমিকায় দেখা যায়।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার বিইআরসিকে পাশ কাটিয়ে নির্বাহী আদেশে জ¦ালানি তেলের দাম বাড়িয়ে আইন লঙ্ঘন করেছে। এসরকার একবার বিনা ভোটে এবং একবার রাতের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসে।
গণবিচ্ছিন্ন সরকার লুটপাটকারী, দূর্নীতিবাজদের সহায়তায় ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। তাই জ¦ালানি খাতের দূর্নীতি-অনিয়ম দূর না করে দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের উপর বোঝা চাপিয়ে দূর্নীতিবাজ, লুটপাটকারীদেরই রক্ষা করল।
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে জ¦ালানি তেলের বর্ধিত মূল্য ও গণপরিবহনের বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার এবং ঢাকায় ছাত্র মিছিলে হামলাকারী পুলিশের শাস্তি ও ছাত্র নেতৃবৃন্দের নামে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।