নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

শনিবার,

২৩ নভেম্বর ২০২৪

বিপুল পরিমাণ চোরাই পণ্য উদ্ধার 

রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস পণ্য চোরচক্রের মূলহোতাসহ  গ্রেপ্তার ৭

নারায়ণগঞ্জ টাইমস

প্রকাশিত:০৩:৩২, ১১ এপ্রিল ২০২২

রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস পণ্য চোরচক্রের মূলহোতাসহ  গ্রেপ্তার ৭

নারায়ণগঞ্জসহ দেশের পাঁচ জেলায় অভিযান চালিয়ে রপ্তানির জন্য তৈরি করা পোশাক চুরি চক্রের মূল হোতাসহ ৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নারায়ণগঞ্জ।

 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- চোরাই চক্রের মূলহোতা মিজানুর রহমান সোহেল (৪০) সমন্বয়কারী সাইফুল ইসলাম রায়হান (৩২), চোরাই মালের বিক্রেতা তৌহিদুল ইসলাম কাউসার (৪২), চোরাই চক্রের দালাল মোতালিব হোসেন বাবু (৪৮), চোরাইকাজে ব্যবহৃত ট্রাকের মালিক ফারুক হোসেন (২৮), গোডাউনের বিল্লাল হোসেন (৩৪) এবং ট্রাকচালক মো. পারভেজ (৩০)।

 

গ্রেপ্তার প্রত্যেক আসামির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এ সময় বিপুল পরিমাণ চোরাই পণ্য উদ্ধারসহ পণ্য চুরি করে মজুত করে রাখা একাধিক গুদামের সন্ধান পেয়েছে পিবিআই।


রোববার (১০ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ডে নিজ কার্যালয়ে পিবিআইয়ের জেলা পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। এ সময় বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, সহসভাপতি (অর্থ) মোরশেদ সারোয়ার, পিবিআই পরিদর্শক বাতেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।


সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম বলেন, গত বছরের ৫ মে ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরীর ফেইম অ্যাপারেলস লিমিটেড রপ্তানির জন্য ২ কোটি ৯০ লাখ ২৬ হাজার টাকা মূল্যের ১ লাখ ১৮ হাজার ৩২৯ টি পোশাক ‘বিবি খাদিজা ট্রান্সপোর্ট’ ও ‘ইম্পেরিয়াল ট্রান্সপোর্ট’-এর ভাড়া করা চারটি কাভার্ড ভ্যানে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়। 


পরদিন ৬ মে চট্টগ্রাম বন্দরের সিঅ্যান্ডএফ সেই পোশাক গ্রহণ করে রপ্তানির জন্য ছাড় করে। দুই মাস পর ওই পণ্যের জার্মান ক্রেতা বাংলাদেশের ফেইম অ্যাপারেলস কর্তৃপক্ষকে জানায়, তাদের কাছে ৩০ হাজার পিস কম পণ্য এসেছে। 


এ ঘটনায় গত বছরের ১৩ জুলাই ফেইম অ্যাপারেলসের পক্ষে কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি মামলা করেন। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি পিবিআই মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব নেয়। পরে তদন্ত কর্মকর্তা বাতেন মিয়া নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মিরপুর, সাভারের বিরুলিয়া এবং চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও ফটিকছড়ি এলাকায় টানা ১১ দিন অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ চোর চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করেন।


তিনি আরো বলেন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছে, চক্রের মূল হোতা সোহেলের নির্দেশনায় ২০ হাজার টাকা করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে একেকজন কাভার্ড ভ্যানচালককে রাজি করান আসামি রায়হান। পরে শিপমেন্টের জন্য পোশাক কারখানা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হওয়া কাভার্ড ভ্যান সোনারগাঁয়ে আসামি বিল্লাল হোসেনের গুদামে নিয়ে যায়। 


সেখানে সিল ও ট্যাগ অক্ষত রেখে কাভার্ড ভ্যানের দরজার সিটকিনির নাট খুলে রপ্তানির এক-তৃতীয়াংশ পণ্য নামিয়ে রাখেন। প্রতিটি কাভার্ড ভ্যান থেকে গুদামে মাল নামিয়ে রাখার জন্য বিল্লালকে পাঁচ হাজার টাকা দেন সোহেল। জিজ্ঞাসাবাদে বিল্লাল জানিয়েছেন, প্রতি মাসে তাঁর গুদামে সোহেল পাঁচ থেকে ছয়টি ট্রাক নিয়ে পণ্য নামিয়ে রাখতেন।


মনিরুল ইসলাম বলেন, মামলার তদন্তকালে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার ও মাতুয়াইল এলাকায় পিবিআই কাভার্ড ভ্যান থেকে গার্মেন্টস পণ্য সরানোর একাধিক গোপন গুদামের সন্ধান পেয়েছে। কার্টন থেকে পোশাক চুরির পর ওজন ঠিক রাখতে আসামিরা কার্টনের ভেতরে সমপরিমাণ ঝুট (পরিত্যক্ত কাটা কাপড়) ভরে সেগুলো প্যাকিং করে কাভার্ড ভ্যানে উঠিয়ে দিতেন। ওজন ঠিক থাকায় সিঅ্যান্ডএফ চট্টগ্রাম বন্দরে পোশাক চুরির বিষয়টি ধরতে পারত না এবং রপ্তানির ক্লিয়ারেন্স দিয়ে দিত।


আসামি বিল্লালের গুদাম থেকে চুরির মালামাল অপর আসামি রায়হানের মাধ্যমে চক্রের মধ্যস্থতাকারী কাউছারকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। পরে কাউছার মূল হোতা সোহেলের মিরপুরের গুদামে পৌঁছে দিতেন। আসামি সোহেল ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেসব পণ্য বিমানে মালয়েশিয়ার পেনাং, হাংকুয়া, কুয়ালালামপুরে পাঠিয়ে দিতেন। 


অভিযানকালে সোহেলের মিরপুর গুদাম থেকে বিপুল পরিমাণ তৈরি পোশাক জব্দ করা হয়। জব্দ করা পোশাকের কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি সোহেল। এ ঘটনায় পিবিআই বাদী হয়ে রাজধানীর পল্লবী থানায় সোহেলকে আসামি করে মামলা করে।


তিনি আরো বলেন, রপ্তানিযোগ্য তৈরি পোশাক চুরি হওয়ায় বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে গার্মেন্টস মালিকদের সম্পর্কের অবনতি ঘটছে। দেশের গার্মেন্টস মালিকদের প্রতি বিদেশি ক্রেতাদের আস্থাহীনতা ও দেশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি শিপমেন্ট বাতিলসহ নানা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে পোশাক খাত। সংঘবদ্ধ চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। 


এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এটি সাধারণ চুরি নয়। এতে বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশের পোশাক খাত নিয়ে বিরূপ ধারণা পোষণ করে। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়। 


কিন্তু এই ধরনের ঘটনায় সাধারণ চুরির মামলা হলে কয়েকদিন পর জামিন নিয়ে বেরিয়ে যায় আর মামলা দিনের পর দিন চলতে থাকে। এই কারণে এই ঘটনায় চুরির মামলা নিয়ে আমাদের আপত্তি আছে। 


দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে এই ঘটনার জন্য বিশেষ আইন ও আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানাই। এ নিয়ে আমরা বেশকিছু সুপারিশও ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে করেছি।