নারায়নগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার ফতুল্লার কুতুবপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের বিতর্কিত ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মফিজ উদ্দিনকে অবিলম্বে অপসারনের জোড়ালো দাবি তোলার পাশাপাশি দুদক কতৃর্ক তার অঢেল সম্পদের উৎস নিয়ে তদন্তের আহবান জানিয়ে মানববন্ধন করেছে কুতুবপুর ইউনিয়নবাসী।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) সকালে ফতুল্লার পাগলা বাজার এলাকায় অবস্থিত কুতুবপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অদূরে এই মানববন্ধনের আয়োজন করেন মফিজের দ্বারা হয়রানীর শিকার হওয়া প্রায় অর্ধশত সেবাগ্রহীতা। এসময় তারা মফিজের ঘুষ বাণিজ্য, হয়রানী, স্বেচ্ছাচারিতা, ও অসদাচরণের নানা ভোগান্তির কথা তুলে ধরে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
মানববন্ধনে অংশ নেয়া ভুক্তভোগীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সিনিয়র সাংবাদিক মো. সেলিম মুন্সি, পাগলা এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. জাহের মোল্লা, আলীগঞ্জ এলাকার মো. জসিম মোল্লা, ফতুল্লার মো. আলামিন মৃধা, মো. জুয়েলসহ আরও বেশ কয়েকজন ব্যাক্তি। নামজারীর সরকারী ফি ১১শ’ টাকা হলেও ওই ভুক্তভোগীদের কারও কারও কাছ থেকে মফিজ ৩০ থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন তারা।
এছাড়াও তহসিলদার তথা ভূমি সহকারী কর্মকর্তা হলেও মফিজকে ‘স্যার’ বলে সম্বোধন না করলেই ক্ষুব্ধ হয়ে গ্রাহকদের সাথে দুর্ব্যবহার ও অসদাচরণ করে থাকেন। সেবা নিতে এসে অনেকেই মফিজের ঔদ্ধত্যপূর্ন আচরণ ও কথার দ্বারা লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে বলেও অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, কুতুবপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে মফিজের চাহিদামত তাকে ঘুষ বা বাড়তি টাকা না দিলে নামজারি কিংবা জমি সংক্রান্ত অন্যান্য সেবা তো দূরের কথা উল্টো ভোগান্তি পোহাতে হয়।
মফিজ পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে দলটির স্থানীয় পর্যায়ের প্রভাবশালী নেতাদের সাথে সখ্যতা ও কুতুবপুরের বর্ডার ঘেষা জালকুড়ী এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে দায়িত্বশীল চেয়ারে বসেও বাড়তি প্রভাব দেখিয়ে চলতেন।
এছাড়াও সেবা নিতে গেলে মফিজ নিজেকে তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অত্যন্ত প্রিয়ভাজন ব্যক্তি বলে প্রচার করে থাকেন। পাশাপাশি নামজারী সম্পাদনের ক্ষেত্রে ‘উপরের টেবিলেও হাদিয়া’ পাঠাতে হয়; এমন নানা অযুহাত দাঁড় করিয়ে ঘুষের অনৈতিক কারবারকে অনেকটা অবধারিত নিয়মে পরিণত করেছেন।
অফিসের ভিতরে কম্পিউটার অপারেটরদের নামে মফিজ তার ঘনিষ্ঠ লোকদের বসিয়ে ঘুষ বাণিজ্যের সিন্ডিকেট তৈরী করেছে। ওই সিন্ডিকেটের মাধ্যমেও সেবাগ্রহিতাদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে মফিজ।
এসবের মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যেই মফিজ নামে বেনামে একাধিক বাড়ি, গাড়ি ও জমি—জমাসহ অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। ইউনিয়নের একজন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা হয়ে নির্দিষ্ট বেতন পাওয়া মফিজ এমন অঢেল সম্পদ কিভাবে গড়ে তুলেছেন, তার সম্পদের উৎস কী— সেই বিষয়গুলো দুদককে তদন্ত করার আহবান জানান তারা।
মানববন্ধনে ভুক্তভোগীরা আরও বলেন, ‘মফিজের ঘুষ বাণিজ্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে আমরা প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের এমনকি জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোতে অসংখ্য প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও রহস্যজনক কারণে তাকে কুতুবপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের দায়িত্বে বহাল রাখা হয়েছে।
কোন স্বার্থে এমন বিতর্কিত ও ঘুষ কারবারে লিপ্ত ব্যক্তিকে এখনো কুতুবপুরে বহাল রাখা হয়েছে, সেই প্রশ্ন তুলে অচিরেই তাকে অপসারনের জোরারো দাবি জানান ভুক্তভোগীরা।
এদিকে মফিজের বিরুদ্ধে মানববন্ধনের বিষয়ে জানতে চাইলে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, ‘হয়তো ভুক্তভোগী বা ক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা মানববন্ধন করতে পারে।
তবে তার বিরুদ্ধে একটি ঘুষ দাবির অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব আমাকে দেয়া হয়েছে। আমি বাদি—বিবাদী দুই পক্ষের কথা শুনেছি।
বিষয়টি তদন্ত চলছে। দুই—একদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদনটি মাননীয় জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে প্রদান করবো। তিনিই পরবর্তী ব্যবস্থা নিবেন।