ঘুষ দাবি করে বিপত্তিতে পরার পর দৌড়ঝাপ করেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না কুতুবপুরের বিতর্কিত ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মফিজ উদ্দিনের। জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ আমলে নেয়ার পর নির্দেশনা অনুযায়ী অভিযুক্ত মফিজকে নোটিশ দিয়েছে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী।
সোমবার মফিজ উদ্দিনকে প্রেরিত এক নোটিশের মাধ্যমে আগামী ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে হাজির হয়ে অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য প্রদানের নির্দেশনা দেয়া হয়। একই সাথে অভিযোগকারী আল—আমিন মৃধাকেও উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়েছে।
জানা গেছে, ফতুল্লার কুতুবপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মফিজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির অভিযোগ করেছেন একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি আল—আমিন মৃধা। গত ২৫ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং ফতুল্লা রাজস্ব সার্কেলের কার্যালয়ে বাংলাদেশের বৃহৎ একটি জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মফিজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তিনি।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, নামজারীর সকল কাগজপত্র সঠিক হওয়ার পরও আবেদনের পক্রিয়া সঠিক হয়নি মর্মে অজুহাত দাড় করিয়ে কুতুবপুর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মফিজ উদ্দিন ৮ শতাংশ জমির নাম জারি করতে ৮০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেছেন। এমনকি ঘুষ প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করায় মফিজ উদ্দিন ভুক্তভোগী আল—আমিন মৃধার সাথে অসদাচরণ সহ নামজারি করে দেয়নি বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে, এমন গুরুতর অভিযোগ জমা পড়ার দীর্ঘদিন পেড়িয়ে গেলেও মফিজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে এযাবৎ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতেও দেখা যাচ্ছিল না কতৃর্পক্ষকে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলেন ভুক্তভোগীরা। গণমাধ্যমেও ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছিল। অতঃপর মফিজের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের তদন্ত কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, কুতুবপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মফিজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ নতুন নয়। কয়েক মাস আগে প্রভাবশালী এক ব্যক্তির জমির নামজারী করতে ঘুষ দাবি করায় তৎকালিন এসিল্যান্ডের সামনেই মফিজ মারধরের শিকার হয়েছিলেন। চোখের সামনে এমন কাণ্ডের পরও মফিজকে বহাল রাখা হয়েছে। এরপর জাহের মোল্লা নামে এক ব্যক্তির পৈত্রিক সম্পত্তির নামজারী করতে ৩৫ হাজার টাকা ঘুষ আদায় করে পড়েছিলেন বিপত্তিতে।
ফেসবুকে মফিজের ঘুষকাণ্ড নিয়ে পোস্ট করার পর মফিজ লোক মারফত সেই টাকা ফেরত দিলেও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর জেলা প্রশাসনের রাজস্ব সার্কেল থেকে তদন্ত করা হয়েছিল। তদন্তকালে ভুক্তভোগী জাহের মোল্লা রাজস্ব সার্কেলের এক কর্মকর্তার সামনে অভিযুক্ত মফিজের উপস্থিতিতেই তার ঘুষ বাণিজ্যের বিবরণ মৌখিক ও লিখিত জানালেও রহস্যজনক কারণে মফিজ থেকেছেন বহাল তবিয়তে।
একের পর এক অভিযোগের পরও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় যখন সমালোচনা চলছিল, ঠিক তখনই আরেকটি সেবা মূলক প্রতিষ্ঠানের জমির নামজারী করতে ৮০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করে মফিজ। ওই ঘটনায় সেবামুলক প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে নিযুক্ত প্রতিনিধি আল—আমিন মৃধা নামে এক স্বেচ্ছাসেবী জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ফতুল্লার এসিল্যান্ডের বরাবর পৃথক ভাবে অভিযোগ দায়ের করে।
তবে গত ২৫ নভেম্বর অভিযোগ দায়ের করলেও পরবর্তী ১২ দিনেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের। অবশেষে মফিজকে জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার তদন্তের জন্য নোটিশ করা হয়েছে। যা আগামী ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ভুক্তভোগীদের মতে, সুষ্ঠু তদন্ত হলে শাস্তির আওতায় আসবে বিতর্কিত ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মফিজ উদ্দিন।
উল্লেখ্য, কুতুবপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে আসা একাধিক সেবাগ্রহীতাদের দেয়া তথ্য মতে, কাগজপত্রে অসংগতি না থাকলেও নামজারী করার ক্ষেত্রে নানা জটিলতা দেখিয়ে জমির শতাংশ প্রতি নূন্যতম ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা করে ঘুষ দিতে হয় মফিজ উদ্দিনকে। এভাবে গেল বেশ কয়েক বছরে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নেয়ার মাধ্যমে একাধিক আলিশান গাড়ী—বাড়িসহ নামে বেনামে অঢেল সম্পদ গড়েছেন তিনি।
মফিজ কুতুবপুরের বর্ডার ঘেষা জালকুড়ি এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় কুতুবপুরের জমি সংক্রান্ত নানা বিষয়ে তার এখতিয়ার বহির্ভূত প্রভাব খাটিয়ে থাকে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে আওয়ামী লীগের একটি প্রভাবশালী ভূমিদস্যু সিন্ডিকেটের সাথে বিশেষ সখ্যতা গড়ে তুলেছিলেন তিনি। তাকে কুতুবপুর ভূমি অফিস থেকে অপসারণের দাবি জোরালো হচ্ছে স্থানীয়দের মাঝে।