ফতুল্লার কুতুবপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মফিজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে আবারও ঘুষ দাবির অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ইউএনও এবং ফতুল্লা রাজস্ব সার্কেলের কার্যালয়ে বাংলাদেশের বৃহৎ একটি জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এই অভিযোগ দায়ের করেছেন আল আমিন মৃধা নামে এক ভুক্তভোগী।
তার অভিযোগ, নামজারীর সকল কাগজপত্র সঠিক হওয়ার পরও কুতুবপুর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মফিজ উদ্দিন ৮ শতাংশ জমির নাম জারি করতে ৮০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেছেন।
এমনকি ঘুষ প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করায় ভূমি কর্মকর্তা মফিজ উদ্দিন ভুক্তভোগী আল আমিন মৃধার সাথে অসদাচরণসহ তার নামজারি করে দেয়নি বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
আল আমিন মৃধা অভিযোগে বলেন, আমি বাংলাদেশের বৃহৎ একটি জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ফতুল্লা থানাধীন শিয়াচর মৌজার ৮ শতাংশ জমি নামজারী করার উদ্দেশ্যে বিগত ১৩ নভেম্বর অনলাইনে আবেদন করি।
পরবর্তীতে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে ওই সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের অফিসিয়াল মোবাইল ফোনে এসএমএম ও ফোন কলের মাধ্যমে আমাদের নামজারীর কেস নং— ৩৮২৬ বলে জানানো হয় এবং আমাদেরকে কুতুবপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যোগাযোগ করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়।
সেই হিসেবে কুতুবপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি কর্মকর্তা মফিজ উদ্দিনের সাথে কার্যালয়ে গিয়ে দেখা করলে তিনি বিভিন্ন জটিলতা দেখিয়ে আমার কাছে প্রতি শতাংশে ১০ হাজার টাকা করে ৮ শতাংশ জমির নামজারীতে মোট ৮০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করে।
আমি ঘুষ দিতে অস্বীকার করে আমার সকল বৈধ কাগজ রয়েছে বলে জানাই। গত ২৪ নভেম্বর দুপুর ২টার দিকে আমি সকল বৈধ কাগজপত্র নিয়ে পূনরায় কুতুবপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে নামজারীর জন্য গেলে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মফিজ উদ্দিন কাগজপত্র দেখতে অনিহা প্রকাশ করে এবং তার দাবিকৃত ঘুষের টাকা না দেয়ার কারণে সে নামজারী করবে না বলে জানায় এবং আমার সাথে অসদাচারণ করে।
উল্লেখ্য, কুতুবপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মফিজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বেও নামজারী করতে সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষ দাবি এবং আদায়ের একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
নামজারী করতে শতাংশ প্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে ভুক্তভোগীরা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মফিজ উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে কুতুবপুরের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি কুতুবপুরের বর্ডার ঘেষা জালকুড়ি এলাকার বাসন্দিা।
জালকুড়ির বাসিন্দা হওয়ায় কুতুবপুরের জমি সংক্রান্ত নানা বিষয়ে তার এখতিয়ার বহির্ভূত প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে। এসবের মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিকও বনে গেছেন বলে স্থানীয়দের মাঝে কথিত রয়েছে।
তথ্য বলছে, মফিজ উদ্দিন আলিশান গাড়ী দিয়ে চলাচল করেন। তার জালকুড়ি এলাকায় তার বহুতল ভবন এবং নামে বেনামে রয়েছে জমিজমাও। এছাড়াও তার এক ছেলেকে সুদুর কানাডায় রেখে লেখা পড়া করাচ্ছেন।
শুধু কী তাই! নিজ মেয়ের নামে ফতুল্লার পঞ্চবটি এলাকায় জমিসহ বহুতল ভবনও করে দিয়েছেন মফিজ উদ্দিন। তার এই সম্পদের উৎস নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে নানা গুঞ্জন রয়েছে।
এদিকে, ঘুষ দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে কুতুবপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মফিজ উদ্দিন বলেন, তার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এমনকি অভিযোগকারী আল আমিন মৃধা ওই ফাউন্ডেশনের কেউ নন।
তবে সেবামূলক প্রতিষ্ঠানটির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ‘আল আমিন মৃধা তাদের একজন প্রতিনিধি। যেহেতু এটি একটি বৃহৎ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, সেহেতু আল আমিন মৃধা কোনো স্বার্থ ছাড়াই সেবার লক্ষ্যে তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি স্বরুপ এই কাজ করে যাচ্ছেন।’
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’