বন্দর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্সে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছে যুবদল কর্মীরা। বুধবার (৪ ডিসেম্বর) মুক্তিযোদ্ধারা ইউএনও কার্যালয়ে বিজয় দিবস উদযাপনের সভা করার আধঘন্টার মধ্যেই এ ঘটনা ঘটে। বন্দর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্সটি বন্দর শীতলক্ষ্যা নদী ঘাট এলাকায় অবস্থিত।
সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার কাজী নাসির উদ্দিন জানান, মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে উপজেলা পরিষদ আজ মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সভা করে। সভায় আমি ইউএনওকে জানাই যে ৫ আগষ্টের পরে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ থেকে টিভিসহ নানা জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে থানায় পুলিশকে জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা হয়নি। কি হয়েছে দেখতে ইউএনও মোস্তাফিজুর রহমান ও বন্দর থানার ওসি মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম আমাকে সাথে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদে আসেন।
এসময় তাদের সাথে যুবদলের কিছু কর্মীও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দ্বিতীয় তলায় ওঠে। তারা নেমে যাওয়ার পরপরই এই ছেলেদের মধ্যে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা সংসদে ভাংচুর শুরু করে। তারা বঙ্গবন্ধুর পোট্রেট, সাতই মার্চের বক্তৃতার ছবিসহ দেয়াল থেকে নামিয়ে ভাঙ্গে। প্লাস্টিকের চেয়ার ভাঙ্গে।
আলমারির ড্রয়ার ভেঙ্গে ভেতরে থাকা প্লেট-গ্লাসের একটি সেট নিয়ে যায়। নিচে বঙ্গবন্ধুর ছবিতে কালি লেপ্টে দেয়। এসময় আমার সাথে বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হক, মোবারক হোসেন, শফি আহমেদ, লিয়াকত হোসেনসহ বেশ কয়েকজন ছিলেন। তবে এসময় যুবদল কর্মীদের মধ্যে যারা এই এলাকার বাসিন্দা তারা ভাংচুরে অংশ না নিয়ে চলে যায়।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসি জানান, ওসি ও ইউএনও থাকা অবস্থায়ই যুবদলের কয়েকজন ভাংচুর শুরু করে। তাই ওসি ও ইউএনও দ্রুত চলে যান। তবে এটি অস্বিকার করে বন্দরের ইউএনও ও ওসি বলেন, আমরা চলে আসার পরে ঘটনা ঘটে।
ভাংচুরে অংশ নেয়া বন্দর উপজেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির এ প্রসঙ্গে বলেন, ওসি সাহেব ও ইউএনও সাহেব চলে যাওয়ার পরে আমরা গোপন সূত্রে খবর পাই এখানে আওয়ামীলীগের কিছু দোসর মিটিং করছে। এসে আমরা দেখি দেয়ালভর প্রচুর বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি। এগুলি এখনো থাকবে কেন ? তাই আমরা এগুলি নামিয়ে এনে ভাংচুর করেছি।
তবে তার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মুক্তিযোদ্ধা কাজী নাসির উদ্দিন বলেন, শেখ হাসিনার ছবি আগেই নামিয়ে আমরা গোডাউনে রেখেছিলাম। তারা সেখান থেকে বের করে ভাংচুর করেছে। বঙ্গবন্ধুর ছবি নামানোর কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। তাই নামানো হয়নি।
বন্দর উপজেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উল্লাহ টিপু বলেন, তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধারা দেশকে অস্থিতিশীল করার পার্শ্ববর্তী দেশের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এখানে এসেছে জেনে আমরা এখানে আসি।
বন্দর থানার ওসি মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম বলেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদে চুরির ঘটনার ব্যাপারে খোঁজ নিতে সেখানে গিয়েছিলাম। আমরা চলে আসার পরে ভাংচুর হয়েছে। এ ব্যাপারে কেউ কোনো অভিযোগ করতে আসেনি।
বন্দর উপজেলার ইউএনও মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা সংসদে কোনো ভাংচুর হয়নি। সেখান থেকে শুধু বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি নামিয়ে ফেলা হয়েছে।’ বঙ্গবন্ধুর ছবি নামিয়ে ফেলার কোনো নির্দেশনা আছে কিনা বা এটি আইন সম্মত কিনা এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘আইন সম্মত কিনা জানিনা তবে গনভবন থেকেই নামিয়ে ফেলা হয়েছে।