তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে “দশম জাতীয় ত্বকী চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা’২৪” এর পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ভবানী শংকর রায়ের সঞ্চালনায় সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক নিহত ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি’র সভাপতিত্বে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব কবি হালিম আজাদ, ত্বকীকে নিয়ে রচনা লেখায় ‘ত্বকী পদক’ পাওয়া বিজয়ী দেবশ্রিতা পাল, অশেষ লস্কর। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীর মা রওনক রেহানা।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ত্বকী সৃজনশীলতার প্রতীক। প্রতিযোগিতা সৃষ্টিশীলতার জন্য। পুরাতনকে ভেঙে নতুনের সৃষ্টি। শাসকগোষ্ঠী সব সময় তরুণদের ভয় পায়। কারণ এই তরুণরা দেয়াল ভংতে চায়। সমাজের অচলায়তন ভাংতে চায়।
এই ভাঙার প্রত্যয় থেকে তারা দেয়ালে নিজেদের কথা লিখে। এই তরুণরা সমাজে চেপে থাক বিশাল স্বৈরশাসনকে অপসারণ করেছে। আর এই জন্যই সব শাসকই তারুণ্যকে ভয় পায়। তাদের ভয় ছিল ত্বকী। ত্বকী মানুষের ঐক্যের কথা বলেছে। মানুষের ঐক্য।
মানুষ ঐক্যবদ্ধ হলে ক্ষমতা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। আর সেজন্যই ত্বকীর ঘাতকদের তারা রক্ষা দিয়ে চলেছে। শাসকগোষ্ঠীর বদল হলেই হবেনা। স্বৈরশাসন তৈরির যে রাষ্ট্রীয় কাঠামো তার বদল দরকার।
আনু মুহাম্মদ বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পূর্ব শর্ত হচ্ছে স্বাধীন বিচার ব্যাবস্থা। বিচার ব্যাবস্থা স্বচ্ছ ও স্বাধীন না হলে সবকিছুই অর্থহীন হয়ে পড়ে। ত্বকী ছিল অশেষ সম্ভাবনার প্রতীক। অঙ্কুরে এ সম্ভাবনাকে হত্যা করা হয়েছে।
এমনি নির্মম হত্যার বিচার কেন এক যুগেও হলোনা তার জন্য পূর্ববর্তী সরকারের দায় রয়েছে। এখন এ বিচার দ্রুত শেষ করে আইনের শাসনের বাস্তবায়ন করতে হবে।
রফিউর রাব্বি বলেন, রাষ্ট্র কতটা নিষ্ঠুর ও বর্বর হতে পারে তার উদাহরণ এই ত্বকী হত্যা ও এর পরবর্তী বিভিন্ন কার্যক্রম। একটি শিশু হত্যা ঘাতকদের যখন রাষ্টের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সুরক্ষা দেয়া হয় তখন বুঝা যায় রাষ্ট্র কতটা জন-বিরোধী, কতটা নৃশংস।
দুর্বৃত্ত রক্ষার রাজনীতি থেকে পরিত্রাণের জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, কিন্তু আমরা তা থেকে মুক্ত হতে পারিনি। দেশটাকে সকলের বানানোর জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, কিন্তু তা হয় নি। আজকে স্বৈর শাসকের বদল হয়েছে, আমরা ত্বকী সহ সকর হত্যার সুবিচার নিশ্চিৎ হোক।
অনুষ্ঠানে সারা দেশের বিজয়ী ৫০ জনকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। ছয়টি বিভাগে শ্রেষ্ঠ ছয়জনকে “ত্বকী পদক” প্রদান করা হয়। সেরা দশজননের লেখা ও আঁকা নিয়ে প্রকাশিত হয় স্মারক “ত্বকী”।