নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির বার ভবনে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকীর অনুষ্ঠান আয়োজনকে কেন্দ্র করে আওয়ামীলীগ ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মাঝে দফায় দফায় বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।
এসময়ে বিএনপির সাউন্ড সিস্টেমের তার ও ব্যানার ফেস্টুন ছিড়ে ফেলেন আওয়ামীলীগপন্থী আইনজীবীরা। দীর্ঘ এক ঘন্টার বাকবিতন্ডা ও হট্টগোলের এক পর্যায়ে পন্ড হয়ে যায় জেলা আইনজীবী ফোরামের অনুষ্ঠান। সোমবার (৫ জুন) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিএনপি'র প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪২তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের উদ্যোগে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয় জেলা আইনজীবী সমিতির বার ভবনের নিচতলায়।
বার ভবনে বিএনপির আলোচনার অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবী এড. সুইটি ইয়াসমিন এসে বলে মাইক বন্ধ কর নামাজ চলতাছে। পরে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা মাইক বন্ধ করে দিয়ে মাইক ছাড়া বক্তব্যে দিতে থাকেন।
এরপর আবারও এসে এড. সুইটি বলেন, মাইক বন্ধ কর। তোরা বার ভবনে বসে আওয়ামীলীগকে গালাগালি করছোস তোদের এতো বড় সাহস। তখন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এড. সাখাওয়াত হোসেন খানসহ বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা এসে কে মাইক বন্ধ করেছে জানতে চাইলে সুইটি বলেন আমি করেছি। তখন সুইটি বলে নামাজ চলে দেখেন না।
সাখাওয়াত হোসেন খান বলে নামাজ তো শেষ তারপরও কেনো তুমি মাইক বন্ধ করলা। কাজটি ভালো করলা না। তখন সুইটি উত্তেজিত হয়ে বলে কাজটা কি খারাপ করলাম, আপনি কি মারবেন আমারে। এই বলে সুইটি চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকে।
এড. সুইটির চিৎকার চেঁচামেচির এক পর্যায়ে বারের সভাপতি এড. হাসান ফেরদৌস জুয়েল ও সেক্রেটারি এড. মহসিন মিয়ার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা দৌড়ে এসে সাখাওয়াত হোসেন খানসহ বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন।
এসময় বার ভবনে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয় ও সাধারণ আইনজীবীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করতে থাকে। আওয়ামীলীগ ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে দফায় দফায় বাকবিতন্ডা ও হট্টোগোল চলতে থাকে।
বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে এড. মোহসীন মিয়া সাউন্ড সিস্টেমের তার ছিড়ে ফেলেন দেন। এরপর আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা বিএনপির টানানো ব্যানার ফেস্টুনও ছিঁড়ে ফেলে।
এদিকে ব্যানার ছিঁড়ে ফেলায় বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা আরও উত্তপ্ত হয়ে যায়। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের মাহমুদুর হাসান মুমিনের সাথে বিএনপিপন্থী আইনজীবী ওমর ফারুক নয়ন ও সায়েম রানার সাথে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে।
এবিষয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে তারা এসে বাঁধা দেয়।
জুয়েল ও মহসিনে নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের আইনজীবীরা এসে আমাদের নেতাকর্মীদের সাথে খুবই খারাপ আচরণ করেন এবং হাতও তুলেন। শুধু তাই তারা আমাদের সাউন্ড সিস্টেম তার ও ব্যানার ফেস্টুন ছিড়ে ফেলে দেয়। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামীলীগ কিন্তু চিরদিন ক্ষমতা থাকবে না। আমরা সবাই কিন্তু আইনজীবী। এইবারে সকলের সমান অধিকার রয়েছে। আর গণতান্ত্রিক দেশে সভা সমাবেশ করার সকলের অধিকার রয়েছে। কিন্তু আজকে তারা আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে যা করল তার জন্য একদিন তাদেরকেও এর মাশুল দিতে হবে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এড. মুহাম্মদ মোহসীন মিয়া বলেন, আইনজীবী সমিতির কোনো প্রকার অনুমতি ছাড়া বার ভবনে বিএনপি অনুষ্ঠান পালন করছে। জোহরের নামাজের সময়ে তারা সাউন্ড সিস্টেম বাড়িয়ে দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে নানান বক্তব্য দিচ্ছেন। হুজুর কয়েকবার বলার পরেও তারা শুনেনি।
এসময়ে আমরা এসে তাদেরকে বলি সাউন্ড সিস্টেম বন্ধ করেন। আর বারের অনুমতি ছাড়া বার ভবনে অনুষ্ঠান করছেন কার কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছেন। এসময়ে সাখাওয়াত হোসেন খান উত্তেজিত হয়ে বলে আমাদের কোন অনুমতির প্রয়োজন নাই।
তখন আমরাও বলেছি অনুমতি ছাড়া বার ভবনের ভিতরে কোন অনুষ্ঠান করা যাবে না। এক পর্যায়ে তারা আমাদের সাথে হট্টগোল করার চেষ্টা করেন। পরে আমরা সাউন্ড সিস্টেম ও ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে দেই এবং এখানে কোন অনুষ্ঠান হবে না বলে বন্ধ করে দিয়েছি।