আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্তির পথে নারায়ণগঞ্জের মাটির ঘর। গরিবের ‘রাজ প্রাসাদ’ খ্যাত ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর একসময় জেলার গ্রামগুলোতে নজরে পড়লেও এখন এই ঘর নির্মাণে কারো তেমন আগ্রহ দেখা যায় না।এই ঘরে থাকার বিষয়টি ছিল স্বাচ্ছন্দের। মাটির ঘর শীত ও গরম মৌসুমে আরামদায়ক। এ কারণে দরিদ্র মানুষের পাশাপাশি বিত্তবানরাও একসময় মাটির দ্বিতল বাড়ি তৈরি করতেন।বর্তমানে মাটির ঘরের স্থান দখল করে নিয়েছে ইট, সিমেন্ট, বালি ও রডের তৈরি পাকা ঘরগুলো।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়,অতীতে নারায়ণগঞ্জের অধিকাংশ মানুষই মাটির ঘরে বসবাস করতো।মাটির সহজলভ্যতা, প্রয়োজনীয় উপকরণ আর শ্রমিক খরচ কম হওয়ায় আগের দিনে মানুষ মাটির ঘর বানাতে বেশ আগ্রহী ছিলেন। এঁটেল বা আঠালো মাটি কাদায় পরিণত করে দুই-তিন ফুট চওড়া করে বাড়ির দেয়াল তৈরি করতেন তারা। ১২-১৫ ফুট উঁচু দেয়ালে কাঠ বা বাঁশের সিলিং তৈরি করে তার ওপর খড় অথবা টিনের ছাউনি দেওয়া হতো। শুধু একতলাই নয়, অনেক সময় দোতলা পর্যন্ত তৈরী করা হতো মাটি ঘর। এসব মাটির ঘর তৈরি করতে কারিগরদের সময় লাগতো ৫০ থেকে ৬০ দিন। মাটির তৈরি ঘরের দেয়ালে সৌখিন গৃহিণীরা বিভিন্ন রকমের আল্পনা এঁকে তাদের নিজ-নিজ বসত ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতেন।তবে এখনো নারায়ণগঞ্জের মহজমপুর,নানাখি,কালীবাড়ি ,মহজমপুর গ্রামে কিছু বাড়ি দেখা যায়।
গ্রামবাসীদের দাবি,নিজেদের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতেই মাটির ঘর-বাড়িকে আজও ভালোবাসে অনেকেই। মাটির ঘরে শীতের দিনে ঘর থাকে উষ্ণ আর গরমের দিনে শীতল। তাই মাটির ঘরকে গরিবের এসিও বলা হয়ে থাকে।মাটির বাড়িতে বাস করার যে আরাম, তা পাকা বাড়িতে পাওয়া যায় না। গ্রীষ্মের তাপে যখন সব জায়গায় মানুষের নাভিঃশ্বাস ওঠে, তখন মাটির ঘরে বসবাসরত মানুষ আরামে দিন কাটায়। মাটির মধ্যে ফাঁকা দিয়ে বাতাস চলাচল করে। কখনোই খুব ঠান্ডা বা খুব গরমের মধ্যে পড়তে হয় না।গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের মাটির ঘর এখন বিলুপ্তির পথে।
সোনারগাঁয়ের রাইজদিয়া গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম জানান,আমার পূর্বপুরুষেরাও এই মাটির তৈরি বাড়িতে জীবন কাটিয়ে গেছেন।আমারদের বাড়িতে একটা মাটির ঘর ছিলো ।একসময় আমার দাদা পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করতেন।এই ঘরে শীতকালে যেমন গরম অনুভব হয়, তেমনি গ্রীষ্মকালে থাকে ঠাণ্ডা শীতল অনুভূতি।বর্তমানে ইট, বালি ও সিমেন্টের আধুনিকতায় মাটির ঘর এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।