নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে কালের বিবর্তনে ইট-পাথরের তৈরী বহুতল আবাসনের প্রতিযোগিতায় নগর জীবনের আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রামীন ঐতিহ্যের ধারক মাটির ঘর হারিয়ে যেতে বসেছে।
নগরায়নের প্রতিযোগিতায় গ্রাম বাংলার প্রাচীন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য মাটির ঘর বিলীন হতে চলেছে। উন্নত জীবনের আশায় ইট পাথরের পাকা বাসস্থানের পেছনে ছুটছে মানুষ। এক সময় উপজেলার সব খানেই প্রতিটি বাড়িতেই দেখা মিলতো মাটি দিয়ে তৈরী এ বাসস্থানের।
এখন আর মাটির ঘর তেমন চোখে পড়েনা। এতে করে কালের গহবরে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামীণ ঐতিহ্যের ধারক মাটির ঘর।
দুই থেকে তিন দশক আগেও রূপগঞ্জের প্রতিটি বাড়িতেই মাটির ঘর চোখে পড়ত। আধুনিক সভ্যতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জীবনমান উন্নয়নের প্রতিযোগিতায় মানুষ সেখানে তৈরী করছে ইট পাথরের সংমিশ্রনে বহুতল ভবন। তাই এখন আর আগের মতো চোখে পড়েনা মাটির ঘড়। হারিয়ে যেতে বসেছে কালের গহব্বরে।
মানুষ প্রাচীনকাল থেকেই মাটির ঘরে বসবাস করে আসছে। এ ঘর তৈরীতে প্রয়োজনীয় উপকরণের সহজলভ্যতা, আর শ্রমিক খরচ কম হওয়ায় আগের দিনে মানুষ মাটির ঘর বানাতে আগ্রহী ছিল।এসব মাটির ঘর তৈরি করতে কারিগরদের সময় লাগত দুই থেকে তিন মাস। কিন্তু বর্তমানে এর চাহিদা না থাকায় কারিগররাও এই পেশা ছেড়ে অন্য অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়েছে।
মাটির ঘর শীতের সময় উষ্ণ, আর গরমের সময় শীতল থাকে। তাই মাটির ঘরকে গরিবের এসিও বলা হয়ে থাকে। কাদামাটি দিয়ে দেড় থেকে দুই ফুট চওড়া করে ৮ থেকে ১০ ফিট উঁচু দেয়াল নির্মাণ করে টিনের ছাউনি দিয়ে মাটির ঘর তৈরি করা হতো।
যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠান ও উৎসব এলেই কাদামাটির প্রলেপের মাধ্যমে গৃহিণীদের হাতের ছোঁয়ায় সেই মাটির ঘরের সৌন্দর্য আরো দ্বিগুণ হয়ে যেত।মাটির ঘরকে ভেতর ও বাইরে থেকে আরো আকর্ষণীয় করতে আল্পনা আঁকাতেন গৃহিণীরা।
কেউবা এই মাটির ঘরে সিমেন্টের প্রলেপ দিয়ে আরো মজবুত করে তাতে রং বা চুন লাগিয়ে দৃষ্টিনন্দন করত। দূর থেকে দেখে বোঝার উপায় ছিল না এটি মাটির ঘর না পাকা দালান বাড়ি।
তারাব পৌরসভার কর্নগোপ এলাকার গৃহিণী সাহিদা বেগম বলেন, ৩০ বছর ধরে মাটির ঘরে বসবাস করছি আমরা মাটির ঘরেই থাকি। মাটির ঘরে গরমের সময় গরম লাগে না। শীতের সময় শীত লাগে না। মাটির ঘরে থাকা খুবই আরামদায়ক।
রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের মধুখালী গ্রামের প্রবীণ আব্দুল আউয়াল মোল্লা বলেন, ছেলেদের ইট পাথরে পাকা ঘর তৈরি করে দিয়েছি। আমরা বুড়াবুড়ি যতদিন বাঁচি বাবার ভিটা মাটির ঘরেই থেকে যাব।
উপজেলার মুড়াপাড়া ব্রাহ্মণগাঁও এলাকার মাটির ঘর তৈরির কারিগর আনু মিয়া বলেন, একসময় উপজেলায় মাটির ঘরের অনেক কদর ছিল। রূপগঞ্জের প্রতিটি বাড়িতেই মাটির ঘর ছিল।
উপজেলায় এখন আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে ইট পাথরের বহুতল ভবন নির্মাণের প্রতিযোগিতা চলছে। এখন মানুষ মাটির ঘর তৈরি করে না।তাই কারীগররাও এ পেশা পরিবর্তন করেছে।
সরকারি মুড়াপাড়া কলেজের মার্কেটিং বিভাগীয় প্রধান ফয়েজ মোল্লা বলেন, মাটির ঘর পরিবেশবান্ধব। একসময় রূপগঞ্জের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই মাটির ঘর শোভা পেত। শৈশবে আমিও মাটির ঘরে থেকেছি।
নগরায়নের প্রতিয়োগিতায় এখন সে স্থান দখল করে নিয়েছে বহুতল ভবন। কালের বিবর্তনে এই পরিবেশবান্ধব বাসস্থান এখন আর কাউকে নতুন করে তৈরি করতে দেখা যায় না। ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামীণ ঐতিহ্য মাটির ঘর।