নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

বৃহস্পতিবার,

২১ নভেম্বর ২০২৪

ঐতিহাসিক স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য নিদর্শন মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি

নাজমুল হুদা

প্রকাশিত:১৪:৫৬, ৯ মে ২০২৪

ঐতিহাসিক স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য নিদর্শন মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি

প্রাচ্যের  ড্যান্ডি নারায়নগঞ্জের শীতলক্ষ্যার কোল ঘেঁষা সবুজ-শ্যামল গ্রাম মুড়াপাড়ায় ইতিহাসের নীরব সাক্ষী প্রাচীন স্থাপত্য শৈলীর অনন্য নিদর্শন মুড়াপাড়া জমিদার  বাড়িটি আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

ইট, পাথর আর কোলাহলপূর্ণ রাজধানীর খুব কাছে রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের কিছুটা পশ্চিমে এ ঐতিহাসিক বাড়ির অবস্থান। 

দৃষ্টিনন্দন এই জমিদার বাড়ি ভ্রমণপিপাসুদের আকর্ষণ করছে। ঐতিহাসিক স্থাপনাটি পর্যটকদের কাছে খুবই পছন্দের। ফলে বারো মাসজুড়েই দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য ভ্রমণপিপাসু ছুটে আসেন এখানে। 

জানা যায়, রামরতন ব্যানার্জি ছিলেন নাটোরের রাজার এক বিশ্বস্ত কর্মচারী। তার সততার পুরস্কার হিসেবে তিনি মুড়াপাড়া এলাকায় বেশকিছু জায়গীর লাভ করেন। ১৮৮৯ সালে রামরতন ব্যানার্জি এখানে জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৯৯ সালে তার ছেলে বিজয় চন্দ্র ব্যানার্জি পৈত্রিকসূত্রে জমিদারি পেয়ে তা অনেকাংশে প্রসার করেন।

রামরতন ব্যানার্জি এর কাজ শেষ করে যেতে পারেননি। কাজ শেষ করেন তার নাতি জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জি। ১৯০৯ সালে জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জি এ বাড়ির কাজ সম্পন্ন করেন। তিনি এলাকার ক্ষমতাধর জমিদার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। 

জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জি ছিলেন বিজয় চন্দ্র ব্যানার্জীর বড় ছেলে এবং রামরতন ব্যানার্জির নাতি। আশুতোশ নামে তার আরও এক ভাই ছিলেন। বাবার বড় ছেলে হওয়ার সুবাদে জমিদার হন জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জী।

৪০ একর জমিতে ৯৫টি কক্ষ বিশিষ্ট বিশালাকার দৃষ্টিনন্দন জমিদার বাড়িটি তৈরি করা হয়েছিল। প্রাচীন জমিদারদের রাজকার্যসহ বিভিন্ন কাজে এসব কক্ষ ব্যবহার করা হতো। আনন্দ উল্লাসের জন্য ছিল নাচঘর, পূজা-অর্চনার জন্য মন্দির, রাজকার্য পরিচালনার জন্য রাজকক্ষ, অতিথিশালা, কাচারি ঘর, বৈঠকখানা ইত্যাদি।

সদর দরজার সামনে দিয়ে বয়ে গেছে শীতলক্ষ্যা নদী। সে সময় যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম ছিল নৌ-পথ। সে কথা মাথায় রেখেই বোধহয় বাড়িটি নদীর তীর ঘেঁষে নির্মাণ করা হয়েছিল। উত্তর-দক্ষিণে লম্বা দুই তলা একটি দালানকে কেন্দ্র করে বিশাল আয়তনের এই বাড়ি।

হাতের বামে দুটি মন্দির। তার পেছনেই বিশাল আম বাগান। প্রান্তর পেরিয়ে গেলে বাঁধানো চারটি ঘাট বিশিষ্ট একটি পুকুর।

পুকুরের সামনেই খোলা সবুজ মাঠ। মাঠে আম বাগান ও সারি সারি ঝাউ গাছ। বাড়ির মূল ভবনের পেছনে পাকা মেঝের একটি উঠান। উঠানটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। এর চারপাশ দ্বিতল দালান বেষ্টিত। উত্তর পাশেরটি অন্দর মহলের মন্দির। ভবনের এই অংশের পেছনেও আছে আরেকটি দালান। 

এদিকে বাড়িটির সামনে পেছনে ঘাট বাঁধানো পুকুর জমিদার বাড়ির পরিবেশকে করেছে আরও সুন্দর। নান্দনিক এবং কারুকাজপূর্ণ জমিদার বাড়ি দেশের অন্যতম স্থাপত্যশৈলীর ধারক। এটি মুড়াপাড়া রাজবাড়ি নামেও পরিচিত।

১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় জগদীশ ব্যানার্জী এ দেশ ছেড়ে কলকাতায় চলে যান এবং বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। ১৯৪৮ সালে তৎকালীন সরকার বাড়িটি দখলে নেন। এখানে হাসপাতাল এবং কিশোরী সংশোধন কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু করেন।

১৯৬৬ সালে স্কুল এবং কলেজের কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ প্রত্নত্ত অধিদপ্তর বাড়িটির দায়িত্ব গ্রহণ করে প্রত্নতাত্তিক স্থাপনা হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।

বর্তমানে এটি সরকারি মুড়াপাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ নামে পরিচিত। কালের বিবর্তনে জমিদার বাড়িটি আজ শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পর্যটক ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর থাকে।

কীভাবে যাবেনঢাকার সায়েদাবাদ, গুলিস্থান অথবা যাত্রাবাড়ী থেকে যে কোনো বাসে রূপসী বাসস্ট্যান্ড অথবা ভুলতা নামতে হবে। তারপর সেখান থেকে সিএজি অথবা রিকশাযোগে জমিদার বাড়ি। 

এ ছাড়া ডেমড়া স্টাফ কোয়ার্টার থেকে চনপাড়ার পাশ দিয়ে মাঝিনা গাজী সেতু দিয়ে শীতলক্ষ্যা নদী পার হলেই জমিদার বাড়ি।

অন্যদিকে রাজধানীর কুড়িল থেকে ভুলতা গাউছিয়া পর্যন্ত চলাচলকারী বিআরটিসি বাসে ভুলতা। সেখান থেকে সিএনজি বা রিকশাযোগে মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি।

সম্পর্কিত বিষয়: