নারায়ণগঞ্জে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কারো মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও নারায়ণগঞ্জের সরকারি দুটো হাসপাতালে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। এতে আতঙ্ক দেখা দিচ্ছে লোকজনের মধ্যে। তবে কোন ব্যক্তির ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন জেলা স্বাস্থ্য বিভিাগ। কারণ সচেতন না হলে পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
৩০০ শয্যা হাসপাতালের সূত্রমতে, বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সকালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে ৩ জন। হাসপাতালের পুরুষ, মহিলা ও শিশু ওয়ার্ডে প্রতিদিন গড়ে ৬ জন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে। বহি.বিভাগে চিকিৎসা নেয় ১০-১২ জন রোগী। একই পরিস্থিতি শহরের জেনারেল হাসপাতালে (ভিক্টোরিয়া)।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ৮ জন রোগী। এরমধ্যে ৫ জন পুরুষ, ৩ জন নারী। হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোর মিলে প্রতিদিন গড়ে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা গ্রহন করছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ভর্তি হচ্ছে ৪ জন রোগী। যা গত সপ্তাহের তুলনায় দ্বিগুন। হাসপাতালে বহি.বিভাগ থেকেই অধিক রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করছে।
এদিকে হাসপাতালের সূত্র থেকে জানা যায়, বহি:বিভাগে আগত ডেঙ্গু রোগীদের অধিকাংশ প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করছে।
সরেজমিনে জেনারেল হাসপাতালে দেখা যায়, হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে নানা বয়সী ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে। নারী পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে বেড খালি নেই। ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের মধ্যে অধিকাংশ রোগী ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত। রোগী বাড়লে রোগী বারান্দায় বিছানা দিয়েও রোগীর চিকিৎসা করা হচ্ছে।
ওয়ার্ডের দায়িত্বরত নার্স সুলতানা বলেন, রোগী আগের তুলনায় অনেক বাড়ছে। আগে যেখানে ২-৩ জন রোগী ভর্তি হতো। এখন ৫-৬ জন ভর্তি হচ্ছে। আর আউটডোর রোগী তো আছেই। আমাদের ওয়ার্ডে বেড না থাকলে আমরা রোগীকে মেঝেতে বিছানা করে চিকিৎসা দেই। বেড খালি হলেই রোগীকে বেড দেওয়া হচ্ছে।
শহরের দেওভোগ এলাকার বাসিন্দা বকুল। দুইদিন যাবৎ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বকুলের ছেলে বলেন, আম্মুর ৫দিন যাবৎ জ¦র। দুইদিন ধরে হাসপাতালে আছি। কবে ডাক্তার ছুটি দিবে জানি না। আম্মু এখনো অনেক অসুস্থ।
ফতুল্লার বাসিন্দা ফারজানা তার অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসেন। তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, জ্বরে একটা সিজন চলতাছে। প্রথমে ভাবছি সাধারণ জ্বর আসছে, হাসপাতালে এসে পরীক্ষার পর জানলাম ডেঙ্গু জ্বর। বৃষ্টির মৌসুম এলে বাড়ির সামনের রাস্তাঘাট সব পানিতে ডুবে ,পানি জমে। আর মশার উপদ্রব বাড়ে। গত বছর আমার ছোট বোনের ডেঙ্গু হইছে।
জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) এ প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী পূর্বের তুলনায় বেড়েছে। আমরা ইনডোর ও আউটডোরে প্রতিদিন গড়ে ২০ জন নতুন রোগীকে চিকিৎসা দিচ্ছি। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি চিকিৎসা করার। যেকোন পরিস্থিতির জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি। ডেঙ্গু মশা তার সংক্রমণের ধরন বদলে ফেলেছে। আগে এডিস মশা শুধু সকালে এবং সন্ধ্যায় কামড় দিত, কিন্তু এখন সারাদিন এডিস মশা কামড়াচ্ছে। যার ফলে শিশু এবং বয়স্কদের মধ্যেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। চিকিৎসকদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণকে ডেঙ্গুর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সচেতন হতে হবে।
নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমান বলেছেন জেলার ডেঙ্গু পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বলেন, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু এখনো মাত্রাতিরিক্ত আকারে বাড়েনি। এছাড়া ডেঙ্গুতে মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটেনি। তবে পুরো দেশের মতো আমাদের জেলাতেও মশক নিধনে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। সচেতন না হলে পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। কারণ সিত্রাং ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী আমাদের আশেপাশের খালি জায়গায় পানি জমে এডিস মশার উৎপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ডেঙ্গু রোগ থেকে রক্ষায় আমাদের সচেতন হতে হবে। এডিস বাসাবাড়ি বা নির্মাণাধীন ভবনে জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে জন্ম নেয়। বাড়ির আশেপাশে যেন পানি জমে না থাকে, সেইদিকে নজর রাখতে হবে। প্রশাসনিকভাবে জরুরি ভিত্তিতে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে। এছাড়া কোন ব্যক্তির ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে তার প্যারাসিটামল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, দ্রুত ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হতে হবে।