নারায়ণগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতির সাধারণ সভা (এজিএম) ঘিরে চাপা ক্ষোভ ও নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ সদস্যদের মাঝে। স্টাফ-নার্সদের মধ্যেও উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। ফলে সেবার মান মুখ থুবড়ে পড়েছে। তাছাড়া বর্তমানে বিনাপ্রতদ্বিন্ধিতায় নির্বাচিত নব কমিটিতে ডাক্তারের সংখ্যা মাত্র একজন। বাকীরা বিভিন্ন পেশার। আগামী ৩০ জুলাই ডায়াবেটিক সমিতির এজিএম অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এদিন বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছেন অনেক সদস্য।
সাধারণ সদস্যদের মতে, সুবিধাবাদীদের কারণে সেবাদানকারী এ প্রতিষ্ঠানটি এখন আর আগের অবস্থায় নেই। চলমান হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতির কারণে সাধারণ সদস্য ও স্টাফ-নার্সদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। গজামিল দেখিয়ে ডা. শাহনেওয়াজকে মাইনাস, হাসমত উল্লাহ-আজিজুল্লাহ প্যানেলের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো, এবং এজিএম এ সদস্যদের নানা প্রশ্নের জবাব নব গঠিত কমিটি নাকি পুরাতন কমিটি দিবে তা আলোচিত হচ্ছে।
কোন কোন সদস্য জানান, নবগঠিত কমিটিতে জামাত-বিএনপির লোকজনের আধিক্য রয়েছে। তাছাড়া সমিতির নির্বাচনের পূর্বে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে প্রধান উপদেষ্টা করার কথা জানানো হলেও একদিনের জন্যেও ডায়াবেটিক সমিতিতে যাননি তিনি। এমনকি আগের কমিটি এবং নবগঠিত কমিটির সদস্যদের কেউই কোনো আলোচনা বা দেখা করেননি শামীম ওসমানের সাথে। মূলত তার নাম বিক্রি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন অনেকে।
জানা গেছে, সভাপতি-সেক্রেটারী হওয়ার আশায় বেশ কয়েকজন মিলে চক্রান্ত করে দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে সভাপতি ও সহ-সভাপতি পদে থাকা ডা. শাহনেওয়াজ চৌধুরীর সদস্য পদ বাতিল করেছিলো। সাধারণ সদস্যদের অনেকে জানান এ চক্রটির মূলহোতা দেলোয়ার হোসেন চুন্নু সাধারণ সম্পাদক হলেও খায়েশ পূরণ হয়নি অপর চক্রান্তকারী হাসমত উল্লাহর। পূর্ণ প্যানেল দিয়েও শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ে থাকতে না পেরে অসহায় আত্মসমর্পণ করে নির্বাচনের মাঠ ছেড়ে পালিয়েছেন আসমত উল্লাহ ও তার প্যানেল।
আরও জানা গেছে, স্বাস্থ্যখাতের অন্যতম প্রতিষ্ঠান হিসাবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতির নবগঠিত কমিটিতে চিকিৎসক হিসাবে একমাত্র ডা. আতিকুজ্জামান সোহেল আছেন। তিনি সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন চুন্নুর ভাতিজা বলে জানা গেছে। ফলে সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পূর্বেই নিজের পরিবারের সদস্যদের অন্তর্র্ভূক্ত করে অনৈকিত সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করছেন দেলোয়ার হোসেন চুন্নু এমন অভিযোগ করেছে সাধারণ সদস্যদের অনেকে।
এদিকে, এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিএনপি-জামাতের লোকদের নিয়ে গঠিত প্যানেল নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হয় কাশেম জামাল-দেলোয়ার হোসেন চুন্নু পরিষদ এমনটা জানান নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে দাড়ানো অপর প্যানেলের সদস্য ও রিটায়ার্ড পুলিশ কর্মকর্তা আজিজুল্লাহ।
তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, বর্তমান কমিটিতে জামাত-বিএনপির কতজন আছে সেই নিউজ করেন আগে। কাশেম জামাল যে বিএনপি ঘেষা লোক এটাতো সকলেই জানে। আরও কে কে আছে আপনারা দেখলেই তা বুঝতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, এটা আমার কথা না, হাসপাতালের স্টাফ-নার্সরা বা কারা যেন বেনামে আমাদের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে যেখানে এ অভিযোগ ছিলো, আমি সেটাই বলেছি।
নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে দাড়ানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পিস্তলের ভয় দেখিয়ে বসানো হয়েছে আমাদের। তবে কে দেখিয়েছে পিস্তলের ভয় এমন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, আপনারা সাংবাদিকরা খুঁজে দেখেন কে পিস্তলের ভয় দেখাতে পারে।
১৬ জুলাই নবগঠিত কমিটির সভায় ডা. শাহনেওয়াজ চৌধুরীর বিষয়ে রিভিউ আবেদন করেছেন আজিজুল্লাহ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাসমত উল্লাহর সদস্য পদ যখন বাতিল করা হয়েছিলো তখন তিনি রিভিউ’র সুযোগ পেয়েছিলেন। তাহলে ডা. শাহনেওয়াজ কেন পাবে না এই দাবি জানিয়ে আমি রিভিউ আবেদন করেছি।
অপরদিকে, প্যানেল দিয়েও পরাজয়ের ভয়ে মাঠ ছেড়ে দেয়া সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী হাসমত উল্লাহ’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রথমত আমি সভাপতি প্রার্থী ছিলাম। কিন্তু প্যানেলের সবাই বললো কাশিপুর ইউপি চেয়ারম্যান সাইফ উল্লাহ বাদল সভাপতি পদে নির্বাচন করবে, তাই আমি সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু যখন দেখলাম দেলোয়ার হোসেন চুন্নুও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করবে তখন আমি সরে দাড়াই। এর কারণ হিসাবে তিনি বলেন, চুন্নুর সাথে আমি কিভাবে নির্বাচন করবো। আমি জয়েন্ট সেক্রেটারী সমমর্যাদার পদে দীর্ঘসময় কর্মরত ছিলাম তাই আমি সরে দাড়িয়েছি।
তিনি আরও বলেন, দ্বিতীয়ত প্যানেলের অনেকেই বেঈমানী করেছে তাই বেঈমানদের সাথে আমার কোনো সর্ম্পক নেই। ডা. শাহনেওয়াজ চৌধুরীর সদস্যপদ বাতিল করলেন আপনি নিজেও সাধারণ সম্পাদক হতে পারলেন না বিষয়টা কিভাবে দেখছেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, শাহনেওয়াজ আমার সদস্য পদ বাতিল করেছিলো, আমি আইনিভাবে জিতেছি। জিতে এসে তার সদস্যপদ নিয়ে চ্যালেঞ্জ করেছি, তার সদস্য পদ অবৈধ ছিলো, সে তা হারিয়েছে।
তাহলে কি আক্রোশের কারণেই শাহনেওয়াজ চৌধুরীর সদস্যপদ বাতিল করেছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সে আমারটা বাতিল করেছে আমি কি বসে থাকবো নাকি।
এসব বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন চুন্নু বলেন, প্রতিপক্ষ কেন নির্বাচন থেকে সরে দাড়িয়েছে তা আমি কিভাবে বলবো। পিস্তলের ভয় দেখিয়ে নির্বাচন থেকে বসানো হয়েছে আজিজুল্লাহ’র এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
আপনাদের কমিটিতে জামাত-বিএনপির আধিক্য রয়েছে আজিজুল্লাহ’র অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, কে জামাত-বিএনপি করে আমি চুন্নু নাকি কাশেম জামাল তার নাম বলতে বলেন আজিজুল্লাহ সাহেবকে। মূলত আমাদের এখানে জামাত-বিএনপির কেউ নেই।
স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক এমন একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটিতে কতজন ডাক্তার রয়েছে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে বলেন কেউ নেই। পরে বলেন, ডা. আতিকুজ্জামান সোহেল রয়েছে। তিনি তো সম্পর্কে আপনার ভাতিজা হয় একথা বললে তিনি কিছু সময় চুপ থেকে তারপর বলেন, আপনি তো সবই জানেন। সব জেনে তাহলে প্রশ্ন করছেন কেন?
৩০ জুলাই ডায়াবেটিক সমিতির সাধারণ সভা (এজিএম) হবে, যেখানে বিগত বছরের হিসাব-নিকাশ চাওয়া হবে। যেহেতু বিগত কমিটির সভাপতির সদস্য পদ বাতিল করা হয়েছে তাহলে সাধারণ সদস্য তথা নবগঠিত কমিটি কার কাছে হিসাব চাইবে এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেন নি তিনি। তবে বলেছেন, অডিট হয়েছে অডিট অনুযায়ী হিসাব-নিকাশ করা হবে।
শাহনেওয়াজ চৌধুরীর বিষয়ে রিভিউ আবেদন সম্পর্কে তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি করা হয়েছে, তারা যে রিপোর্ট দিবে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত: ডা: শাহনেওয়াজ চৌধুরী সদস্য পদ নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির ৫ জনই বর্তমান কমিটিতে রয়েছেন। তারা বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ নিয়ে নানা কথা চালু আছে নগরজুড়ে। যারা তদন্ত কমিটিতে ছিলেন তারাই আবার ডায়াবেটিক সমিতির নব কমিটিতে যুক্ত হলেন এটা কেমন কথা। তাহলে ধরে নেয়া যায়, যেই চক্রটি ডা: শাহনেওয়াজের জন্য অবৈধ সুবিধা নিতে পারেনি তারাই তদন্ত কমিটির যোগ সাজসে ডা. শাহনেওয়াজের সদস্য পদ বাতিল করেছে। এমন কথা সাধারণ সদস্যদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে।