ফতুল্লার কাশীপুর হাটখোলা স্কুল নিয়ে গরম হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক। স্কুল ম্যানেজিং কমিটি ও স্কুলের মান নিয়ে সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছে স্কুলে সাবেক শিক্ষার্থী ও তরুণদের একটি দল। বিপরীতে তাদের ঠেকাতে নেমেছেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। যদিও তাদেরকে স্বৈরাচারের দোসর ও ম্যানেজিং কমিটির দালাল বলে আখ্যায়িত করছে বিদ্রোহীরা। ফলে এই দুই পক্ষের আঘাত-পাল্টা আঘাতের এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠছে।
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হাটখোলা উচ্চ বিদ্যালয়কে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভিত্তিক প্লাটফর্ম আলোকিত কাশীপুর-এ একটি স্টাটাস দেন জনৈক নারী। এরপর আরও একজন স্কুল ম্যানেজিং কমিটি ও বর্তমান অবস্থা নিয়ে লেখেন,
‘ হাটখোলা উচ্চ বিদ্যালয়: সোনার কাঠি রূপার কাঠি!
বিগত সরকারকে মাত্র টানা ১৬ বছর শাসনের কারণে তাদেরকে স্বৈরাচার বলা হচ্ছে। অথচ টানা ২৪ বছর ধরে স্কুল ম্যানেজিং কমিটিতে থেকেও লোকগুলো স্বৈরাচার নয়। ক্ষমতা ও পদ তাদের কাছে যেন পৈত্রিক বসতবাড়ি।
‘একটা মরে, একটাই পদ খালি হয়’- এই নীতিতে কমিটির শুন্যপদ পূরণ করা হচ্ছে।
বর্তমানে কমিটিতে অন্তত তিনজন ব্যক্তি আছেন, যারা ম্যানেজিং কমিটি শব্দ দুটো ইংরেজিতে লিখতে গিয়ে নিশ্চিত কলম ভেঙে ফেলবেন।
শেইম শেইম শেইম।
২৪ বছরে এই স্কুলের উপজেলা, জেলা এমনকি জাতীয় পর্যায়ে কোন অর্জন নেই।
২৪ বছরে ম্যানেজিং কমিটি বসে বসে যে পরিমাণ টাকার চা-বিস্কুট খেয়েছে সেই টাকা যদি কয়েকজন শিক্ষার্থীর পেছনে ব্যয় করা হতো তবে তারা জাতীয় পর্যায়ে মেধার স্বাক্ষর রাখতো।
আরও অনেক বিষয় নিয়ে লেখা যাবে। কিন্তু লজ্জা তাদের স্পর্শ করে না।
সুতরাং স্কুল রক্ষায় ও স্কুলটিকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে যেতে আজ থেকে একদফা- পুরো ম্যানেজিং কমিটির সকল সদস্যের পদত্যাগ।’
ফেইসবুকে এমন লেখার পরে নানা রকম মন্তব্যে গরম হয়ে উঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। পরে স্কুল কমিটি এসব সর্ম্পকে তাদের নিজস্ব ফেইসরুক পেইজে একটি কৈফিয়ত তুলে ধরে।
কিন্তু এটাকে দায়সারা বলে মন্তব্য করেছেন এলাকার অনেকেই। এলাকাবাসী ভাষ্য, ফেইসবুকের ওই লেখা শতভাগ সত্য। ১২শত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি ফি বেতন ও উন্নয়ণ ফি বাবদ বছরে ২৫ লাখ টাকার উপরে আয়। এরউপরে আবার কমিউনিটি সেন্টার বানিয়ে ভাড়া দিয়ে বাড়তি ইনকাম রয়েছে। কিন্তু সে তুলনায় উন্নয়ন ও শিক্ষার মান সন্তোষজনক নয়। এমনকি প্রতিষ্ঠার ২৪ বছরে স্কুলটি এমপিওভুক্ত করেনি। ৮-১০ জন ব্যক্তিই ঘুরেফিরে ২৪ বছর ধরে কমিটিতে রয়েছেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) কমিটি অনুমোদন করেছেন বলে দাবি করলেও বিষয়টি সঠিক নয়। কারণ মাউশি কখনো ম্যানেজিং কমিটি অনুমোদন করে না।
এ বিষয়ে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে ফেইসবুকের লেখা সর্ম্পকে তিনি শুনেছেন বলে জানান।
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নাজির হোসেন শিকদার সরকারী প্রজ্ঞাপনের পরে দায়িত্ব থেকে দূরে রয়েছেন।
স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মোমেন সিকদারের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। স্কুলে গিয়ে জানা গেছে, হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হবার পরে তার বাড়িতে অভিযান চালায় যৌথবাহিনী। এরপর থেকে পলাতক রয়েছেন তিনি।