নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

রোববার,

০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

উত্তপ্ত সোনারগাঁও, বিভক্ত আ’লীগ, বাতাস দিচ্ছে জাপা

নারায়ণগঞ্জ টাইমস:

প্রকাশিত:১৯:৪৬, ১৯ মে ২০২৪

উত্তপ্ত সোনারগাঁও, বিভক্ত আ’লীগ, বাতাস দিচ্ছে জাপা

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দ্বিতীয় ধাপের ভোট মঙ্গলবার (২১ মে)। নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁও উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, তাঁরা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম (ঘোড়া প্রতীক), উপজেলার সদ্য সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বাবুল হোসেন ওমর (আনারস প্রতীক), উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম (মোটরসাইকেল প্রতীক) ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী হায়দার (দোয়াত-কলম প্রতীক)। তবে মূল লড়াইটা হবে ঘোড়া ও আনারস প্রতীকের মধ্যে। এই দুই প্রতীকের প্রার্থীকে ঘিরে রীতিমত বিভক্ত হয়ে পড়েছে সোনারগাঁও আওয়ামীলীগের শীর্ষনেতারা। আর এই বিভক্তির মধ্যে বাতাস দিচ্ছেন জাতীয় পাটির সমর্থিত সাবেক এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা। তিনি বর্তমান সদস্য সদস্য ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল কায়সারের সঙ্গে সুর মিলিয়ে আনারস প্রতীকের প্রার্থী বাবুল হোসেন ওমরকে সমর্থন যোগাচ্ছেন। এছাড়া চেয়ারম্যান পদে রফিকুল ইসলাম নান্নু ও মোহাম্মদ আলী হায়দার অনেকটা নীরবে নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে বাবুল ওমর বাবুকে সমর্থন দিচ্ছেন। তাই কাগজে কলমে নির্বাচনে প্রার্থী হলেও তাদেরকে নির্বাচনী প্রচারণার মাঠে আর দেখা যাচ্ছে না। 


বারদী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বাবুল আনারস প্রতীকের নির্বাচনী প্রচারণায় সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সারের সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি বীরদর্পে প্রকাশ করেন।


অপরদিকে সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সারের চাচা আওয়ামী লীগ নেতা মনির হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য মোবারক হোসেনের ছেলে এরফান হোসেন দ্বীপ, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনের ছেলে তান্না মোশাররফ আনুষ্ঠানিকভাবে মাহফুজুর রহমান কালামকে সমর্থন দিয়েছেন। এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু জাফর চৌধুরী বিরুর সমর্থনও পাচ্ছেন কালাম।


এদিকে উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি গাজী মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহফুজুর রহমান কালামের নির্বাচনী প্রচারণায় বক্তব্যকালে বলেন, ‘ভোটের বেপারি হয়েন না, ভোটের বেপারি হয়ে সুবিধা করতে পারবেন না।’ এই বক্তব্যে আব্দুল্লাহ আল কায়সারকে ইঙ্গিত করা হয়েছে দাবী করে এর প্রতিবাদে মানববন্ধন ও থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম সাগর। আবার গাজী মুজিবুর রহমান সংবাদ সম্মেলন ডেকে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তার দাবি উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে বক্তব্যে সংসদ সদস্যকে জড়ানো হচ্ছে।


ওদিকে মাহফুজুর রহমান কালামের সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ফেক আইডি ব্যবহার করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নানা ধরনের হুমকি প্রদানসহ তাদের নামে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য প্রকাশ করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম মঙ্গলবার (১৪ মে) রাতে সোনারগাঁও থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন।


এছাড়া একইদিন মঙ্গলবার রাতে নির্বাচনী প্রচারণায় চেয়ারম্যান প্রার্থী বাবুল ওমর তার বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরুর বংশ সোনারগাঁও থেকে উচ্ছেদ করার হুমকি দেন। এমন বক্তব্যের ভিডিও নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হলে ডা. বিরুর সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। প্রতিবাদে শুক্রবার (১৭ মে) তার সমর্থক জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান হামীম শিকদার শিবলুর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে বাবুল ওমরকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেওয়া হয়।


বাবুল ওমরের সমর্থক জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ুন কবির ভুইয়া শুক্রবার জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সোনারগাঁও থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তার দাবি মাহফুজুর রহমান কালামের সমর্থকরা তাকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন।


ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরু বলেন, ‘বাবুল ওমরের বক্তব্য নির্বাচনী এলাকাকে অস্থির করে তুলেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় প্রার্থী না দিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঠ উন্মুক্ত করে দিয়েছে। কালাম ভাই রাজনীতিতে সিনিয়র ও যোগ্যতা সম্পন্ন হওয়ায় আমি তার পক্ষে কাজ করছি। এ জন্য বাবুল ওমর আমাকে বংশ উচ্ছেদের হুমকি দিয়েছেন। ইতোমধ্যে প্রশাসন তাকে শোকজ করেছে। আমি তার হুমকিতে ভীত সন্ত্রস্ত।’


বৃহস্পতিবার (১৬ মে) রাতে উপজেলার শম্ভুপুরা ইউনিয়নের চর কিশোরগঞ্জ এলাকায় একটি উঠান বৈঠক থেকে আনারস প্রতীকে ভোট না দিলে ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে নিষেধ করা হয়। বাবুল ওমর ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন। শনিবার (১৮ মে) ওই উঠান বৈঠকের একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।


ভিডিওতে দেখা যায়, চেয়ারম্যান প্রার্থী বাবুল ওমরসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মঞ্চে বসে আছেন। মাইকে বক্তব্য দিচ্ছেন নাসির উদ্দিনের ছেলে রাসেল উদ্দিন। ভিডিওতে রাসেল উদ্দিনকে বলতে শোনা যায়, ‘এখানে (চির কিশোরগঞ্জে) আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একজনই, সে হলো আনারসের বাবুল ওমর। এ ছাড়া যত মার্কা, সব নৌকা ছিদ্র করার লাইগা। তো, দ্বিতীয় কোনো কথা চলব না। চর কিশোরগঞ্জের সব ভোট আনারস। অন্য কোনো মার্কায় কোনো ভোট পড়ব না। পড়তে পারে দু-একটা। ১০ জনের মধ্যে দুয়েকটা দুষ্টু গরু থাকে। তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, ঘরেই থাকেন। যদি আনারসে ভোট দিতে চান, কেন্দ্রে আইসেন, না দিতে চাইলে ঘরে থাইকেন। আপনাদের ভোটের দরকার নাই। সব ভোট আনারসের। যে কথা নাসির মেম্বার বইলা গেছে, সে কথাই শেষ, চর কিশোরগঞ্জের ভোট রিজার্ভ। দ্বিতীয় কোনো কথা, দ্বিতীয় কোনো নেতা চর কিশোরগঞ্জে জন্মায় নাই, জন্ম হইব না।’


মোটকথা মাহফুজুর রহমান কালাম ও বাবুল ওমরের পক্ষে বিপক্ষে সমর্থন দেওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। পাশাপাশি হুমকি-ধামকি। কেন্দ্র দখল ও জালভোটের আশংকা প্রার্থীদের। এমন পরিস্থিতিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে নির্বাচনী মাঠ। ফলে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফেরা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে ভোটারদের মধ্যে। যদিও রিটার্নিং কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাকিব আল রাব্বি জানিয়েছেন, সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।