নারায়ণগঞ্জ টাইমস | Narayanganj Times

বৃহস্পতিবার,

২১ নভেম্বর ২০২৪

এতোদিন ভয়ে মুখ না খুললেও এখন প্রকাশ্যে আসছে নানা অভিযোগ

নারায়ণগঞ্জ টাইমস:

প্রকাশিত:২১:৪৭, ১৪ অক্টোবর ২০২৪

এতোদিন ভয়ে মুখ না খুললেও এখন প্রকাশ্যে আসছে নানা অভিযোগ

নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও মর্গ্যাণ গার্লস স্কুলের গভর্নিং বডির সাবেক সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক ও স্কুলটির সাবেক দাতা সদস্য আহসান হাবিবের প্রভাব খাটিয়ে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি করতেন স্কুলটির সদ্য পদত্যাগকারী সহকারী প্রধান শিক্ষক লায়লা আক্তার। আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী দুই নেতার আস্থাভাজন হওয়ায় তার অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে ভয়ে মুখ খুলতো না কেউ। তবে, আওয়ামীলীগের পতনের পর ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে আসছে তার নানা অন্যায়, জুলুম, নির্যাতন, অনিয়ম-দুর্নীতির খবর।

 

স্কুলটির শিক্ষকরা বলছেন, আনোয়ার হোসেন, আহসান হাবিব ও লায়লা আক্তারের মধ্যে অত্যন্ত গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান ছিলো, যা সকলেই জানে। এই সম্পর্কের কারণে তাদের প্রভাব খাটিয়ে লায়লা আক্তারের অপকর্মের কোনো কমতি ছিলো না। শিক্ষকদের সাথে অসদাচরণ, শিক্ষকদের প্রতিনিয়ত অপমান-অপদস্থ করা, স্কুলের কর্মচারীদের দিয়ে নিজের বাসার কাজ করানো এমনকি মর্গ্যাণ গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অশোক কুমার তরু স্যারের সাথেও ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির এক সাধারণ মিটিংয়ে লায়লা আক্তার সকল শিক্ষকের সামনে সাবেক এই অধ্যক্ষের চেয়ার লাথি মেরে তাকে লাঞ্চিত করেন বলেও জানায় শিক্ষকরা। ঐ ঘটনায় তাকে শোকজ করা হলেও বিন্দুমাত্র সংশোধিত হননি তিনি। উল্টো তার অত্যাচার জুলুমের মাত্রা বেড়ে যায় কয়েক গুন। আনোয়ার-হাবিবের প্রভাবে প্রিন্সিপালের টেবিল চাপড়ে প্রভাব বিস্তার করে লায়লা আক্তার বলতেন, আপনার মতো প্রিন্সিপালকে আমি মানি না। অশোক তরু স্যারের পরে নিয়োগপ্রাপ্ত আবুল কালাম আজাদ স্যারের সাথেও একই ধরনের আচরণ করার অভিযোগ লায়লার বিরুদ্ধে।

 

এছাড়া, স্কুলে বিশেষ কোচিং করানোসহ নানা অযুহাতে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের কাছ প্রতি মাসে অর্থ নেয়ার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। কোনো শিক্ষার্থী সেই কোচিং করতে না চাইলে তার উপর নিমর্ম নির্যাতন চালানোরও অভিযোগ রয়েছে লায়লা আক্তারের বিরুদ্ধে। তিনি শিক্ষার্থীদের প্রবেশ পত্র, রেজিষ্ট্রেশন আটকে দিতেন এমন অভিযোগ অসংখ্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। সারা বছর কোনো বিশেষ ক্লাস না করেও পুরো বছরের কোচিং ফি দিতে হয়েছে অনেক শিক্ষার্থীর অভিভাবককে। এ বিষয়ে প্রায়ই বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত ও প্রচারিত হতো। তবে, আনোয়ার-হাবিবের আস্থাভাজন হওয়ার তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হতো না। তবে, এবার নানা অনিয়মের অভিযোগে গত ২১ আগস্ট স্বেচ্ছায় ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন লায়লা আক্তার। তখন পদত্যাগ করলেও এখন দুষ্টচক্রের সহায়তায় নতুন করে আবার সেই পদে ফিরতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন লায়লা আক্তার, এমন অভিযোগ প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক, শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও কর্মচারীদের।

 

অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামীলীগের পতনের পর গভর্নিং বডি ভেঙ্গে দেয়ায় এবং আনোয়ার-হাবিব গাঁ ঢাকা দেয়ায় নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তার স্বামী মোহাম্মদ শওকত উল্লাহ’র প্রভাব খাটিয়ে এবং দুষ্টচক্রের সহায়তায় পুনরায় স্কুলটিতে যোগদান করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন লায়লা আক্তার। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও সেই তদন্ত কমিটিকে তার স্বামী প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন বলেও অভিযোগ শিক্ষকদের অনেকের।

 

এদিকে, মর্গ্যান গার্লস স্কুলে দুর্নীতি ও বৈষম্যের অভিযোগে পদত্যাগকারী, সহকারী প্রধান শিক্ষক লায়লা আক্তারের পুনর্বহালের চেষ্টার অভিযোগ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী। ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন, ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি, বৈষম্য ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগের দায়ে এবং শিক্ষার্থীদের প্রবল আন্দোলনের মুখে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে গত ২১ আগস্ট পদত্যাগ করেন লায়লা আক্তার। বর্তমানে নতুন করে আবার সে ঐ পদে ফিরে আসতে ব্যাপক অপতৎপরতা চালাচ্ছে। এতে আমরা বিস্মিত, এ ধরনের দুর্র্নীতিবাজ ব্যক্তিকে পুনরায় বহাল করে শিক্ষার মান আরও খারাপ হতে পারে বলে জানান তারা।

 

উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও মর্গ্যান গার্লস স্কুলের গভর্নিং বডির সাবেক সভাপতি আনোয়ার হোসেন, আহসান হাবিবের সাথে সখ্যতার কারণে কম যোগ্যতা সম্পন্ন হওয়ার পরও লায়লা আক্তার ২০১৬ সালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পান। তার নিয়োগের সময় সরকারী কোনো বিধি-বিধান ও নিয়ম-নীতি মানা হয়নি বলেও জানান শিক্ষকবৃন্দ। নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই নানাবিধ দুর্নীতি ও অপকর্মে লিপ্ত হয় লায়লা আক্তার। আনোয়ার ও হাবিবের সখ্যতার কারণে লায়লা আক্তার বিদ্যালয়টিকে নিজের বাসভবনের মতো ব্যবহার করতে থাকে। স্কুলের কর্মচারীদের দিয়ে বাজার সদাই করাসহ তার সকল কাজ করাতেন বলে জানায় কর্মচারীরা। এখানেই শেষ নয়, প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত শিক্ষকদের প্রতিনিয়তই অপমান-অপদস্ত করতেন লায়লা আক্তার। কোনো শিক্ষককে ছুটি নিতে হলে তাকে উপহার দিতে হতো বলেও জানায় শিক্ষকরা। এমনকি তার অপমান-অপদস্তের কারণে বেশ কয়েকজন শিক্ষক মান সম্মানের ভয়ে পদত্যাগও করেছেন। তার সীমাহীন অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট, শোষণ, নিপীড়ন ও এহেন আচরণের কারণে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকসহ বিদ্যালয় শাখার ৯৬ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং কলেজ শাখার ১৫ জন শিক্ষক লায়লা আক্তারের বিরুদ্ধে অনাস্থাও জ্ঞাপন করেছেন। গত ২২ আগস্ট বিদ্যালয়ের সভাপতি তথা জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত আকারে এই অনাস্থা জ্ঞাপন করেন।

 

এবিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে লায়লা আক্তার সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে, তিনি বলেন, অশোক তরু স্যারের এবং আমার চাকরী একইসময়ে হয়েছিলো। তার সাথে আমার মনমালিন্য হয়েছিলো, যা ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে সমাধান হয়েছিলো।

সম্পর্কিত বিষয়: